নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখীর ওপর হামলার অভিযোগ

ফরিদপুরের নগরকান্দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বৈশাখী ইসলাম ওরফে বর্ষার (১৮) ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা এই হামলা করেন বলে অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের। তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে নগরকান্দা উপজেলা বিএনপি।
শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার ভবুকদিয়া এলাকায় নিজ বাড়িতে রাস্তার পাশে এ ঘটনা ঘটে। বৈশাখী ইসলামকে চুল ধরে টানা হয় ও মারধর করা হয় বলে জানায় বৈশাখী। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বৈশাখী ইসলাম তার নিজ ফেসবুক আইডি ‘বৈশাখী ইসলাম বর্ষা’ পরপর দুটি লাইভ বক্তব্যে এ অভিযোগ করেন। দুটি লাইভ বক্তব্যের একটি এক মিনিট নয় সেকেন্ড ও অপরটি ২৭ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের।
ওই লাইভে তিনি বলেন, “আমি বৈশাখী ইসলাম। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। আমি একটা ইভটিজিংয়ের কেস নিয়ে প্রতিবাদ করাতে বিএনপির লোকজন আমাকে রাস্তায় ফেলে মারধর করছে।”
তিনি বলেন, “আমাদের কি জুলাই আন্দোলন করা ভুল ছিল, যার কারণে রাস্তায় ফেলে বিএনপির লোকজন আমাকে মারছে? তারা আমাকে একজন মেয়ে বলে ইচ্ছামতো চুল ধরে লাথি মেরেছে। আমার আব্বাকে খুঁজছে মারার জন্য। আমি খুব বাজে অবস্থায় আছি। আমি কী করব, বুঝতে পারছি না।”
ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৈশাখীর এক পরিচিত তরুণী যৌন হয়রানির (ইভটিজিং) শিকার হন একই এলাকার এক ছেলের দ্বারা। বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানালে এ ব্যাপারে সালিশ ডাকা হয়। তবে এর আগে আজ শনিবার বৈশাখী ওই বিষয় নিয়ে থানায় অভিযোগ করেন।
ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বৈশাখী ইসলামের ওপর হামলার খবর পেয়ে নগরকান্দা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। একই সময় ফরিদপুর থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে যান। এ সময় পুলিশ এ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করে থানায় নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে। জনতা পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক ব্যক্তিদের থানায় নিয়ে আসে।
নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক কুন্তল সাহা জানান, এ ঘটনায় হান্নান শরীফ নামে আহত পুলিশের এক সদস্যকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন নগরকান্দা থানা পুলিশের গাড়ি চালক আব্দুল হান্নান শরীফ (৫৬) বলেন, “সন্ধ্যা সাতটার দিকে আমরা আসামি ধরে আনতে গেলে স্থানীয় দেড় শতাধিক লোক আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য। স্থানীয়রা আমার হাত মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে গাড়ির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়, গাড়ির পর্দা ছিড়ে ফেলে। তবে তারা আসামি ছিনিয়ে নিতে পারেনি। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করে থানায় এনেছি।
ওই এলাকার বাসিন্দা নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্লা জানান, ওই সমন্বয়ক এবং যে ছেলের সাথে এ ঘটনা তারা দুই পরিবারই আওয়ামী লীগ ঘরানার পরিবারের সদস্য। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।”
নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, “এটি ভাবুকদিয়া গ্রামে দুই পরিবারের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। এর সঙ্গে বিএনপি কিংবা রাজনীতির বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই।”
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে ও প্রতিকার চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন। লিখিত বিবৃতিতে কাজী জেবা তাহসিন বলেন, “বিএনপির এক ক্যান্ডিডেট ও তার ছেলে প্রকাশ্য দিবালোকে বর্ষাকে চুল ধরে টেনে মারধর ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ফরিদপুর জেলা এই হামলার তীব্র নিন্দা এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়।
পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দহে ছয়জনকে আটক করেছে। এরা হলেন- আরিফ হোসেন (২৩), মো. আজিজুল শেখ ( ১৫), শরিফ শেখ (১৯), সজীব শেখ (২৪) এবং সাজ্জাদ শেখ (১৬) ।
নগরকান্দা থানার ওসি মো. সফর আলী জানান, এ ঘটনায় পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছেন। ওসি বলেন, “এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
ফরিদপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক কাজী রিয়াজ বলেন, “পুলিশের ওপর হামলা আমরাই প্রতিরোধ করেছি। আমাদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা আমিরুল লাঞ্ছিত হয়েছেন।”
তিনি বলেন, “ওই এলাকায় রাতে সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযান শুরু করেছে। এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।”
(ঢাকাটাইমস/৩১মে/এফএ)

মন্তব্য করুন