সেনা অভিযানে
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় তিন ঘণ্টার এক শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে সহযোগীসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। এসময় মোল্লা মাসুদ নামে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসীকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
মঙ্গলবার ভোর ৫টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় সোনার বাংলা মসজিদের পাশে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিন দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শহরে যৌথ বাহিনীর অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে। তার সঙ্গে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছে, সুব্রত বাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঢাকায় আনা হবে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত গণমাধ্যমে জানানো হবে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, সম্প্রতি রাজধানীতে যেসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে তার পেছনে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হাত রয়েছে।
এদিকে সুব্রত বাইনের নামে ৩০টিরও অধিক খুনের মামলা রয়েছে। যার প্রায় সবগুলোতেই এই সন্ত্রাসী সাজাপ্রাপ্ত। তাছাড়া অবৈধ অস্ত্র এবং চাঁদাবাজিসহ প্রায় শতাধিক মামলার আসামি তিনি। ২০০১ সালে পুরস্কার ঘোষিত এই শীর্ষ সন্ত্রাসী আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকার রেড কর্ণার নোটিশ প্রাপ্ত। বছর তিনেক আগে বিশেষ ব্যবস্থায় ভারত থেকে সুব্রত বাইনকে দেশে ফেরত আনা হয়। সর্বশেষ তিনি ঢাকাতেই বসবাস করছিলেন।
সূত্র বলছে, ২০০১ সাল থেকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা আইবি'র (ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো) ছত্রছায়ায় ছিলেন সুব্রত। অভিযোগ রয়েছে— ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী তাকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে অবস্থান করা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদি সংগঠন উলফা, নাগাল্যান্ড লিবারেশন ফ্রন্টের নেতাসহ, মোহাম্মদপুরের মোস্তাকিম চাপ কাবাবের মালিক মোস্তাকিমকে হত্যা করিয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কাজ করছে তিমোথি সুব্রত বাইন হিসেবে পরিচিত এই সন্ত্রাসী।
প্রবাসী অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন খান সামি এক পোস্টে দাবি করেন, আগস্ট পরবর্তী সময়ে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মতিঝিলের ইখতিয়ারের (মালিবাগ সানরাইজ হোটেলে ডিবি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি) মাধ্যমে সুব্রত বাইন অস্ত্র কেনে। থানা থেকে লুট হওয়া প্রায় ১৭টি অস্ত্র বর্তমানে তার হেফাজতে রয়েছে। সুব্রত তার ডান হাত আরেক পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদের মাধ্যমে মতিঝিল গোপীবাগের একটি ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে নেয়।
সুব্রত বাইন সুইডেন আসলামের সঙ্গে দেখা করে কাওরান বাজার একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাপারেও সমঝোতা করেছিল। তাকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে শেখ হাসিনার অনুগত কিছু নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা পরোক্ষ মদদ দিচ্ছিল বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
সুব্রত বাইন কিছুদিন আগে নেপালে পলাতক বিডিআর ম্যাসাকারের সহযোগী হাজারীবাগের হারুন অর রশীদ লিটন ওরফে লেদার লিটন, যুবলীগের ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাট ও ফকিরাপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে ক্যাসিনো কারবারের অন্যতম হোতা খালেদ মাহমুদের মাধ্যমে কম মূল্যে অস্ত্র কেনার সমঝোতা করে।
বিডিআর হত্যাকাণ্ডের প্রথমদিন ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাবেক বিডিআর সদস্য তোরাব আলীর মোবাইল থেকে যে ১১টি কল ভারতে করা হয়েছিলো তার পাঁচটি কল সুব্রত বাইনের কলকাতার মোবাইল নম্বরে। লেদার লিটন আপডেট দিচ্ছিলো সুব্রত বাইনকে।
(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এসএস/এসএ)

মন্তব্য করুন