ইসরায়েলি আগ্রাসন জোরদার, রাফাহ ছেড়েছে ৬ লাখ ফিলিস্তিনি: জাতিসংঘ

গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযান শুরুর পর থেকে প্রায় ৬ লাখ ফিলিস্তিনি শহরটি ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ)।
বৃহস্পতিবার পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
বৃহস্পতিবার ইউএনআরডব্লিউএ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘পূর্ব রাফাহ থেকে ফিলিস্তিনিদের জন্য সরে যাওয়ার আদেশ জারি করার একদিন পর গত ৬ মে থেকে প্রায় ৬ লাখ ফিলিস্তিনি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যার মধ্যে গত ৪৮ ঘণ্টাই রাফাহ ছেড়েছে প্রায় দেড় লাখ ফিলিস্তিনি।’
জাতিসংঘের মতে, গাজায় ইসরায়েলি আক্রমণ শুরুর পর সীমান্ত শহরটির (রাফাহ) জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার থেকে বেড়ে ১৫ লাখে পৌঁছেছিল। কারণ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল হিসেবে এই বিশাল সংখ্যক ফিলিস্তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন, যা গাজার মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।
ইউএনআরডব্লিউএ আরও বলছে,‘ বাস্তুচ্যুত এই পরিবারগুলো ক্রমাগত ক্লান্তি, ক্ষুধা এবং ভয়ের সম্মুখীন। তাদের যাওয়ার মতো নিরাপদ জায়গা নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবিলম্বে একটি যুদ্ধবিরতিই আমাদের একমাত্র আশা।’
আলজাজিরা বলছে, অভিযানকে সীমিত বলে বর্ণনা করা সত্ত্বেও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী রাফায় আরও সৈন্য মোতায়েন করেছে। রাফাহ শহরের পূর্ব অংশে প্রচুর ধ্বংসযজ্ঞ চলছে যেখানে হামাসের সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আল-মাওয়াসির নিকটবর্তী রাফাহ-এর পশ্চিমাঞ্চলে লিফলেটও ফেলেছে, যাতে ইসরায়েলি বন্দিদের খুঁজে পেতে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের যেকোনো ধরনের সাহায্যের আহ্বান জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মে রাতে হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর সেটাকে উপযুক্ত নয় বলে প্রত্যাখ্যান করে নেতানিয়াহু সরকার। একই সঙ্গে ইসরায়েল রাফায় বড় ধরনের স্থল অভিযান চালানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মিশরের সঙ্গে রাফাহ ক্রসিং- গাজায় প্রবেশের একমাত্র দখল করে নেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
এর আগে একই দিন এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা পোস্টার, ক্ষুদে বার্তা, ফোনকলের মাধ্যমে রাফায় অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের নির্দিষ্ট এলাকায় চলাচল না করতে উৎসাহিত করছে। একই সঙ্গে রাফাহর পূর্ব অংশে থাকা ফিলিস্তিনিদের অতি শিগগিরই একটি মানবিক এলাকায় চলে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী, যা একটি স্থল হামলার আগে বেসামরিক নাগরিকদের স্থানান্তরের সূচনা বলে মনে করা হচ্ছে।
মূলত ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ‘হামাসের বাকি ব্যাটালিয়নগুলোকে’ পরাজিত করতে রাফাহ আক্রমণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েল রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর পরিকল্পনার ফলে বৈশ্বিক সমালোচনার মুখে পড়েছে। এমনকি রাফাহতে হামলা করলে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তবে ইসরায়েলের দাবি, রাফাহতে লুকিয়ে থাকা হাজার হাজার হামাস যোদ্ধাকে পরাস্ত করতে তাদের অবশ্যই সেখানে হামলা করতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৬মে/এমআর)

মন্তব্য করুন