মেয়েজামাই মুশতাক ও শেখ হাসিনার নামে হত্যা মামলা করলেন তিশার বাবা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে অর্থ জোগান ও ৪৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যার অভিযোগে মেয়ের জামাই মুশতাক আহমেদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৪৭ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হত্যা মামলা করেছেন সিনথিয়া ইসলাম তিশার বাবা সাইফুল ইসলাম। মামলায় ১০ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
বাদী সাইফুল ইসলাম নিজেই মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। বর্তমানে তিনি রাজধানীর উত্তর মুগদায় থাকেন। পেশায় ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম ৩ নম্বর আকচা ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্র-জনতার এই আন্দোলনকে দমানোর জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দমন-পীড়ন শুরু করে। আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগী, চরম দুর্নীতিবাজ, দলবাজ ও ৪৪৭ জন আসামি এবং ১০ হাজার ২০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির অর্থায়নে, নির্দেশে, পরিকল্পনায় এবং অংশগ্রহণে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে হামলা ও গুলি চালানো হয় এবং পারস্পরিক যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ৪৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডে অন্তত ১৪০০ ছাত্র-জনতা নিহত হন। এ সময় হাজার হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়েছেন ও চিরতরে অন্ধত্ববরণ করেছেন। আসামিরা দেশের বিচার বিভাগকে বুদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বুক ফুলিয়ে চলছে। অভিযোগটি রেজিস্ট্রারভুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ অনুসারে আসামিদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ্য করা হয়।
বাদী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অনেক মানুষের প্রাণ গেছে। আবার অনেকেই এখনো পঙ্গু অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন। এই আন্দোলনে যে শুধু ছাত্র-জনতা নিহত হয়েছে তা কিন্তু নয়। দেশের বিভিন্ন থানায় অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশের ৪৪ জন সদস্য প্রাণ দিয়েছে। আমি চাই ছাত্র-জনতার হত্যাকারীদের কঠোর বিচার হোক। সেই সঙ্গে আমাদের ৪৪ জন পুলিশ যে মারা গেল তাদের পরিবার যাতে বিচার পায়।’
তিশার বাবা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় ১০ মাস হয়ে গেল এখনো পুলিশ হত্যার বিচার চেয়ে কেউ কোনো মামলা করেনি। তদন্ত তো দূরের কথা। এতজন পুলিশ কীভাবে মারা গেল সেটার সঠিক তদন্তের জন্য এই মামলা করা। মামলা না হলে তো তদন্ত হবে না। কার নির্দেশে পুলিশের প্রাণ গেল সেটা অবশ্যই উঠে আসা দরকার। সেই সঙ্গে ছাত্র আন্দোলনে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা হাসিনার নির্দেশে নির্বিচারে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে, তাদেরও কঠোর শাস্তি চাই। এমনকি যেই সাংবাদিকরা স্বৈরাচার হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করে সাধারণ মানুষের বিপক্ষে কাজ করেছিল, তাদেরও বিচার চাই।’
তাদের বিরুদ্ধেও তিনি মামলা করেছেন জানিয়ে তিশার বাবা বলেন, ‘এত মানুষ প্রাণ দিল আর আসামিরা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে, আমি তা মেনে নিতে পারছি না। তাই বিবেকের তাড়নায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলাটি করেছি।’ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হলে উল্লেখিত আসামিদের সঙ্গে মামলার সংশ্লিষ্টতা ও অজ্ঞানামা আসামিদের নাম উঠে আসবে বলে তিনি মনে করেন।
(ঢাকাটাইমস/৭মে/মোআ)

মন্তব্য করুন