ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি করেন তারা, পরে ভুক্তভোগীর হাতে পিস্তল দিয়ে ছবি তুলে রাখেন
রাজধানীর ডেমরা থানার সুফিয়া কামাল ব্রিজের ওপর ডিবি পরিচয়ে সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনায় ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই দুর্বৃত্তরা ভুক্তভোগীর হাতে পিস্তল দিয়ে ছবি তুলে অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে ডাকাতির ঘটনা ঘটায়।
মঙ্গলবার রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে ‘চাঞ্চল্যকর মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও মূল রহস্য উদঘাটন এবং ডিবি ওয়ারি কর্তৃক দুর্ধর্ষ ডাকাত দল গ্রেপ্তার বিষয়ে’ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তাররা হলেন, আবুল কাশেম জাহিদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান। এদের মধ্যে আবুল কাশেম জাহিদের নামে দুটি এবং মোস্তাফিজুর রহমানের নামে পাঁচটি মামলা রয়েছে বলেও জানায় ডিবি।
এ সময় ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, ডাকাতির টাকায় কেনা তিনটি গাড়ি এবং একটি মোটরসাইকেল ও ডাকাতির নগদ ২০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা প্রায় শুনি বিদেশ থেকে কেউ এলে বা জমি বিক্রি করলে তাদের গাড়ি আটকে ডিবি পরিচয়ে টাকা পয়সা স্বর্ণ ডাকাতি করা হয়। এমন একটা অভিযোগে ডেমরা থানায় মামলা হয়। মামলাটি করেন জাকির হোসাইন। ডেমরা থানা এই অভিযোগের সূত্র ধরে কাজ শুরু করে। বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে আমরা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করি। এদের মধ্যে আবুল কাশেম জাহিদ এবং মোস্তাফিজুর রহমান অন্যতম ডাকাত। বাদীর গাড়িটা যখন ডেমরা ব্রিজের ওপর যায় তখন এদের নেতৃত্বে ৫ থেকে ৭ জনের একটি টিম গাড়িটা আটকে বলে, আমরা ডিবি থেকে এসেছি আপনার গাড়িটা খোলেন। এই বলে তার কাছে যে ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিল এই টাকাটা নিয়ে ভিক্টিমের হাতে তাদের একটা অস্ত্র দিয়ে ছবি তুলে রাখে। তাকে বলে তুমি যদি এই ঘটনা কাউকে বলো তাহলে তুমি অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি করো এটা আমরা সব জায়গা বলে দেব। তারপর ভিক্টিমের কাছ থেকে সব কিছু নিয়ে তাদের হাত পা বেঁধে পূর্বাচল ফেলে চলে যায়। পরে ভিকটিম ডেমরা থানায় মামলা করলে আমরা মামলার সূত্র ধরে তাদের গ্রেপ্তার করি।
আসামিরা আদলতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এসময় বাদীর মামলার এজাহারের তথ্য তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, মো. জাকির হোসাইন গত বছরের অক্টোবরের ৯ তারিখে ডেমরা থানায় উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করেন ৮ অক্টোবর বিকালে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর ডেমরা থানা এলাকায় পৌঁছালে পেছন দিক থেকে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস এসে বাদীর প্রাইভেটকারের গতি রোধ করে। পরে মাইক্রোবাস থেকে ৫ থেকে ৬ জন অজ্ঞাতনামা লোক নেমে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে প্রাইভেটকারের গতিরোধ করে। বাদীসহ তার সঙ্গীয় সজিবকে ডাকাতদের ব্যবহৃত মাইক্রোবাসে উঠিয়ে তাদের চোখ মুখ বেঁধে ফেলে এবং হাতে হ্যান্ডক্যাফ পড়ায়।
এসময় বাদীর নিকট থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ যমুনা ব্যাংক থেকে উত্তোলনকৃত টাকাসহ তাদের নিকটে থাকা জমি রেজিস্ট্রি বাবদ নগদ সর্বমোট ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ডাকাতরা ছিনিয়ে নেয়। একইসঙ্গে ডাকাতরা বাদীর প্রাইভেট কারটি নিয়ন্ত্রণ নেয়। তাদেরকে মারধর করে, পিস্তল দিয়ে হত্যার হুমকি দেয়, পিস্তল হাতে ধরিয়ে ছবি তুলে এবং বলে যে, পরবর্তীতে বাড়াবাড়ি করলে তোদেরকে অস্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেব। গাড়িটি এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করার পর ডিবি পরিচয় দেয়া ডাকাতরা বাদী ও সজীবকে চোখ মুখ বাঁধা অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার পূর্বাচল প্রজেক্টের ২১নং সেক্টরে সামনে নামিয়ে দেয়।
পরে মামলাটি রুজু হলে ডিবি ওয়ারী বিভাগের ডেমরা জোনাল টিম, ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তকালে তথ্য প্রযুক্তিসহ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/এসএস/ইএস)