ডিজিটাল যুগে হারিয়ে গেছে ঐতিহ্যের হালখাতা

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৩ এপ্রিল ২০২৪, ১২:৫৩
অ- অ+

হালখাতা আবহমান বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি। বাঙালির সঙ্গে বাংলা ভাষার যেমন সম্পর্ক, পয়লা বৈশাখের সঙ্গেও হালখাতার তেমনই নাড়ির টান। বৈশাখের প্রথম দিনে বাঙালি বাড়িতে হালখাতার প্যাকেট আসবে না, একটা সময় সেটা ভাবাই যেত না। পয়লা বৈশাখের কয়েক দিন আগে থেকেই হালখাতার প্যাকেটে সম্ভাব্য কোন খাবারগুলি থাকতে পারে, সেটা নিয়ে কল্পনার জাল বোনা চলত মনে মনে। নববর্ষ যত এগিয়ে আসত, মনে মনে উত্তেজনার পারদ তত চড়ত। যত ক্ষণ না নিজের হাতে হালখাতার বাক্স খোলার সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসছে, তত ক্ষণ উত্তেজনা জারি থাকত।

আকবরের আমলের কর আদায়ের একটি ক্যালেন্ডারেই পয়লা বৈশাখ নিয়ে জাঁকজমক শুরু। বাঙালির নতুন বছর সেই তারিখপঞ্জিরই উদ্‌যাপন। হালখাতার সঙ্গেও তেমনই এক ইতিহাস জড়িয়ে আছে।

হালখাতা ফারসি শব্দ। ফারসিতে হাল মানে নতুন। পয়লা বৈশাখের দিন ধর্ম, ভাষা নির্বিশেষে নতুন খাতা খোলার সময়। সময়ের বিবর্তনে এই রীতির সঙ্গে জুড়েছে মিষ্টিমুখ। বাঙালির যে কোনও শুভ কাজ এমনিতেই মিষ্টিমুখ ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। তবে ইতিহাস যা-ই বলুক, হালখাতা মানেই রকমারি মিষ্টিভরা বাক্স আর সঙ্গে বিচিত্র সব ছবি দিয়ে সজ্জিত বাংলা ক্যালেন্ডার।

সময় বদলেছে। প্রজন্ম পাল্টেছে। ক্রমশ ডিজিটাল হচ্ছে সব কিছু। বাঙালি বাড়ির দেওয়ালে এখন আর বাংলা ক‍্যালেন্ডার ঝুলতে দেখা যায় না। পয়লা বৈশাখের উদ্‌যাপন রমরমিয়ে চললেও এই দিনটির সঙ্গে যে সংস্কৃতি আর ঐতিহ‍্য জড়িয়ে আছে, সেটাও অনেকটাই বিস্মৃত।

বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানের হিসাব আনুষ্ঠানিক হালনাগাদের এ প্রক্রিয়ায় ভাটা পড়েছে। এক সময়ে বছর শুরুর দিন ভোরে দোকানপাট ধুঁয়ে, সোনা-রূপার পানি ও গোলাপ জল ছিটানো হতো। চৈত্রের মাঝামাঝি থেকেই বকেয়া রয়েছে এমন ক্রেতাদের কাছে হালখাতার দাওয়াত কার্ড পাঠানো হতো। এছাড়া লাল কাপড়ে মোড়ানো বা বাঁধাই করা মোটা খাতাটিই একসময় ক্রেতার সঙ্গে বিক্রেতার ব্যবসায়িক সম্পর্কের যোগসূত্র স্থাপন করতো। তবে এ সময়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিপণ্য কম্পিউটার দখল করে নিয়েছে এ খাতার জায়গা।

আগে বছরের প্রথম দিন নতুন খাতা খোলার জন্য হালখাতার আয়োজন ছিলো উৎসব। উৎসবে মিষ্টিমুখ করানো হতো ক্রেতাদের। এখন ঐতিহ্য মেনে কোথাও কোথাও হালখাতা হয়। কিন্তু ক্রেতারা আগের মতো সাড়া দেন না। কেউ ব্যাংকে কিংবা বিকাশে টাকা পাঠিয়ে দেন। উৎসব হয় না আগের মতো।

বর্তমানে প্রায় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই কম্পিউটার রয়েছে। খাতার কাজ এখন কম্পিউটারই করছে। আগে বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য ক্রেতাদের হাতে লেখা টালি (স্লিপ) দেওয়া হতো। এখন কম্পিউটারাইজড স্লিপ দেওয়া হয়। ফলে খাতা রাখার খুব একটা প্রয়োজন হয় না। সময়ের পরিবর্তনে হালখাতা উৎসবটি হারিয়েছে এর গুরুত্ব।

আগে হালখাতা আনন্দ উৎসবে যার যার সাধ্য মতো কার্ড ছাপানো। ব্যাপক পরিসরে উৎসব আনন্দে হালখাতা পালন করা হতো। বর্তমানে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী প্রায় সবাই ইংরেজি মাসের ওপর ভিত্তি করে আয় ব্যয় করেন। নগদ বিক্রি অথবা বাকি লেনদেন সবই হয় ইংরেজি মাসের ওপর ভিত্তি করে। তাই ধীরে ধীরে পয়লা বৈশাখে হালখাতা প্রথা হারিয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে চিরচেনা হাতে লেখা খাতার ব্যবহার বেশি একটা দেখা যায় না। দোকানে কম্পিউটার বা মোবাইলের মাধ্যমে পণ্য বেচাকেনার হিসাব রাখা হচ্ছে। ফলে ক্যাশিয়ারের পাশে থাকা চিরচেনা লাল কাপড় কিংবা কাগজে মোড়ানো হিসাবের হালখাতার বইটিও চোখে পড়ে না তেমন।

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যর এই প্রাণের হালখাতা উৎসব যেন আজ আধুনিক যুগের অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তির পৃথিবীর কাছে ধোপে টিকতে পারছে না।

(ঢাকাটাইমস/১৩ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এবার বড় ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ, সিরিজ পাকিস্তানের
চাঁদপুরে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যুবদল নেতা নয়নের দুঃখ প্রকাশ
অসুস্থতার কারণে রাকিব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণবিশ্রামে আছেন: ছাত্রদল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা