লিচু খেলে হতে পারে বিষক্রিয়া! ভালো লিচু চেনার উপায়

গ্রীষ্মকাল মানেই ফলের রাজত্ব। আম, কাঁঠাল, জামরুলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাজারে আসে রসালো ও সুস্বাদু লিচু। গ্রীষ্মকালীন এই রসালো ফল খুব কম সময়ের জন্য আসে। আবার কয়দিন পরেই লিচুর মৌসুম শেষ হয়ে যাবে। গ্রীষ্মকালীন এই রসালো ফল শুধু স্বাদই ভরপুর নয়, পুষ্টিগুণও আছে যথেষ্ট পরিমাণ। এ রসাল ফলে রয়েছে প্রচুর মিনারেল। এর বাইরে এতে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকে খুব অল্প পরিমাণে। ফ্যাট না থাকয় সবার জন্য উপকারি একটি ফল। পাশপাশি এতে ক্যালরিও কম, তাই সবার জন্যে উপযুক্ত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমকালে শরীরকে চাঙ্গা ও সুস্থ রাখতে প্রতিদিন ডায়েটে রাখবেন এই ফল। অনেকে মনে করেন, লিচু বেশি খেলে পেটে ব্যথা শুরু হয়। কথাটি সত্য। তবে সঠিক নির্দেশিকা মেনে লিচু খেলে এই ফলের বিকল্প কিছু হয় না। তবে এই লিচু খেতে হবে বুঝেশুনে। নয়ত মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। লিচুতে আছে এমন সব বিষাক্ত পদার্থ যা শরীরে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে!
২০১১ সালে ভারতের বিহারে লিচু থেকে এনসেফেলাইটিসের সংক্রমণ হয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছিল। চিকিৎসকদের মতে, লিচুর টক্সিন মস্তিষ্কে চলে গেলে জ্বর, খিঁচুনি, পেটের সংক্রমণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিতে থাকেন শিশু ও বয়স্করা। তাই সাবধান হওয়া জরুরি।
সাধারণ উপকারী ফল। এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ, যা হাড়ের গঠন মজবুত করে। লিচুতে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, যা শরীরের জন্য ভালো।
এছাড়াও লিচুতে আছে অলিগোনল যা নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করতে সাহায্য করে। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ নাইট্রিক অক্সাইড থাকলে হার্টে রক্ত চলাচল ভালো হয়। ফলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে।
লিচুতে ক্যালোরি খুব কম থাকে আর ফাইবার থাকে বেশি। তাই পরিমিত পরিমাণে লিচু খেলে হঠাৎ শর্করা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। পুষ্টিবিদদের মতে, এক কাপ লিচুতে ক্যালোরির পরিমাণ ১২৫। তাই লিচু খেলে চট করে ওজন বাড়ারও আশঙ্কা থাকে না। লিচুতে থাকে ফ্ল্যাভেনল, যা শরীরের প্রদাহ কমায়।
ভালো দিক তো গেল। এবার আসা যাক খারাপ দিকে। লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন এ ও মিথিলিন সাইক্লোপ্রোপাইল-গ্লাইসিন (এমসিপিজি) নামের টক্সিন থাকে। এই দুই রাসায়নিক বেশি পরিমাণে শরীরে গেলে বিষক্রিয়া হতে পারে।
ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’ থেকে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, লিচু যদি অধিক পরিমাণে খাওয়া হয় এবং খালি পেটে খাওয়া হয়, তাহলে ওই দুই রাসায়নিকের প্রভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই কমে যাবে। দেখা দেবে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার লক্ষণ। যা থেকে জ্বর, ঘন ঘন বমি, খিঁচুনি, মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। মস্তিষ্কে প্রদাহ শুরু হতে পারে। খাদ্যনালিতে সংক্রমণও হতে পারে। এমনকি রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে রোগীর মৃত্যু অবধি হতে পারে।
লিচুর টক্সিন থেকে লিভারের রোগ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। যারা লিভারের কোনো জটিল অসুখে আগে থেকেই ভুগছেন, তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর লিচু খান।
লিচু কখন খাওয়া উচিত
লিচু কখনও খালি পেটে খাবেন না। এতে শরীরে বিষক্রিয়া হতে। সকালে কিছু খাবার খেয়ে তারপর লিচু খেতে পারেন। রাতের বেলায় লিচু খাওয়া একেবারেই ঠিক নয়। শিশুর যদি অ্যালার্জির ধাত থাকে, অপুষ্টিজনিত রোগ থাকে কিংবা কোনো ক্রনিক অসুখ থাকে, তাহলে লিচু না খাওয়ানোই ভালো।
দিনে ৭-৮টির বেশি লিচু খাওয়া উচিত নয়। ডায়াবেটিস থাকলে ভরা পেটে ৬টি লিচু খাওয়াই যথেষ্ট। এর বেশী খাবেন না। বিকেলের পর আর লিচু না খাওয়াই ভালো।
ভালো লিচু চেনার উপায়
এই মৌসুমে ভেজাল ও রাসায়নিক মেশানো ফলে সাধারণ ভোক্তাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। তাই ভালো ও নিরাপদ লিচু চেনার কৌশল জানা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। লিচু চাষি ও কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, ভালো লিচু চেনার কিছু সাধারণ কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে। নিচে তুলে ধরা হলো ভোক্তাদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:
রঙ ও খোসার দ্যুতি দেখে বুঝুন টাটকা লিচু
ভালো মানের লিচু সাধারণত উজ্জ্বল লালচে বা হালকা গোলাপি রঙের হয়। খোসার গায়ে হালকা দাগ থাকলেও সেটি সমস্যা নয়, তবে যদি বেশি দাগযুক্ত, কালচে বা বিবর্ণ হয়, তবে তা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
হাত দিয়ে চেপে দেখুন
টাটকা লিচু চেপে ধরলে একটু শক্ত ও পূর্ণ হবে। খুব নরম বা চ্যাপ্টা হলে বুঝতে হবে তা বেশ পুরনো বা সংরক্ষণে সমস্যা হয়েছে।
ঘ্রাণে থাকুক সতর্ক দৃষ্টি
টাটকা লিচু থেকে প্রাকৃতিক মিষ্টি ঘ্রাণ বের হয়। যদি রাসায়নিক বা কৃত্রিম ঘ্রাণ পান, বুঝবেন তা ফরমালিন বা অন্য সংরক্ষণ পদার্থ মেশানো হয়েছে।
ডাঁটার দিকে নজর দিন
লিচুর ডাঁটা যদি সবুজ ও সতেজ থাকে, তবে সেটি সদ্য গাছ থেকে তোলা হয়েছে। শুকনো, বাদামি বা মচমচে ডাঁটা মানে এটি অনেকদিন আগের তোলা।
স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি কিনুন
অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে বাজারে আসা ফলে ফরমালিন ব্যবহারের আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় কৃষক বা কৃষিপণ্য বাজার থেকে লিচু কিনলে তা নিরাপদ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
পানিতে ভিজিয়ে নিন লিচু
বাজার থেকে লিচু কিনে বাসায় এনে ৩০ মিনিটের মতো পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এতে যদি কোনো রাসায়নিক থাকে, কিছুটা হলেও তা ধুয়ে যাবে।
লিচু কেনার সময়ে কী দেখে কিনবেন
কাঁচা বা আধপাকা, পচন ধরে যাওয়া লিচু কিনলে বিপদ হতে পারে। ঠিকমতো না-পাকা লিচুতে হাইপোগ্লাইসিনের মাত্রা থাকে বেশি। যার প্রভাবে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। এছাড়া লিচুর বীজ ও শাঁসে এমসিপিজি রাসায়নিক থাকে, যা থেকে এনসেফেলাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
(ঢাকাটাইমস/২৭ মে/আরজেড)

মন্তব্য করুন