কণা আবিষ্কারের গল্প

প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা আধুনিক বিজ্ঞানের সুতিকাগার। সেই সময় সেখানকার মানুষের ধারণা ছিল মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন এই চারটি বস্তু দিয়েই আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি। অর্থাৎ এই বস্তুগুলিই মৌলিক পদার্থ। কিন্তু খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ আব্দে ভারতীয় দার্শনিক কণাদ সর্বপ্রথম অবিভাজ্য কণার ধারণা দেন। তার মতে, অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব অবিভাজ্য কণা দিয়েই পৃথিবীর সকল বস্তু গঠিত। কণাদের সেই তত্ত্ব গ্রীকদেশে প্রতিষ্ঠিত করেন আরেক মহান দার্শনিক ডেমোক্রিটাস। তিনি কণাদের সেই অবিভাজ্য কণার নাম দিলেন অ্যাটম। গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল। তিনি গ্রীকবাসীদের কাছে দেবতুল্য হয়ে ওঠেন। তাঁর কথা সাধারণ মানুষ থেকে রাজা-মহারাজারা পর্যন্ত একবাক্যে বিশ্বাস করত। অ্যারিস্টোটলের বিশ্বাস ছিল, মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন তত্ত্বের পক্ষে। তাই কণাদ আর ডেমেক্রিটাসের এটম বা পরমাণু তত্ত্ব ধামাচাপা পড়ে যায়।
(ডেমেক্রিটাস)
এরপর কেটে যায় প্রায় দুহাজার বছর। ১৮০৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডালটন আবার সামনে নিয়ে আসেন পরমাণু তত্ত্ব। তিনি মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ গঠণের ‘পরামাণুবাদ’ নামে একটা যুগান্তকারী মডেল দাঁড় করান। এই মতবাদ বলা প্রত্যেক পদার্থ পরমাণু নামের বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি। এসব কণাকে আর ভাগ করা যায় না। ডালটন মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম দিলেন ‘মৌলিক পরমাণু’ এবং যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম ‘যৌগিক পরমাণু’। (বিজ্ঞানী জন ডালটন)
ডালটনের পরমাণুবাদ তত্ত্বে স্পষ্ট একটা গরমিল রয়েছে। এ তত্ত্ব মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে কোনো পার্থক্য তৈরি করতে পারেনি। এর সমাধানে এগিয়ে এলেন অ্যাভোগেড্রো নামের আরেক বৈজ্ঞানিক। তিনি বললেন, মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে ডালটনের পরমাণুবাদ তত্ত্ব ঠিক, কিন্তু যৌগিক পদার্থের ক্ষেত্রে পরমাণু ধারণাটা সঠিক নয়। তার মতে, দুই বা দুইয়ের অধিক মৌলিক পরমাণু যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থের একটা ক্ষুদ্রতম একক তৈরি হয়। এই একককে অণু বলে। আবার অণু মৌলিক পদার্থেরও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একই মৌলিক পদার্থের দুই বা তারচেয়ে বেশি পরমাণু যুক্ত হয়ে মৌলিক অণু গঠন করে।
(স্যার জে. জে টমসন)
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রায় শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল ডালটনের পরমাণুবাদ, অর্থাৎ ‘পরমাণুই পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা’ তত্ত্বটি। ১৮৯৭ সালে স্যার জে. জে টমসন টেলিভিশনের পিকচার টিউবের মতো একটা ক্ষরণনলে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে গিয়ে দেখলেন, টিউবের টকটকে লাল ধাতব উত্তপ্ত ফিলামেন্ট থেকে নেগেটিভ চার্জযুক্ত একধরনের কণা নির্গত হচ্ছে। এর ভর পরীক্ষা করে দেখা গেল, এই কণা সবচেয়ে হালকা মৌল হাইড্রোজেনের পরমাণুর ভরের চেয়েও একহাজার গুণ হালকা। এই কণাগুলির নির্গমণ পথে ফসফরাস মাখানো পর্দায় রেখে দেখা গেলো, এরা পর্দার ওপর আলোর ঝলক সৃষ্টি করতে পারে। এতো হালকা কণার দেখা প্রকৃতিতে মেলা সম্ভব নয়, তাই বিজ্ঞানীরা ভাবলেন হয়তো এটা পরমাণুর ভেতর থেকে নির্গত হয়। তাদের এই ধারণা দ্রুত প্রমাণিত হলো, আবিষ্কার হলো নতুন কণা ইলেক্ট্রন। নড়েচড়ে বসলেন বিজ্ঞানী মহল; তাহলে পরমাণুকেও ভাঙা যায়!
(ঢাকাটাইমস/৩সেপ্টেম্বর/এজেড)

মন্তব্য করুন