বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম মিয়াজাকি, কঠিন রোগের দাওয়াই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ মে ২০২৫, ০৮:৫৬
অ- অ+

গ্রীষ্মকালে আমের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক প্রায় সকলেরই। আমকে ফলের রাজা বলা হয় কারণ এতে রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বাজারে এখন নানা আমের সমাহার । হিমসাগর, আম্রপালি, ল্যাংড়া, ফজলি, খিরসাপাত, হাড়িভাঙা, যে ধরনের আমই হোক না কেন, সামনে থাকলে লোভ সামলানো বড়ই কঠিন।

আম শুধু মাত্র‌ একটি সুস্বাদু ফল নয়, এটির অনেক খাদ্য গুণ রয়েছে‌। ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি৬ রয়েছে আমে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে খনিজ লবণ, এমাইনো এসিড, পটাসিয়াম,কপার, বিটা ক্যারোটিন, লুশিয়েন জিলাইক এসিড, আলফা ক্যারোটিন, পলি পিথানল কিউরেচিন কাম্ফারল ও ক্যফিক এসিড পাওয়া যায় আমে। তবে পুষ্টিগুণ ও দামের বিচারে এগিয়ে গেছে এক ধরনের জাপানী আম, যার নাম মিয়াজাকি আম। জাপানের এই বিখ্যাত ফলটি সাধারণ আমের থেকে দেখতেও অনেকটা আলাদা। কারণ এই আমের রং হয় লাল ও বেগুনী। আকারেও সাধারণ আমের চেয়ে অনেকটা বড়, ঠিক যেন ডাইনোসরের ডিমের মতো দেখতে। জাপানের কিউশু প্রদেশের মিয়াজাকি শহর থেকে উদ্ভূত একটি বিরল এবং মূল্যবান ফল। ১৯৮০-এর দশকে গবেষক এবং স্থানীয় কৃষকদের সহযোগিতায় বিকশিত, এই আমটি একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং অতুলনীয় মানের জন্য খ্যাতি অর্জন করেছে।

মিয়াজাকি আমের বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ‘তাইয়ো নো টোমাগো (Taiyo-no-tomago), এছাড়াও এই আমটি ‘এগ অফ সানসাইন (Egg of Sunshine) নামেও পরিচিত। বাংলায় একে সূর্যের ডিম বলা হচ্ছে। কিন্তু এই আমটি সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হল এই আমের মূল্য। কারণ দামের বিচারে সবচেয়ে মূল্যবান আম হল এটি। এক কেজি মিয়াজাকি আমের দাম প্রায় ৩ লাখ টাকা। এর টকটকে লাল রঙের কারণে বিশেষ জাতের এই আমের এমন নাম রাখা হয়েছে। এটি শুধু পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আমই নয়, সূর্যের ডিম হিসেবে খ্যাত এই আম পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্লভ ফলের মধ্যে অন্যতম।

মিয়াজাকি আমের অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এর চেহারা, স্বাদ আর চাষ প্রক্রিয়া।

চেহারা: ঐতিহ্যবাহী আমের বিপরীতে, মিয়াজাকি আম পাকলে ডিমের মতো আকৃতি এবং উজ্জ্বল লাল রঙের ত্বক ধারণ করে, যা তাদের দৃষ্টিনন্দন করে তোলে।

স্বাদ: তাদের অসাধারণ মিষ্টতা এবং রসালোতার জন্য বিখ্যাত এই মিয়াজাকি আম অন্য কোন আমের স্বাদের অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

চাষ: আদর্শ জলবায়ু পরিস্থিতি, উর্বর মাটি এবং বিশুদ্ধ পানির অ্যাক্সেস সহ একটি অঞ্চলে জন্মানো, মিয়াজাকি আম ফল উৎপাদনের জন্য অনুকূল পরিবেশে বৃদ্ধি পায়।

মিয়াজাকি আম চাষ একটি শ্রম-নিবিড় প্রক্রিয়া যার জন্য বিশদ যত্ন এবং মনোযোগ প্রয়োজন। উৎকৃষ্ট আমের চারা নির্বাচন থেকে শুরু করে জিনগত বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য কলম তৈরির কৌশল ব্যবহার করা পর্যন্ত, প্রতিটি ফলের গুণমান নিশ্চিত করতে কৃষকরা কোনো প্রচেষ্টাই ছাড়েন না।

মিয়াজাকি আমের অত্যধিক দামের পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ অবদান রাখে:

অসাধারণ গুণ: জাপান সরকার কর্তৃক প্রযোজ্য কঠোর মানের মানের অধীনে জন্মানো, মিয়াজাকি আম উচ্চতর স্বাদ, চেহারা এবং টেক্সচার নিশ্চিত করার জন্য কঠোর মানদণ্ডের মধ্য দিয়ে যায়।

হাতে বাছাই প্রক্রিয়া: প্রতিটি আম পাকা হওয়ার নিখুঁত সময়ে হাতে বাছাই করা হয়, যার ফলে এসব ফলের স্বাদ হয় অতুলনীয়।

আদর্শ ক্রমবর্ধমান অবস্থা: সর্বোত্তম জলবায়ু এবং মাটির অবস্থা বিবেচনা করতে হয় এ ফল চাষ করার আগে। এজন্য ভারতের মাটিতে এটির ফলন ভালো হয়েছে।

