কুমিল্লায় বিপৎসীমার ওপরে গোমতী নদীর পানি, ভোগান্তিতে চরাঞ্চলের মানুষ

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন গোমতী চরাঞ্চলের মানুষ।
বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কুমিল্লা নগরীর ভাটপাড়া এলাকাসহ আশপাশের নদীর চরের বাসিন্দাদের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পানি বেড়ে যাওয়ায় ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। ফেনী ও কুমিল্লাতে পানি প্রবল আকারে বাড়ার কারণ হিসেবে এটাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
তবে পানি বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠার মাঝে রয়েছেন নদীর চরাঞ্চলের কৃষকরাও। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় চর ডুবে যাওয়ায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নিচু এলাকার বাড়িঘরে প্রবেশ করছে পানি। বিভিন্ন জায়গায় গোমতীর আইলে ফাটল দেখা দিচ্ছে। এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অঘটন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছে।
পানি আইলের কাছাকাছি উঠে আসায় চর ভূমিতে চাষাবাদ করা নানান শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসল এখন পানির নিচে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে এসব ফসল আর রক্ষা করা যাবে না বলে আশঙ্কা করছেন চরের কৃষকরা।
কৃষকরা নদীর চরে চাষাবাদ করেই মূলত জীবিকা নির্বাহ করেন। গোমতীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে অনেক কৃষকের লাউ, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙ্গা, মুলা, লাল শাক পানিতে ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা নদীর চরের কাছে দাঁড়িয়ে হা-হুতাশ করছেন। কেবল চরের ফসল নয়, চর এলাকায় বসবাস করা অনেকের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করায় মালামাল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লোকজন।
দুর্গাপুর উত্তর ইউনিয়নের কৃষক আবদুল জলিল আক্ষেপ করে বলেন, ‘কত আশা নিয়ে কয়েক রকমের সবজি চাষ করছিলাম এবার, সব পানির নিচে চলে গেছে। আল্লাহ জানে, আমার কি হবে। দেনা শোধ করবো কিভাবে।’
এই বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, ‘কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমা ১১ দশমিক ৭৫ মিটার। ইতোমধ্যেই তা ১২ মিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ৩০ বছরে এমন পানি হয়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক টিম বাঁধ পর্যবেক্ষণে আছে। আমরা গোমতী পাড়ের মানুষজনকে বলেছি, তারা কোথাও কোনো বাঁধে ফাটল বা ঝুঁকি দেখলে যেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে সাথে সাথে জানায়। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে বলেছি।’
ত্রিপুরাতে বাঁধ খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘বাঁধ খুলে দিলেও ভারতের কর্তৃপক্ষ কখনো সেটা পূর্বে জানিয়ে দেয় না। তারা তাদের এলাকায় মাইকিং করছে, সেটা আমরা বিভিন্ন ভিডিওতে দেখেছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে পেরেছি বাঁধ খুলে দিয়েছে। তবে অফিশিয়ালভাবে নিশ্চিত নই।’
এই বিষয়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোমেন শর্মা বলেন, গোমদী নদীর দক্ষিণ অংশে অর্থাৎ শহরের পাশে বাঁধ থেকে গড়ে ৬ থেকে ৭ ফুট নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আর বিগত ৬ ঘণ্টায় প্রায় ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। আমরাও চরাঞ্চলের মানুষদের সতর্ক স্থানে সরাতে পদক্ষেপ নিচ্ছি।’(ঢাকা টাইমস/২১আগস্ট/এসএ)

মন্তব্য করুন