সচিবালয়ে প্রবেশের নতুন নীতিমালা, মানতে হবে যেসব নিয়ম

সচিবালয়ে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের প্রবেশ রোধ ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় প্রবেশ নীতিমালা, ২০২৫’ প্রণয়ন করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সচিবালয় প্রবেশ নীতিমালা ২০২৫ প্রকাশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, এখন থেকে কোনো দর্শনার্থী যে মন্ত্রণালয়ে প্রবেশের অনুমতি নেবেন, তিনি শুধু সেই মন্ত্রণালয়েই যেতে পারবেন। একই সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সচিবালয় ত্যাগ করতে হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে দর্শনার্থীর অবস্থান ও বহির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন যারা
নীতিমালা অনুযায়ী স্থায়ী ও অস্থায়ী পাসধারী, সংসদ সদস্য, আগের অনুমতি নেওয়া কূটনীতিক, সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সভা–সেমিনারে আগত অংশগ্রহণকারী (সভার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে) সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। পাশাপাশি জেনারেল পোস্ট অফিসের ডাক বহনকারী, সচিবালয়ের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য ঠিকাদার, শ্রমিক, সংবাদপত্র সরবরাহকারী এবং আগে অনুমতি নেওয়া দর্শনার্থীরাও প্রবেশ করতে পারবেন। একজন দর্শনার্থী দিনে একবার প্রবেশ করতে পারবেন।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, একজন দর্শনার্থীর সচিবালয়ে প্রবেশের সময়সীমা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব নির্ধারণ করে দেবেন। তবে জরুরি প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সইয়ে ওই সময়ের আগে দর্শনার্থীকে সচিবালয়ে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া যাবে।
অস্থায়ী পাস পাবেন যারা
সচিবালয়ের ভেতরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগে সংযুক্ত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অস্থায়ী পাস দেওয়া হবে। এ ছাড়া মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অধীনে অধিদপ্তর, দপ্তর ও সংস্থার মনোনীত সর্বোচ্চ চারজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এই পাস দেওয়া হবে।
এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধান নির্বাহী ও মনোনীত দুজন কর্মকর্তা-কর্মচারী; বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি); মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত, খেতাবপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, অ্যাটর্নি জেনারেল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও মনোনীত একজন প্রতিনিধি; তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ সাপেক্ষে সচিবালয়ে দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ অস্থায়ী পাস পাবেন।
অস্থায়ী প্রবেশ পাসের মেয়াদ হবে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত। তবে বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য সর্বোচ্চ এক বছর আর সরকারি কর্মচারীদের জন্য দুই বছর।
স্থায়ী পাস পাবেন যারা
সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থিত মন্ত্রণালয় বা বিভাগ বা দপ্তরগুলোর নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থায়ী পাস পাবেন।
এছাড়া সচিবালয়ের বাইরে কর্মরত সরকারের উপসচিব থেকে তদূর্ধ্ব, অবসরপ্রাপ্ত সচিব স্থায়ী পাস পাবেন। মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী বা সমমর্যাদার ব্যক্তির সঙ্গে কর্মরত একান্ত সচিব ও সহকারী একান্ত সচিবও স্থায়ী পাস পাবেন।
স্থায়ী প্রবেশ পাসের মেয়াদ হবে ২ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গণি স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বর্তমান বিশ্বের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর ‘বাংলাদেশ সচিবালয় প্রবেশ নীতিমালা, ২০২৫’ জারি করা হয়েছে।’
‘বাংলাদেশ সচিবালয় প্রবেশ নীতিমালা, ২০১৪’ অনুসারে, সরকার সচিবালয়ে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এবং সচিবালয়ে অবাঞ্ছিত বা অপ্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের প্রবেশ রোধ করে ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করে একটি কার্যকর পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে নীতিমালাটি প্রণয়ন করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সচিবালয় দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু এবং সরকারের বেশিরভাগ মন্ত্রণালয়/বিভাগ সচিবালয়ের ভেতরে অবস্থিত। দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণের জন্য নীতিমালা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং উন্নয়নমূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য এই সকল মন্ত্রণালয়/বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে এই নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।
নীতিমালা অনুযায়ী একটি সচিবালয় প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা কমিটি গঠন করা হবে। যার মধ্যে থাকবেন- অতিরিক্ত সচিব/যুগ্মসচিব (নিরাপত্তা বিভাগ), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুগ্মসচিব/উপসচিব (নিরাপত্তা শাখা), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুগ্মসচিব/উপসচিব (প্রশাসন বিভাগ), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুগ্মসচিব/উপসচিব (রাজনৈতিক শাখা), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যুগ্মসচিব/উপসচিব (পুলিশ শাখা-১), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, উপ-পুলিশ কমিশনার (সচিবালয় নিরাপত্তা) এবং উপ-সচিব/সিনিয়র সহকারী সচিব, সচিবালয় নিরাপত্তা শাখা।
(ঢাকাটাইমস/২০ফেব্রুয়ারি/এমআর)

মন্তব্য করুন