মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি

‘মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না’ বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিকালে প্রয়াত অ্যাডভোকেট এজে মোহাম্মদ আলীর স্মরণ সভায় করিডরের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব এমন হুঁশিয়ারি দেন।
তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত যিনি আছেন (নিরাপত্তা উপদেষ্টা) তিনি অনেক কথা বলছেন। তার মধ্যে গতকাল একটা কথা বলেছেন, যে যেই থাক মিয়ানমারের পাশে তার সঙ্গে আমাদের আলোচনা করতে হবে। তো তার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন, দেশের মানুষ-জনগনের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন না। আলোচনাটা করেন। আমরা তো দেশের স্বার্থে, স্বাধীনতার স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে আমরা কখনই তো বাধা নই বরঞ্চ আমরা সামনে এসে দাঁড়াব বরঞ্চ লড়াইটা আমরাই করি। সেই জায়গায় দয়া করে অনুরোধ করব, বাংলাদেশে মানুষকে আন্ডারস্টিমেট করবেন না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমি অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য চাই বার বার বলছি। আমরাই তাদেরকে বসিয়েছি। কিন্তু এমন কোনো কাজ করবেন না যা জাতির বিরুদ্ধে যাবে, বাংলাদেশের মানুষের বিরুদ্ধে যাবে। এমন কোনো কাজ করবেন না যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যে উপযোগী হবে না। আজকে এমন এমন কাজ করছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ ক্লিয়ার না। প্যাসেজ দেবেন, করিডোর দেবেন সেই করিডোর দেবেন তা নিয়ে মানুষের সাথে আলাপই করছেন না, কথা বলছেন না। আপনি করিডোর দিয়ে দিচ্ছেন আরাকানে যে আরাকান আর্মি গভর্নমেন্টই নেই। করিডোর কি দেবেন? যদি প্রয়োজন হয় একশ বার দেবেন, মানবতাকে যদি সাহায্য করতে হয়, সাহায্য করব। কিন্তু আপনি তো দেশের জনগণকে নিয়েই সেটা করবেন। আপনি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে করবেন, কিন্তু কোনো আলোচনা নাই।
‘খালেদা জিয়ার ফেরা: নতুন আলো সম্ভাবনা’
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি গত পরশু যখন লন্ডন থেকে ফিরে এসেছেন এবং তার স্বাস্থ্যে মধ্যে তার চেহারার মধ্যে নতুন করে আমরা আলো দেখতে পেয়েছি… গোটা জাতি আজকে নতুন করে আলো পেয়েছে। এই সময়টাকে কাঁদে নিয়ে আমাদেরকে সামনের দিকে এগোতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কথাকে ভুল ব্যাখ্যা করে বিচার করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা এটা জানি কেনো করা হচ্ছে? গত পরশু সেটা প্রমাণিত হয়েছে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এদেশের সবচাইতে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা, প্রমাণিত হয়েছে যে, বিএনপি হচ্ছে সবচাইতে বড় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। প্রমাণিত হয়েছে বিএনপির হাতেই তারেক রহমানের নেতৃত্বে এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র একমাত্র নিরাপদ।
‘অনির্দিষ্টকালের জন্য অন্তবর্তীকালীন সরকার থাকবে?’
মির্জা ফখরুল বলেন, এখন আপনার সংস্কার করতে হবে আমরা তো সংস্কার চেয়েছি সবসময়। এখন অনেকে বলছে যে, আগে সংস্কার হবে তারপরে নির্বাচন। তো সংস্কার যে একটা চলমান প্রক্রিয়া। সংস্কার হতে হতে আপনার যদি ৫ বছর ১০ বছর লাগে লাগতে পারে এটা চলমান। তাহলে নির্বাচন ১০ বছরেও হবে না। আর ১০ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী আমলাদের হাতেই দেশ চলবে। এখন তো আমরা ফ্যাসিবাদী আমলাদের দ্বারাই পরিচালিত হচ্ছি। সেক্রেটারিয়েটের আমলারা ৯০ শতাংশ ফ্যাসিবাদের দোসর। আপনারা (আইনজীবীরা) এখানে আলোচনা করলেন যে আপনাদের বারে অনেকে আছেন যারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন তাই না। তা হলে এই অনির্দিষ্টকালের জন্য একটা অনির্দিষ্ট অনিশ্চিত একটা অন্তর্বর্তী সরকার এটা কি দেশের মানুষের জন্য খুব উপকারে আসবে আসতে পারে না।
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রশ্ন’
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আপনাদের মাধ্যমে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই আপনারা অনেক পরিবর্তন আনছেন। বলছেন যে, ফুট স্টেপ রেখে যাবেন। আপনার কি কি পরিবর্তন হয়েছে? আমি আজকে পত্রিকায় দেখলাম, আমাদের পোষাক শিল্পগুলো অনেকগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার যে, ট্যারিফ পলিসি দিয়েছে তাতে করে নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না, বিনিয়োগকারীরা বলছেন, একটা গণতান্ত্রিক সরকার ছাড়া আমরা কোনো নতুন বিনিয়োগ করবেন পরিষ্কার করে বলছেন দেশের বাইরের এবং দেশের সকলের। ইনফ্লেুয়েশন তো কমেনি। ব্যাংকের অবস্থা তো ভালো হয়নি।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর যারা ব্যবসা করতে পারেনি, ফ্যাসিস্ট সরকার তাদের ব্যবসা করতে দেয়নি, ব্যাংকের ঋণ বন্ধ করে দিয়েছে, বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করেছে এই সরকার এখন পর্যন্ত তাদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেনি। উপরন্ত সব ব্যাংকগুলোকে একইভাবে দেখা হচ্ছে।
শিক্ষাব্যবস্থাটা কি?সবচেয়ে করুণ অঙ্গন হচ্ছে শিক্ষাঙ্গন। ইউনির্ভাসিটিগুলোতে ‘আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে।আজকে সেখানে ডিসিপ্লিন বলে কোনো কিছু নাই। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আপনারা কোনো পাবলিক হাসপাতালে গেছেন কিনা জানি না যদি যান দেখবেন কি ভয়াবহ পরিস্থিতি না গেলে কিছু বলা যাবে না।
দেশের এই বর্তমান তুলে ধরে আইনজীবীদের ‘কথা বলার’ জন্য অনুরোধ জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদেরকে কথা বলতে হবে। আমাদের বিজ্ঞ আইনজীবীরা ইদানীং কথা কমিয়ে দিয়েছেন।তাদের শুধুমাত্র নিজেদের বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলছেন না। কথা বলা দরকার। কথা বলতে হবে। কারণ আপনার এখন নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে। আপনাদের সত্যিকার অর্থে পরের প্রজন্মের জন্য একটা উপযোগী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে । সেজন্য কোথাও যেন ভুল না হয়, ইচ্ছাকৃতভাবে যাতে ভুল তৈরি করা না হয়, গণতন্ত্রকে যাতে ব্যাহত না হয় সে বিষয়গুলোতেই আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।
সংগঠনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, প্রয়াত এজে মোহাম্মদ আলীর সহধর্মিনী ফারজানা আলী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
(ঢাকাটাইমস/০৮মে/জেবি/এমআর)

মন্তব্য করুন