কেমন আছে ১০ টাকার নোটের সেই আতিয়া জামে মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ মার্চ ২০২৪, ০৯:৪১| আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২৪, ১২:১৪
অ- অ+

১৯৭৮ সালে গভর্নর খোরশেদ আহম্মেদের সময়ে ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদে প্রথম আতিয়া মসজিদটি স্থান পায়। এরপর ১৯৮২ সালে পরিবর্তিত ১০ টাকার নোটের প্রচ্ছদেও স্থান পায় আতিয়া মসজিদ। এতে দেশবাসীর কাছে সহজেই মসজিদটি পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৮ সালে মসজিদটির দেখভালের দায়িত্ব নেয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। মসজিদটি শুধু ঐতিহ্যের নিদর্শনই নয় বরং এরপর থেকে এটি একটি দর্শনীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই মুসলিম স্থাপত্য প্রায় ৪১৫ বছর আগে নির্মিত হলেও এর কারুকাজ এখনো সবার নজর কাড়ে। যেসব ঐতিহ্যের কারণে টাঙ্গাইলকে সহজেই পরিচয় করিয়ে দেওয়া যায় তার মধ্যে আতিয়া জামে মসজিদ অন্যতম। টাঙ্গাইল শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে আট কিলোমিটার দূরে দেলদুয়ার উপজেলায় আতিয়া মসজিদের অবস্থান।

পঞ্চদশ শতকে এই অঞ্চলে আদম শাহ বাবা কাশ্মীরি নামের এক সুফি ধর্মপ্রচারক আসেন। ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করতে থাকেন। এই পুণ্যবান ব্যক্তি এখানেই সমাহিত হন। শাহ কাশ্মিরীর অনুরোধে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর আতিয়া পরগণার শাসক নিয়োগ করেন সাঈদ খান পন্নীকে। সাঈদ খান পন্নীই করটিয়ার বিখ্যাত জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। মসজিদের প্রবেশ পথের মূল ফটকে টাঙানো রয়েছে একটি শিলালিপি। এই শিলালিপিটি ফার্সিতে লেখা। কোনো কারণে আদি শিলালিপিটি বিনষ্ট হলে পরবর্তীকালে মসজিদ মেরামতের সময় বর্তমান শিলালিপিটি লাগানো হয়। বর্তমানে এ শিলালিপিতে উল্লেখ রয়েছে, আতিয়া মসজিদ নির্মাণ হয় ১০১৮ হিজরি বা ১৬০৯ সালে । বায়েজি দখান পন্নীর পুত্র সাঈদ খান পন্নী মসজিদটি নির্মাণ করেন। এরপর দিল্লীর একজন নারী বণিক রওশন খাতুন চৌধুরানী ১৮৩৭ সালে এবং দেলদুয়ারের জমিদার আবু আহমেদ গজনবী খান ১৯০৯ সালে মসজিদটির পূণঃ সংস্কার করেন ।

দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি লাল ইট দ্বারা নির্মিত । মসজিদের পূর্ব ও উত্তর পাশের দেয়ালে রয়েছে আকর্ষণীয় খোদাই করা নকশা। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুইটি করে দরজা রয়েছে এবং পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি দরজা। আকষর্ণীয় কারুকার্যে নির্মিত আতিয়া জামে মসজিদ সহজেই দর্শনার্থীদের নজর কারে । আকারে ছোট হলেও মসজিদটি দেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম । প্রাচীন এই মসজিদের দৈর্ঘ ১৮.২৯ মিটার ও প্রস্থ ১২.১৯ মিটার এবং দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার। এছাড়া বারান্দার দৈর্ঘ ৩.৮২ মিটার , প্রস্থ ৭.৫ মিটার এবং উচ্চতা ৪৪ ফুট। মসজিদের চার কোণায় রয়েছে ৪টি বিশাল আকারের অষ্টকোণাকৃতির মিনার। স্ফীত রেখার সাহায্যে অলঙ্কৃত মিনারগুলো ছাদের অনেক উপরে উঠে গেছে। চূড়ায় রয়েছে কারুকার্যময় সুন্দর ছোট ছোট গম্বুজ। গম্বুজগুলোর গায়ে বিভিন্ন রকমের কারুকার্য মসজিদের সৌন্দর্য অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। মসজিদের প্রধান কক্ষ ও বারান্দা দুই ভাগে বিভক্ত। ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে আছে ৩টি সুন্দর মেহরাব। মাঝখানের প্রবেশপথের উপরের অংশের একটি শিলালিপি রয়েছে। অথচ পরিচর্যার অভাবে দেয়ালের খোদাই করা নকশাতে শেওলা ধরে মসজিদটির প্রকৃত রঙ ও কারুকার্য মুছে যাচ্ছে। ফলে মসজিদটি প্রকৃত সৌন্দর্য হারাচ্ছে। জরুরি ভিত্তিত্বে সংস্কার করা না হলে মসজিদটি একসময়ে পুরোপুরি তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে। এমনটাই বলছেন দর্শনার্থীসহ স্থানীয়রা।