পুষ্টিগুণের শেষ নেই​ মিয়াজাকি আমের

গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই আমের স্বাদ ও গন্ধ সবার থেকে আলাদা। এতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন ও ফোলিক অ্যাসিডের মতো উপকারী উপাদান। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যানসারকে ফাঁকি দেয়ার কাজেও সাহায্য করে এই আম। এছাড়া মিয়াজাকি ম্যাঙ্গোতে রয়েছে জিঙ্ক, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে, কপার এবং ম্যাগনেশিয়ামের ভাণ্ডার। এসব ভিটামিন ও খনিজ কিন্তু শরীরের একান্ত প্রয়োজনীয়।

​ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে​

ক্ষতিকর কোষ যখন অনিয়ন্ত্রিত গতিতে বাড়তে শুরু করে, তখনই বলা হয় ক্যানসার। তাই প্রাথমিক পর্যায়েই এই অসুখের চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। এর মাধ্যমেই আক্রান্ত রোগী সহজে সুস্থ হতে পারেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বারবার এই অসুখ প্রতিরোধ করার পরামর্শ দেন। এই কাজে আপনার সঙ্গী হতে পারে মিয়াজাকি ম্যাঙ্গো। বিশ্বের সব থেকে দামি এই আমের ভেতর অ্যান্টিক্যানসারস নানা উপাদান রয়েছে। ফলে কর্কট রোগ প্রতিরোধে কিছুটা হলেও সহজ হয়।

শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রিত না থাকলে একাধিক ছোট-বড় সমস্যা পিছু নেয়। এক্ষেত্রে হার্ট, কিডনি, চোখসহ দেহের বিভিন্ন অঙ্গ নিজের কার্যক্ষমতা হারাতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে মিয়াজাকি আম। এই আম নিয়মিত খেলে দেহে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা বাড়তে পারে। ফলে সুগার থাকে নিয়ন্ত্রণে।

পেটের স্বাস্থ্য ফেরায়

বাঙালিদের নিত্যদিন পেটের সমস্যা লেগেই রয়েছে। গ্যাস, অ্যাসিডিটি, বদহজম, চোঁয়া ঢেকুর- সমস্যার যেন শেষ নেই। তবে জানলে অবাক হবেন, নিয়মিত মিয়াজাকি ম্যাঙ্গো খেলে এই সমস্যার সমাধান মেলে। এই আমে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হজম ক্ষমতা বাড়াতে পারে। ফলে এ ধরনের সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া সম্ভব হয়।

​বশে থাকে কোলেস্টেরল​

রক্তে উপস্থিত মোম জাতীয় এক উপাদান হলো কোলেস্টেরল। এই উপাদান কিন্তু রক্তনালীর ভেতর জমে। তারপর সেই অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এই কারণেই হার্টের অসুখ এবং স্ট্রোকের মতো রোগ পিছু নেয়। তবে ভালো খবর হলো, প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে খেতেই পারেন মিয়াজাকি আম। এই আম নিয়মিত খেলে দেহে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। ফলে হার্ট থাকে সুস্থ।

​ত্বকে ফুটে ওঠে যৌবনের দীপ্তি​

বয়সের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে ত্বকের বয়স বাড়তে দিলে চলবে না। বরং ত্বকের বয়স আটকে দিতে হবে। এই কাজটি করতে পারে মিয়াজাকি আম। নিয়মিত এই আম খেলে ত্বকের বয়স ধরে রাখতে সুবিধা হয়। ৪০ বছর বয়সেও থাকা যায় একদম ২০ বছরের তরুণের মতো।

বাংলাদেশ, ভারতের আবহাওয়ায় এই মিয়াজাকি আম/ তাইয়ো নো তামাগো/ সূর্যের ডিম আমের আবাদ শুরু হয়েছে। এমনকি অনেকেই ভালো ফলন পাচ্ছে। বাংলাদেশে উৎপাদিত আমগুলো জাপানের মিয়াজাকির আমের মতই টকটকে রঙিন দেখতে হয়েছে। গন্ধ আর স্বাদ অনেকটা জাপানিজ আমের কাছাকাছি। সবই বাংলাদেশের ট্রপিকাল আবহাওয়ার কারণেই সম্ভব হয়েছে।

সূর্যডিম বা মিয়াজাকি হলো জাপানিজ আম। বিশ্ববাজারে এটি ‘রেড ম্যাংগো’ নামে পরিচিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। আমটির স্বাদ অন্য আমের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি। আমটি খেতে খুবই মিষ্টি। আমটির গড় ওজন প্রায় ৭০০ গ্রামের মতো। বিশ্ববাজারে এর দাম প্রায় ৩ লাখ টাকা কেজি। অনেক কৃষক নতুন এ জাতের আম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রচলিত জাতের পাশাপাশি বিদেশি জাতের আম চাষাবাদে কৃষকরা আগ্রহী হচ্ছেন। খাগড়াছড়িতে প্রথমবারের মতো জাপানি আম মিয়াজাকির চাষাবাদ শুরু হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৬ মে/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঢাকা-বেইজিং অংশীদারিত্ব এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে: চীনা রাষ্ট্রদূত
বেইলি রোডে ৩৪ কোটি দামের কষ্টিপাথরের মূর্তি ও বিদেশি মদসহ ৪ জন আটক
দেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৮২০ ডলার, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ
স্বৈরাচারের আঁচলে আশ্রয় নেওয়াদের রক্ষাকবচের দায়িত্বে অন্তর্বর্তী সরকার: ১২ দলীয় জোট
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা