ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রীর পদত্যাগ, চাপে নেতানিয়াহু

গাজা যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ পদত্যাগ করেছেন রবিবার। এতে করে গাজায় সামরিক অভিযান ও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই নতুন সমস্যার মুখে পড়লেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷
রবিবার এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যান্টজ বলেন, ‘নেতানিয়াহু আমাদের প্রকৃত জয়ের দিকে এগোনোর পথে বাধা সৃষ্টি করছেন৷ তাই ভারাক্রান্ত মনে আমাদের মন্ত্রিসভা ত্যাগ করতে হচ্ছে৷’
এরআগে গত মাসে এক টেলিভিশন ভাষণে গ্যান্টজ হুমকি দিয়েছেলেন, গাজা নিয়ে যুদ্ধপরবর্তী পরিকল্পনা অনুমোদন না দিলে তিনি পদত্যাগ করবেন। তিনি এজন্য ৮ জুন সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। তবে এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেননি নেতানিয়াহু।
মূলত ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় যুদ্ধ শেষে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাকে শাসনের জন্য ছয় দফা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন গ্যান্টজ। গ্যান্টজের ছয় দফায় হামাসের পতন, ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের ফিরিয়ে দেওয়াকে অন্তর্ভুক্ত করেন।
এছাড়া ইসরায়েলি নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পাশাপাশি আমেরিকান, ইউরোপীয়ান, আরব ও ফিলিস্তিনিদের নিয়ে একটি প্রশাসন গঠন করতে হবে যারা গাজা উপত্যকার বেসামরিক বিষয়গুলো দেখবে এবং ভবিষ্যতের বিকল্প ভিত্তি তৈরি করতে হবে যেখানে হামাস কিংবা মাহমুদ আব্বাস থাকবে না।
ইসরায়েলের সাবেক এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যদি তার চাওয়া পূরণ করা না হয়, তাহলে তিনি গত বছর গাজা যুদ্ধের তদারকির জন্য গঠন করা যুদ্ধকালীন জরুরি ঐক্যের সরকার থেকে নিজের মধ্যপন্থি দলের সমর্থন তুলে নেবেন। শেষমেষ রবিবার তিনি পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী পদত্যগ করলেন৷
এদিকে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার একমাত্র মধ্যপন্থি সদস্য পদত্যাগ করায় ইসরায়েলের সরকার আরও চাপের মুখে পড়তে পারে বলে মত বিশ্লেষকদের৷
তারা বলছেন, গাজায় চলমান সামরিক অভিযানকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই দেশে-বিদেশে প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন নেতানিয়াহু৷ বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণে তার সরকারের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে৷
অন্যদিকে উগ্র দক্ষিণপন্থি জোট সরকারের একমাত্র মধ্যপন্থি দলের প্রস্থান একাধিক সংকটের সময়ে ইসরায়েলে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে৷ এখনই সরকার পতনের আশঙ্কা না থাকলেও নেতানিয়াহুকে এবার জোটের কট্টরপন্থি সদস্যদের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে হবে৷ ফলে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেশ যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে মনোমালিন্য আরও তীব্র হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ নেতানিয়াহু নিজের সরকারের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মার্কিন প্রশাসনের অনেক চাপ উপেক্ষা করার চেষ্টা করে চলেছেন৷
প্রসঙ্গত, বেনি গ্যান্টজ প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অন্যতম রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এমনকি তিনি গত বছর যুদ্ধকালীন সরকারে অংশ নেওয়ার আগে দেশটিতে অন্যতম প্রধান বিরোধী নেতা হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। নেতানিয়াহু সরকারের পতন ঘটলে গানটসই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে ইসরায়েলের রাজনৈতিক মহলে মনে করা হচ্ছে৷ তিনি নেতানিয়াহুর উদ্দেশ্যে চলতি বছরেই ইসরায়েলে সাধারণ নির্বাচনের জন্য রাজি হওয়ার ডাক দিয়েছেন৷
সূত্র: রয়টার্স, আনাদোলু
(ঢাকাটাইমস/১০জুন/এমআর)

মন্তব্য করুন