সৈয়দপুরে বাংলো দখল, মেস বানিয়ে ভাড়া আদায় রেলশ্রমিক লীগ নেতার

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪৫
অ- অ+

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতাদের রাজত্ব বহাল রয়েছে। তাদের দখলকৃত বাংলো-কোয়ার্টারগুলো থেকে ভাড়া আদায় ও কেনাবেচা কার্যক্রম চলছেই। দীর্ঘদিন ধরে বজায় থাকা এই অবৈধ দখল নিয়ে রেলওয়ে শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তারা এখনই ফ্যাসিস্ট সরকারের মদদপুষ্ট শ্রমিক নেতাদের কবল থেকে সৈয়দপুর রেলওয়েকে বাঁচানোর দাবি জানিয়েছেন।

রেলওয়ের শহর সৈয়দপুরে রেলওয়ের সম্পত্তি দখল করে নিজস্ব সম্পত্তির মতো ব্যবহার ও বাণিজ্য করা নেতাদের মধ্যে অন্যতম হলেন রেলওয়ে কারখানা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তরুণ কুমার মন্ডল। তিনি দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে রেলওয়ে কারখানার অদূরে রেলওয়ে শ্রমিক লীগ কার্যালয়ের কাছে একটি দ্বিতল বাংলোর উপরতলা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন।

গীর্জা রোড নামে পরিচিত শহরের সাহেবপাড়া এলাকায় টি-১৪ (বি) নম্বর বাংলো দখল করে বসবাসের পাশাপাশি এর সামনের জায়গায় বিশাল জায়গা জুড়ে দুটি টিনশেট বাড়ি বানিয়ে মেস হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন। পাশের জায়গায় উন্নত জাতের ঘাস আবাদ করছেন। অথচ এই বাংলো ও জায়গা থেকে রেলওয়ে বা সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না।

রেলওয়ে কারখানা সূত্রে জানা যায়, তরুণ মন্ডল রেলওয়েতে ১৯৮২ সালে ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস পদে যোগ দেন। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারাখানাতেই ছিল তার কর্মস্থল। সর্বশেষ সিএইচআর শপের মিস্ত্রি পদে থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এলপিআরে গেছেন।

অভিযোগ রয়েছে, এই দীর্ঘ চাকরিকালে তিনি বেশির ভাগই সময়ই কর্মস্থলে নিয়মিত ছিলেন না। বরং ব্যক্তিগত ও সংগঠনের কাজে নিয়োজিত থাকতেন। একই সাথে অবৈধভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন গোপালগঞ্জের লোক হওয়ায় সুবাদে। বিশেষ করে রেলওয়ের বাংলো ও জমি দখল, ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রমে তার সম্পৃক্ততা ছিল ব্যাপক। এই অবৈধ কাজের মাধ্যমে তিনি বিপুল অর্থ কামিয়েছেন বলে প্রচার আছে।

এই অর্থ দিয়ে তিনি অবসরের আগেই সৈয়দপুর শহরের নয়াটোলা এলাকায় ৮ শতক জমি কিনে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। এই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রেও তিনি অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। পৌরসভা থেকে ৫ তলা ভবনের নকশা অনুমোদন করে ৬ তলা করছেন। তার ওপর ভবনের ছাড়ে একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ারও স্থাপন করেছেন অনুমোদন না নিয়েই।

এভাবে রেলওয়ের একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হয়েও তিনি বনে গেছেন কোটিপতি। এই বহুতল ভবন নির্মাণ ও মোবাইল টাওয়ার বসানো নিয়ে স্থানীয় লোকজনসহ মুক্তিযোদ্ধারা পৌর প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিলেও তার রাজনৈতিক প্রভাবে তারা নির্বিকার থাকে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তরুণ মন্ডলের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘মূলত বাংলোটি রেলওয়ে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সহধর্মিণীদের সংগঠন মহিলা অঙ্গনের নামে বরাদ্দ। আমি সেখানে কেয়ারটেকার হিসেবে বসবাস করি। বিনিময়ে তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করে থাকি।

তরুণ মণ্ডল আরও বলেন, ‘বাংলোর সীমানায় যে বাড়ি নির্মাণ করেছি তা এখন আমার হলেও আমি চলে যাওয়ার পর এই সম্পত্তি মহিলা অঙ্গন তথা রেলওয়েরই থাকবে। আর এই জায়গাটুকুর জন্য রেলওয়ের পাকশী ভূসম্পত্তি অফিসে সম্প্রতি একটি লিজ আবেদন করেছি।’ এত দিন অবৈধভাবে বাড়ি ভাড়া দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

মহিলা অঙ্গন নামে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সহধর্মিণীদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জিওএইচ শপের ইনচার্জ আরিফুর রহমানের স্ত্রী দিলরুবা খানম। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে আরিফুর রহমান বলেন, ‘বাংলোটি মহিলা অঙ্গনের নামে বরাদ্দ আছে বলে জানি। কিন্তু সেখানে তরুণ কুমার মন্ডল বসবাস করেন। তাছাড়া তিনি বাংলোর ভিতরের জায়গায় বাড়ি নির্মাণ করে মেস হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। এগুলো থেকে কোনো আয়ই মহিলা অঙ্গন পায় না।’

সৈয়দপুর রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী (আইওডব্লিউ) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সৈয়দপুরে যোগদানের পর থেকে দেখছি টি-২৪ (বি) বাংলোটি মহিলা অঙ্গনের নামে বরাদ্দ। কিন্তু কবে থেকে এই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা রেজিস্ট্রার খাতায় কোনো উল্লেখ নেই। আর এই বাংলোর ভাড়া বাবদ রেলওয়ে কোনো অর্থ পায় না।’

বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএসডব্লিউ) মোস্তফা জাকির হাসান। তিনি বলেন, ‘তরুণ কুমার মন্ডল ক্লিয়ারেন্সের জন্য যে আবেদন করেছেন, তা যথাযথভাবে তদন্ত করা হবে। তিনি যত দিন থেকে সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছেন, সে হিসাব নিয়ে ভাড়া বাবদ সব অর্থ আদায় করার পরই তাকে ক্লিয়ারেন্স দেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৭জানুয়ারি/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এপ্রিলের ২৯ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬০ কোটি ৭৬ লাখ ডলার
নির্ধারিত সময়ের দুই মাস আগেই সব দেনা পরিশোধ করল পেট্রোবাংলা
ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব: অর্থ উপদেষ্টা
উপদেষ্টাদের সঙ্গে পুলিশের মতবিনিময়, বিভিন্ন প্রস্তাব বাস্তবায়নের আশ্বাস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা