শারীরিক শক্তি ও প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে লাল মাংস

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৫, ১০:৪৯| আপডেট : ২৯ মে ২০২৫, ১২:২৪
অ- অ+

লাল মাংস বা রেড মিট নামে পরিচিত গরু, ছাগল বা মহিষের মাংসে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, খনিজ পদার্থ ও কোলস্টেরল থাকে। বাড়ন্ত বয়সের কিশোর-তরুণ ও প্রসূতি মায়েদের শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি মেটাতে লাল মাংস খাওয়া উচিত। তবে প্রচুর কোলস্টেরল থাকায় লাল মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে বয়স্ক লোকজন এবং উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের।

গবেষকদের মতে, গরু, ভেড়া ও ছাগলের মাংসে পাওয়া যায় এমন কিছু পুষ্টি উপাদান নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতার জন্য উপকারী। তা ছাড়া সন্তান নেওয়ার চিন্তা করছেন, এমন দম্পতিদের সাধারণ স্বাস্থ্যের জন্যও তা ভালো বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়েই প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্তির স্বল্পতার কারণে নারী-পুরুষদের খাদ্যে ‘সেলেনিয়াম’ গ্রহণের হার কম। কিন্তু অনেক গবেষণাতেই দেখা গেছে, নারী ও পুরুষের প্রজনন সংক্রান্ত নানা জটিলতায় এবং আকস্মিক গর্ভপাত, ভ্রূণের বৃদ্ধি জটিলতা, নির্ধারিত সময়-পূর্ব প্রসবসহ অন্যান্য অনেক রোগের ক্ষেত্রেই সেলেনিয়াম ঘাটতির প্রভাব রয়েছে।

গরু, ভেড়া ও ছাগলের মাংসে যেহেতু প্রচুর সেলেনিয়াম পাওয়া যায়, তাই প্রাপ্তবয়স্কদের প্রজনন স্বাস্থ্যের উন্নতিতে এর ভূমিকা থাকতে পারে। এ ছাড়া গর্ভধারণ এবং প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য ‘ভিটামিন বি-৬’ খুবই উপকারী, কেননা তা হরমোনের স্বাভাবিক ক্রিয়ায় সহায়তা করে। আর এসব লাল মাংস ‘ভিটামিন বি-৬’-এরও একটি সহজলভ্য ভালো উত্স।

গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাজ্য সরকার জনসাধারণকে পরামর্শ দিয়ে থাকে যে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা যেন সপ্তাহে অন্তত ৫০০ গ্রাম রান্না করা লাল মাংস খান। অর্থাত্ তাঁরা সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ বেলার খাবারে রান্না করা গরু, ভেড়া, ছাগলের মাংস খেতে পারেন।’

লাল মাংস যা গরুর মাংসে পাওয়া যায় তাতে প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান থাকে। গরুর মাংসে আয়রন বা লোহা পাওয়া যায় যা অন্ত:সত্ত্বা নারী, বাড়ন্ত শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে, এ লোহা বা আয়রন অন্ত্রে সহজে শোষিত হয়।

এ মাংসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি১২ আছে যা রক্ত তৈরিতে ও স্নায়ু গঠনে ভূমিকা রাখে। গরুর মাংসে প্রচুর পরিমাণে জিঙ্ক নামক মিনারেল বা খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

তবে, অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, এ ধরনের মাংসে যাদের এলার্জি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়, তাদের এ অভ্যাস থেকে বিরত থাকতে হবে। আর গর্ভধারণ বা গর্ভকালীন কারও বিশেষ কোনো শারীরিক সমস্যা বা অন্য কোনো রোগ থাকলে সে সময়ে এমন মাংস খাওয়া যাবে কি না, তা অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে।

লাল মাংস খাওয়াটা যেন নিয়ম মেনে হয়। ঘরে মাংস থাকলে প্রতি বেলায় যে প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তা ছাড়া হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে মাংস পাকস্থলীর পরিপাক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাবে। যেকোনো বয়সের মানুষের হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির জটিলতা ও রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির জটিলতায় যাঁরা ভুগছেন, মাত্রা ছাড়া মাংস খাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সাবধান হতে হবে।

আমরা অনেকেই যে খাবার খাই তার পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে সচেতন নই। গরু, ছাগল বা মহিষের মাংসের গুণাগুণ জানেন না অনেকে। জানা থাকলে সচেতন হওয়া যায়। অতিভোজনও এড়ানো যায়।

প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ৭৪ দশমিক ৩ শতাংশ জলীয় অংশ, ১ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১১৪ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২২ দশমিক ৬ গ্রাম আমিষ, ২ দশমিক ৬ গ্রাম চর্বি, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, শূন্য দশমিক ৮ মিলিগ্রাম লোহা, শূন্য দশমিক ১৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১, শূন্য দশমিক শূন্য ৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি-২ এবং ২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আছে।

মহিষের মাংসে ৭৮ দশমিক ৭ শতাংশ জলীয় অংশ, ১ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ৮৬ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ১৯ দশমিক ৪ গ্রাম আমিষ, ১ দশমিক ৯ গ্রাম চর্বি এবং ৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম রয়েছে।

ছাগলের মাংসে আছে ৭৪ দশমিক ২ শতাংশ জলীয় অংশ, ১ দশমিক ১ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১১৮ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি, ২১ দশমিক ৪ গ্রাম আমিষ, ৩ দশমিক ৬ গ্রাম চর্বি এবং ১২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।

লক্ষ রাখতে হবে, মাংসে যেন কোনো সাদা চর্বি না থাকে। অর্থাৎ মাংসের গায়ে যে সাদা চর্বি লেগে থাকে তা সম্পূর্ণ কেটে ফেলে দিতে হবে। কারণ, ওই চর্বি আপনার রক্তের নালিতে গিয়ে জমে যাবে। রক্তের নালিতে চর্বি জমে গেলে রক্ত সঞ্চালনে বাধা পাবে। এতে হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হতে পারে এবং হার্টঅ্যাটাকও হতে পারে।

বেশি লাল মাংস খাওয়া হয় বলে অনেকেই মুটিয়ে যেতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে ব্যায়ামের অভ্যাস আজই শুরু করুন। নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটুন। রাস্তায় গিয়ে হাঁটলে খুব ভালো। মুক্ত হাওয়ায় মনটাই ভালো হয়ে যায়। রাস্তায় যেতে না পারলে বাড়ির উঠানে অথবা ছাদে অথবা বারান্দায় হাঁটুন। দেখবেন শরীর-মন দুটোই ঝরঝরে লাগছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯ মে/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চাঁদপুরে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য যুবদল নেতা নয়নের দুঃখ প্রকাশ
অসুস্থতার কারণে রাকিব চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পূর্ণবিশ্রামে আছেন: ছাত্রদল
জবিতে গবেষণা চুরিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে পদোন্নতির তোড়জোড়
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা