দ্বাদশ শতকের বিস্ময় অ্যাংকর ওয়াট

রেজাউল মাসুদ
  প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২৫, ২৩:০৭
অ- অ+

অ্যাংকর ওয়াট। এটি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মন্দির। প্রাচীন এই মন্দিরটির স্থাপত্যশৈলী আর বিশালতা আমাদেরকে হতবাক করে দিল রীতিমতো। প্রায় ৯শ বছর আগে এটি হিন্দু মন্দির হিসেবে নির্মিত হলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বৌদ্ধ মন্দিরে রূপান্তরিত হয়ে যায়। কারণে এটি 'হিন্দু-বৌদ্ধ' মন্দির হিসেবেও পরিচিত। কম্বোডিয়ার সিয়াম রিপ প্রদেশে অবস্থিত মধ্যযুগের এই স্থাপত্য বিস্ময় দেখতে প্রতিদিনই এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তাবত দুনিয়ার পর্যটক। কম্বোডিয়ার পথে পথে ঘুরতে ঘুরতে আমরা তিন বন্ধু চলে এসেছি অ্যাংকর ওয়াটে। ঘুরে ঘুরে এর স্থাপত্যসৌন্দর্য আর ইতিহাস তুলে ধরবো আপনাদের সামনে।।

এত শান্ত নিরিবিলি শহর আমরা চলতে চলতে বুঝতে ছিলাম যেন আমরা ইউরোপের কোন একটা শহরে এসেছি। কম্বোডিয়ার সবচেয়ে সুন্দর শহর সিয়াম রিপ। ভোর সাতটায় নমপ্যান থেকে রওনা দিয়ে আমরা সিয়ামরীপে পৌঁছি সাড়ে এগারোটায়। আমরা দেরি না করে শহর থেকে 15 কিলোমিটার দূরে আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মন্দির দেখতে বেরিয়ে পড়লাম। টুকটুক নিয়ে শহরের ভেতর দিয়েই এগিয়ে যেতে থাকলাম আমরা

এই মন্দির কে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছিল মানব সভ্যতা। যে পথে প্রায় ১০০০ বছর আগে রাজাধিরাজ এবং পুণ্যার্থীরা হেঁটে গিয়েছিল আমরা সেই একই পথে হেটে যাচ্ছিলাম। এক অন্যরকম অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা মত নয়।

বিশাল জলাশয় পেরিয়ে মূল মন্দিরে যেতে হয়। মূল মন্দিরের যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে ফ্লোটিং ব্রিজ। ১১১৬ সালে রাজা সূর্য বর্মন এমন দুটি মন্দির নির্মাণ কাজ শুরু করে। ১১৫০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয় মন্দিরটির চারপাশে জলাশয় দিয়ে পরীখা নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা অনেককেই দেখলাম ট্রেডিশনাল পোশাক পড়ে মন্দিরে প্রবেশ করছে। যে কেউ ভাড়া নিয়ে পোশাক পড়তে পারে।

মন্দিরটির প্রাচীরের দৈর্ঘ্য . কিলোমিটার। এর ভিতরে তিনটি আয়তাকার গ্যালারি রয়েছে। এই মন্দিরের অনেকগুলো গেট রয়েছে। আমরা মূল গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। কি দারুণ দেখতে প্রাচীর আর প্রবেশদ্বারটি।

প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের তিনটি বিষ্ণু মূর্তি দেখতে পেলাম। গাইড থেকে জানতে ছিলাম এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার পর নানাভাবে আক্রমণের শিকার হয় এবং আমরা ভিতরে প্রবেশ করে সেই ভাঙ্গা মূর্তিগুলো দেখতে ছিলাম আর আমরা জানতে পারতেছিলাম যে বিভিন্ন সময় আক্রমণের মাধ্যমে এই মূর্তিগুলো ভাঙ্গা হয়েছিল। অক্ষত একটি বিষ্ণু মূর্তি দেখে আমাদের মন কাড়লো রাজা সূর্য বর্মন বিষ্ণুর একনিষ্ঠ ভক্ত ছিল। এরপর আমরা এই মন্দির অতিক্রম করে মূল মন্দিরে প্রবেশ করলাম দারুন দৃষ্টিনন্দন তিনটি আইকনিক মন্দির চোখে পড়ল।

কেন্দ্রীয় মন্দিরে যেতে হলে প্রথম স্তর পেরিয়ে আরো উপরে অনেকগুলো সিঁড়ি বাইতে হয়। আমরা এগিয়ে যেতে থাকলাম কেন্দ্রীয় মন্দিরের দিকে বারান্দার অংশ পেতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল কেন্দ্রীয় মন্দিরের সেই কাঙ্ক্ষিত অংশটুকু। মন্দিরের এমন বিশালতা দেখে থমকে যেতে হয় আমাদের। কেন এঙ্কর ওয়াট দেখতে তাবত দুনিয়ার মানুষ পাগল হয়ে ছুটে আসেন। মানুষের তৈরি পৃথিবীতে যত স্থাপনা রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম এই স্থাপনাটি তার কারোকাজ, ডিজাইন, স্থাপত্য শৈলী নকশা পুরো অন্যরকম। ভাবনায় আসতেছিল না কিভাবে এত বিশাল এত কারুকার্যময় এরকম একটি স্থাপনা তৈরি হলো আজ থেকে এক হাজার বছর আগে।

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানবিক করিডরের নামে কোনো কিছু জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না, মির্জা ফখরুলের হুঁশিয়ারি 
জম্মু-কাশ্মীরে হামলার ভারতীয় প্রতিবেদন ‘ভুয়া এবং মিথ্যা’: পাকিস্তান
নিষিদ্ধ হচ্ছে যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ: আসিফ মাহমুদ
হোটেল আমারিতে পুলিশ-ডিএনসির যৌথ অভিযান চলছে 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা