আলফাডাঙ্গায় বিনা চিকিৎসায় অন্ধ হওয়ার পথে শিক্ষক বাবা, ছেলে মৃত্যু পথযাত্রী

রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ, আলফাডাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:২৬
অ- অ+

শিক্ষক থাকাকালীন হাজারো ছাত্রছাত্রীর জীবনে অন্ধকার ঘুঁচিয়ে জ্বালিয়েছেন শিক্ষার আলো। এখন বিনা চিকিৎসায় নিজের চোখের আলোই হারাতে বসেছেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার শিক্ষক আব্দুর শুকুর শেখ। বৃদ্ধ বয়সের একমাত্র অবলম্বন ছেলে লিটন শেখও গুরুতর অসুস্থ। সব মিলিয়ে দুর্বিসহ জীবন কাটছে পরিবারটির।

জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের বানা এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রধান হিসাব রক্ষক আব্দুর শুকুর শেখ শারীরিক নানা জটিলতা ও চোখের সমস্যায় ভুগছেন বহুদিন ধরে। দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছেন তিনি। চিকিৎসা না হলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অন্ধত্ব বরণ করতে হবে তাকে।

এদিকে, শিক্ষক আব্দুর শুকুর শেখের ছেলে লিটন শেখ দিনমজুরি ও কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। অভাবের সংসারে পুত্র লিটন হাল ধরেছিলেন কোনোমতে। সেই লিটনও এখন ভুগছেন দূরারোগ্য ব্যাধিতে। তার একটা কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হয়ে গেছে। দ্রুত চিকিৎসা না করালে আরেকটি কিডনিও বিকল হয়ে যাবে। লিটনের লিভারও নষ্ট হওয়ার পথে। নিয়মিত রক্ত দেওয়া লাগে তার শরীরে।

জানা গেছে, অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে স্থানীয় ফকির এবং কবিরাজের টোটকা চিকিৎসা নিচ্ছেন লিটন শেখ। কিন্তু এই চিকিৎসায় তার সুস্থ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘ দিন অসুস্থ থাকায় আয় উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে হতভাগ্য এই পরিবারটির। তিন বেলা পেটপুরে ভাত জোগাড় করাই রীতিমত দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে উঠেছে তাদের।

জাতিগড়ার মহান কারিগর আব্দুর শুকুর শেখ ক্ষীণ কণ্ঠে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘খুবই খারাপ অবস্থায় আছি বাজান। চোখে দেখতে পাই না। শরীরে আরও রোগ বাসা বাঁধছে। ছেলেটা খুবই অসুস্থ। আমি আর কয়দিন বা থাকব। ছেলেটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। ওরে ভালো চিকিৎসা করাতে পারলে মরেও শান্তি পেতাম।’ এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।

১৯৭৪ সালে বানা এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন যুবক আব্দুর শুকুর। স্কুলের প্রধান হিসাব রক্ষক ও শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন ছাত্রছাত্রীদেরকে নিজ সন্তানের মত আগলে রেখেছেন। সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন তাদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার। সেই সঙ্গে বানা অঞ্চলের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

কিন্তু অবসরে যাওয়ার পর থেকেই আর্থিক দৈন্যতা ঘিরে ধরে আব্দুর শুকুরকে। ছেলে-মেয়েরাও স্বাবলম্বী না হওয়ায় অভাব অনটন আরও বেশি ঘিরে ফেলে পরিবারটিকে। আব্দুর শুকুর শেখ মধুমতি নদীর করাল গ্রাসে জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিলেন অনেক আগেই।

মানুষ বৃদ্ধ হলে দেখভাল করেন সন্তানরা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, অসুস্থ বাবার কাঁধে ভরসার বিশ্বস্ত হাত রাখার পরিবর্তে ছেলে লিটনই মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে পড়েছেন। বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরে প্রতিদিনি দিন কাটছে তার।

বানা গ্রামের লিয়াকত আলী বিশ্বাস বলেন, ‘উপজেলার বানা ইউনিয়নের মধ্যে এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ জনপদের মানুষ লেখা পড়া শিখে দেশে-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কর্মজীবন কাটাচ্ছেন। এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন। কিন্তু দুর্দশাগ্রস্ত ইউনিয়ন বাসীকে শিক্ষার আলো বিলিয়েছেন যে আব্দুর শুকুর স্যার, তার আজ করুণ দশা। কেউ নেই তাদের পাশে। আমি বানা এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তণ ছাত্রছাত্রী ও এলাকার যুব সমাজকে স্যার এবং ছেলের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করছি।’

বানা এম এ মজিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষক মো. কামাল হোসেন আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘আব্দুর শুকুর সাহেব অত্যন্ত ভালো মানুষ। শিক্ষক থাকা অবস্থায় তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিজের সন্তানের মত আদর করতেন। অত্যন্ত নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। খুবই দুঃখ লাগে তার এ অবস্থা দেখে। তিনি নানা রোগে ভুগছেন। ছেলেটার অবস্থা আরও খারাপ।’

শিক্ষক মো. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে স্যারের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

(ঢাকাটাইমস/৮জানুয়ারি/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নিরাপদ স্থান ছাড়াই চার লাখ ২৩ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি আবারও বাস্তুচ্যুত: জাতিসংঘ
শোবিজ তারকারা ব্যাট-বল নিয়ে আবারও মাঠে নামছেন  
এপ্রিলে রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিকে জড়িয়ে সবচেয়ে বেশি অপতথ্য প্রচার
গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় ৩১ জন নিহত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা