কবি, গীতিকার ও সাহিত্যিক মোসলেম উদ্দিন সাগরের সাক্ষাৎকার

প্রকৃত মানবিক চরিত্রের মানুষই পারে সবাইকে ধারণ করতে

সিরাজুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া
  প্রকাশিত : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৬:০৫
অ- অ+

নতুন আঙ্গিকে নতুন ধারায় নতুন করে মানুষবোধ দর্শন নিয়ে প্রথম উপন্যাস 'জীবনের রঙ' লিখে পাঠক ও বোদ্ধা সমাজে আলোচনায় আসেন তিনি। এই উপন্যাসের সিক্যুয়াল 'মায়াবন্দি' এবং শিক্ষা ব্যবস্থাপনার দুর্দশা নিয়ে 'আলোর ডুব' উপন্যাস লিখে নির্মাণ করেন উপন্যাসের নতুন পথ। 'পথের শেষ নেই তবু পথে' নামে একটি কাব্যগ্রন্থও রয়েছে তার। জাতীয় দৈনিকে কলাম লেখার পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার হিসেবে রচনা করেছেন বেশ কিছু জনপ্রিয় গান। নাট্যকার এবং অভিনেতা হিসেবেও তার রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের মেঘনা তীরবর্তী তিতাস বিধৌত মরানদীর পূর্ব পাড়ে কাকরিয়া গ্রামে তার জন্ম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক মোসলেম উদ্দিন সাগরের সঙ্গে তার লেখালেখি নিয়ে কথা বলেছেন সিরাজুল ইসলাম

ঢাকাটাইমস: আপনি কেমন আছেন?

মোসলেম উদ্দিন সাগর: আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

ঢাকাটাইমস: আমিও ভালো আছি। আচ্ছা, আপনি আদর্শিক দর্শন ছড়িয়ে দিতে সরাসরি প্রবন্ধ না লিখে নতুন আঙ্গিকে উপন্যাসের আদলে তা লিখছেন। অনেকে বলছে আপনার উপন্যাস প্রবন্ধের মতো। এর কারণ কী বা আপনার দর্শনটা কী?

মোসলেম উদ্দিন সাগর: আসলে আমাদের দেশে মত প্রকাশের সিস্টেমের উন্নয়ন হয়নি, প্রবন্ধ লিখলে সরাসরি মত দিতে হয়, যা সহ্য করার শক্তি বা তা আমলে নেওয়ার মতো সংস্তৃতিটা নেই। উপন্যাসে চরিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়, এতে সরাসরি জায়গা থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখা যায়। আর দর্শন বলতে আমি বুঝি মানুষবোধ। এই দর্শনে আমার একটি চাওয়া আছে, সেটি হলো মানুষচরিত্রের মানুষ চাই।

ঢাকাটাইমস: এই দর্শনটা যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।

মোসলেম উদ্দিন সাগর: বলতে পারেন, সব মানুষের অনুভূতি এক, কিন্তু চরিত্র এক নয় কেন? মানুষ সৃষ্টিতে স্রষ্টার একটি উদ্দেশ্য আছে এবং মানুষের একটি আচরণিক মানদণ্ড আছে। কিন্তু বর্তমানে মানুষের সেই আচরণিক মানদণ্ড বিলুপ্তির পথে। এখন যদি প্রকুত মানবিক চরিত্রের মানুষ তৈরি করা না যায়, তাহলে মানুষ অবয়বের এই মানুষ বাহ্যিকভাবেও বিলুপ্ত হবে; চরিত্র তো কবেই জাদুঘরে গেছে। একমাত্র মানবিক চরিত্রের মানুষই পারে সব মানুষকে ধারণ করতে। এই চিন্তা থেকেই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ঢাকাটাইমস: প্রত্যেক সৃজনশীল মানুষেরই কি নিজস্ব দর্শন থাকে?

মোসলেম উদ্দিন সাগর: প্রত্যেকেরই একটা পজিটিভ দর্শন থাকা উচিত। আর নিজের সুন্দর ও কল্যাণের দর্শন ছাড়া মহাকালও তা গ্রহণ করবে না।

ঢাকাটাইমস: শুনেছি আপনার কথা ও সুরে একটি অ্যালবাম বের হয়েছিল। আপনি গান লেখা নাকি সুর করাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন?

মোসলেম উদ্দিন সাগর: দেখুন, সঙ্গীত এক মহাসমুদ্র। সেখানে সঙ্গীতের গ্রামারের পাশাপাশি সৃষ্টির জন্য মহা সাধনার প্রয়োজন। আমার তেমন কিছু নেই। আমি গান লিখতে জানি কি না জানি না। বাতাসে নানা সুর ভেসে এসে কানে প্রবেশ করে, যার অনুভূতি আমি শব্দে প্রকাশ করি। আমার চলার পথ, দেখার চোখ আর ওই যে মানুষবোধের হাহাকার- এগুলোই আমার গান লেখার সম্পদ। আর যে সুরগুলো বাতাসে কানে আসে তাকে শুধু তালে ফেলি, এর বেশি আমি কিছু জানি না।

ঢাকাটাইমস: এত বিচিত্র লেখার উপাদান কোথায় পান?

মোসলেম উদ্দিন সাগর: ওই যে বললাম, কে যেন কানের কাছে, চোখের কাছে, চিন্তার কাছে ঠেলে দেয় উপাদান। কিছুটা অনুভব থেকে বলা যায়- আমার জন্মস্থান, আমার বাবা-মায়ের মুখ, মানুষের আহাজারি, আমার গ্রাম, আমার শৈশব-কৈশোর প্রতিনিয়ত নানা কথা, নানা চিত্র ও নানা সুর জীবনবাঁকের প্রসঙ্গ নিয়ে আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়।

ঢাকাটাইমস: সময়কে ধারণ করতে লেখক বিশেষ করে নতুনদের করণীয় কী? মোসলেম উদ্দিন সাগর: দেখুন সৃষ্টির রাস্তায় নতুন বলতে কিছু নেই। অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়, সৃজনশীলতা অর্জনের বিষয় নয়। যদি কেউ নতুন সৃষ্টি করে, তবেই তারা সময়ের সাথে থাকবে। সেজন্য পড়া, দেখা এবং ভাবনাকে প্রসারিত করতে হবে। এর বিকল্প নেই।

ঢাকাটাইমস: ধন্যবাদ আপনাকে।

মোসলেম উদ্দিন সাগর: আপনাকেও ধন্যবাদ।

(ঢাকা টাইমস/০৩মার্চ/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বগুড়ায় দুর্বৃত্ত‌দের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
সুষ্ঠু-সুন্দর পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে: শিক্ষা উপদেষ্টা
সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ মাদক
আড়াইশ’র আগেই অলআউট বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা