এবার করিডরের বিরোধিতায় সরব আওয়ামী লীগ, ‘আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘সাহায্য সামগ্রী’ পাঠাতে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার সাম্প্রতিক পরিকল্পনা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি শুরু থেকেই এ ধরনের পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ। করিডরের বিরোধিতায় জোরাল অবস্থান নিয়েছে দলটি। এই বিরোধিতায় এবার যুক্ত হলো আওয়ামী লীগও। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাসহ সব কেন্দ্রীয় নেতা পলাতক থাকলেও বিবৃতির মাধ্যমে মানবিক করিডরের এই `আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
বুধবার গণমাধ্যমে মাহবুব-উল আলম হানিফের প্রেস সচিব মোহা. তারিক-উল-ইসলাম টুটুলের পাঠানো এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “মিয়ানমারের রাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ বাংলাদেশের ভৌগোলিক স্থিতিশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ।”
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়ার এই ‘হটকারী’ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। বলেন, “রাষ্ট্রের নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার কিসের ভিত্তিতে এবং কোন প্রক্রিয়ায় ‘মানবিক করিডোর' প্রদানের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, “মিয়ানমারে সমুদ্রবন্দর থাকার পরেও কেন সেখানে ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে?”
মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “ইতিহাস বলে, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কঙ্গো এবং সিরিয়া, কোথাও মানবিক করিডরের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। ইউক্রেন-রাশিয়াতে জাতিসংঘ প্রস্তাবিত মানবিক করিডরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।”
মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির দীর্ঘদিনের সংঘাত চলছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, “সেই উত্তপ্ত অঞ্চলে করিডর স্থাপনের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে। এই এলাকায় ভারত, চীনসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও পরাশক্তির স্বার্থ জড়িত থাকায় মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে একটি সম্ভাব্য প্রক্সি যুদ্ধের কেন্দ্রে পরিণত করবে।”
তিনি বলেন, “বস্তুত তথাকথিত এই মানবিক করিডরের নামে আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনীতিগতভাবে এই অঞ্চলকে নিরাপদ ‘বাফার স্টেট’ হিসেবে তৈরি করে বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে ব্যবহারের সুযোগ করে দিতে চায় এই অন্তর্বর্তী সরকার।”
“এর ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার যে জটিলতা তাতে জড়িয়ে পড়বে। বিশ্বের খুব কম মানবিক করিডরই নিরাপত্তা ঝুঁকির বাইরে থেকেছে। এ ধরনের করিডর চালু হলে সেই অঞ্চলে থাকা বিদ্রোহী বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীসহ অপরাধীদের সেটাকে অপরাধের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহারের বহু নজির রয়েছে।” যোগ করেন আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
হানিফ আরও বলেন, “মানবিক করিডর বলতে আমরা সাধারণত বুঝি যেখানে শরণার্থী রয়েছে সেখানে তাদের সহায়তার জন্য ত্রাণসামগ্রী ও খাদ্যসামগ্রী প্রেরণের জন্য ব্যবহৃত প্যাসেজকে। মিয়ানমারে আভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শরণার্থী হিসেবে আছে। ত্রাণসামগ্রী দিতে হলে বাংলাদেশের কক্সবাজারে যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প আছে সেখানেই তো দেওয়ার কথা। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তো কোনো শরণার্থী শিবির নেই। তাহলে সেখানে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর কোনো প্রয়োজন আছে কি? এটাকে ‘মানবিক করিডর’ কোন যুক্তিতে বলা হচ্ছে?”
তিনি বলেন, “মূলত মানবিক করিডরের নামে এখানে আরাকান আর্মিকে সহায়তা এবং তাদেরকে অস্ত্র-গোলাবারুদ পাঠানোর জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত এসেছে। যেটা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং দেশের মানচিত্র বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। কারণ এই ভৌগোলিক অবস্থানে আরাকান আর্মির সঙ্গে যদি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, চীন, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়বে।”
দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে সেনাবাহিনীকে এ ব্যাপারে দৃঢ় ও সময়োচিত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, “জাতির এই ক্রান্তিকালে, দেশের মানচিত্রের ওপর আঘাত হানার পরিস্থিতিতে দেশের সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীলতা প্রত্যাশিত।”
তিনি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত আসে এমন ‘হঠকারী আত্মঘাতী’ সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানান।
(ঢাকাটাইমস/০৭মে/এফএ)

মন্তব্য করুন