নাসিরনগরে হামলাকারীরা চিহ্নিত, বিচার হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু মন্দির ও বাড়িঘরে হামলাকারীরা চিহ্নিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেন, এই ঘটনার জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিচার করা হবে।
ঘটনার নয় দিন পর মঙ্গলবার নাসিরনগর উপজেলা সদরের আশুতোষ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠে এক সমাবেশে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
ফেইসবুকে কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবর নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর বেপরোয়া আক্রমণ করে দুর্বৃত্তরা। এরপর ওই এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হলেও শুক্রবার ভোরে আবার ছয়টি বাড়িতে আগুন লাগে। পরে ভিডিওচিত্র দেখে পুলিশ সন্দেহভাজন ৭০ জনেরও বেশি মানুষকে আটক করে। এরই মধ্যে কয়েকজনকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সহায়তাও দিয়েছে প্রশাসন।
এসব উদ্যোগে কিছুটা স্বস্তির মধ্যেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া গেলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জেলা পুলিশ আয়োজিত এই সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছে এবং এই তদন্ত হবে নিরপেক্ষ। তিনি বলেন, ‘আমরা জজ মিয়ার নাটক তৈরি করছি না। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মের নামে যারা মন্দিরে ভাঙচুর করেছে, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের বিচার করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রশাসন আছে। কারা নাসিরনগরে হামলা করেছে, আমরা চিনতে পেরেছি। হয়তো সময় লাগবে। তবে সবকিছুই বেরিয়ে আসবে।’
কারও ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর কেউ যদি আঘাত করে, তাদের আইসিটি আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও হুঁশিয়ারি করেন আসাদুজ্জামান।
সমাবেশ সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দজী মহারাজ, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন, খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সাজেদুর রহমান।
সভাপতির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বলেন, গত ৩০ অক্টোবর রোববার হামলার দিন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা থেকে ১৪টি ট্রাকে কারা লোক এনেছিল, তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। কারা টাকা দিয়ে এদেরকে এনেছে সেটাও খুঁজে বের করতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, তার উপজেলায় হামলা চালানো হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা চায়, আমি যেন জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাজনীতি থেকে সরে যাই, আমি যেন মনে যাই। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি কখনো এ আসন থেকে পাস করেনি। আল্লাহ সহায় থাকলে রাজনীতির মাঠে থাকব।’
আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেন, ভিডিও চিত্র ও অন্যান্য প্রমাণের ভিত্তিতে দোষী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত তদন্তকাজ শেষ করে আদালতে সাক্ষীদের হাজির করা হবে।’
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরও খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তাদের নিশ্চিহ্ন করা হবে।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার জন্য সমাবেশে ক্ষমা চান চট্টগ্রাম রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, হামলার জন্য কারা ট্রাক ভাড়া করে দিয়েছে। কারা ছবি পোস্ট করেছে। কারা ছবি প্রিন্ট করেছে। তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আপনারা যত বড় রাজনীতিবিদ হোন না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ’
(ঢাকাটাইমস/৮অক্টোবর/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি)
মন্তব্য করুন