টাঙ্গাইলের আতিয়া জামিয়া মসজিদটি দেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন। তবে মসজিদের দেয়ালের উপর যে চিত্র ফলক ছিল তা বহুলাংশে নষ্ট হয়েছে। মসজিদটি কতটা কারুকার্যময় ছিল তা বোঝা যায় এর নির্মাণশৈলী ও চিত্রফলক দেখে। এটি বাংলাদেশের অন্যান্য মসজিদ থেকে একটু ভিন্ন। মসজিদের প্রায় লাগোয়া পশ্চিম দিকেই রয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ যুগের অতি প্রাচীন একটি পুকুর। এর উত্তর-দক্ষিণে মাঝারি আকারের মসজিদের পূর্বদিকে রয়েছে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ। আতিয়া জামে মসজিদকে কেন্দ্র করে প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার স্থানজুড়ে বহু প্রাচীন কীর্তি ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন রয়েছে। মোঘল আমলে এটি ছিল প্রশাসনিক কেন্দ্র। প্রাচীন হিন্দু-বৌদ্ধ-সুলতানী আমল ও ইংরেজ আমলের প্রথম দিকেও এ স্থানের প্রাধান্য ছিল।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রত্নতাত্মিক বিভাগ দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে স্থানীয়রা মসজিদটির কোনো সংস্কার করতে পারছে না। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও জোড়ালো কোনো সংস্কার পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে মসজিদটির কারুকাজ।

আটিয়া গ্রামের ডা. লুৎফর রহমান জানান, রমজান মাস উপলক্ষে মসজিদে মুসল্লিদের উপস্থিতি বেড়েছে। জায়গা সংকুলন হয় না। জায়গা বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া সঠিক পরিচর্যার অভাবে দিন দিন মসজিদটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে প্রাচীন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।

আতিয়া জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন রফিকুল ইসলাম জানান, তিনি প্রায় ৩০ বছর ধরে ওই মসজিদে চাকরি করছেন। প্রাচীনতম স্থাপত্যশৈলীর এক অন্যতম নিদর্শন উল্লেখ করে তিনি বলেন, দ্রুত সঠিকভাবে সংস্কার কাজ না হলে একসময় মসজিদের অস্তিত্ব পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান ইমরান বলেন, ভেতরে শতাধিক মুসুল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে জুমার দিন বেশি সমস্যা হয়। মসজিদ কমিটিসহ এলাকার সকলে মিলে জায়গা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদের নকশা নষ্ট হবে মর্মে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে দেয়নি। সম্প্রতি মসজিদটিতে রঙ করা হয়েছে।

আতিয়া জামে মসজিদ কমিটির সহসভাপতি আশরাফ হোসেন মানিক জানান, প্রায় ৭ মাস আগে মসজিদটির চুনকাম ও রঙের কাজ করা হয়েছে। অল্প দিনেই তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মসজিদটির কারুকার্যও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সঠিক সংস্কার না হলে একসময় মসজিদটি ঐতিহ্য পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি মসজিদটির দ্রুত পুরোপুরি সংস্কাররের মাধ্যমে ঐতিহ্য সংরক্ষণের দাবি জানান।

(ঢাকাটাইমস/৩০মার্চ/প্রতিনিধি/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আবু সাঈদ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে জমা, আসামি ৩০
হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ অতঃপর মন্ত্রী ফরিদুল হক খান দুলাল…
ব্যর্থতা ঢাকতে ট্রাম্প অস্বাভাবিক বাড়িয়ে বলছেন: খামেনি
এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার ৫১৩ হাজি দেশে ফিরেছেন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা