নাসিরনগরে বিয়ে করতে এসে কারাগারে মুরসালিন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের দাঁতমণ্ডল গ্রামের বাসিন্দা মুরসালিম। গত ৬ নভেম্বর বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে যান। ঢাকার সিদ্দিকবাজারে ব্যাগের ব্যবসা করেন এই যুবক।
বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে বড় তিনি। বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক ছিল ৭ নভেম্বর। সেই হিসাব মাথায় রেখে বাড়ি যান মুরসালিন। কিন্তু বিধি বাম। সব হিসাবে পাল্টে দিয়ে ৭ নভেম্বর ভোরে ঘুম থেকে মুরসালিনকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তাতে স্বপ্ন ভাঙে মুরসালিনের মতো হবু কনেরও।
পরে পুলিশ জানিয়েছে, মুরসালিনকে নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের মন্দিরে হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
মুরসালিনের ভাই আল আমিন নাসিরনগর বাজারে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদককে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের কোনো অপরাধ ছিল না। সে বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু বিয়ে তো হলোই না, উল্টো তাকে জেলে যেতে হলো। এ কেমন আইনি ব্যবস্থা! এ কেমন নিয়তি!’
আক্ষেপ করে আল আমিন বলেন, ‘আমার ভাই ঘটনার দিন এলাকায় ছিলেন না। তিনি ছিলেন ঢাকার কর্মস্থলে। আর তাকেই কি না গ্রেপ্তার করা হলো। অথচ আসল হোতাদের কোনো খবর নেই।’
নাসিরনগরের ঘটনায় মুরসালিনের মতো আরও অনেক সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই ঘটনার দিন এলাকায় ছিলেন না।
নাসিরনগরের ধনকুণ্ডা গ্রামের নুর আলম। অটোরিকশার মেকানিক তিনি। শ্রীঘরে শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে।
নুর আলমের ভাই শওকত ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমার ভাই ওই দিন নাসিরনগরেই ছিলেন না। তিনি কী করে হামলা করেন। তাকে কেন পুলিশ গ্রেপ্তার করল, এর কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না।’
গ্রেপ্তারের ভয়ে এলাকায় রাতে কোনো পুরুষ মানুষ ঘরে থাকেন না। ভয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ান তারা। পুরো নাসিরনগরে চলছে গ্রেপ্তার আতঙ্ক।
তবে স্থানীয় এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হক বারবার বলেছেন, মন্দিরে হামলার সঙ্গে নাসিরনগরের কেউ জড়িত নয়। মাধবপুর থেকে ১৪টি ট্রাকে করে হাফপ্যান্ট পরা নাবালক ছেলেপুলে এসে হামলা করেছে। তিনি প্রকাশ্যে তাদের ধরার আহ্বান জানিয়েছেন একাধিকবার।
ফেসবুকে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ৩০ অক্টোবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ১৫টি মন্দির ভাঙা হয়; ভাঙচুর-লুটপাট করা হয় হিন্দুদের শতাধিক ঘরবাড়ি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসির উপস্থিতিতে সমাবেশে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের পর ওই হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এর পাঁচ দিনের মাথায় একই এলাকায় কয়েকটি বাড়ি ও মন্দিরে আগুন দেওয়া হয়।
এসব ঘটনার দায়ভার মাথায় নিয়ে স্থানীয় এমপি মৎস্যমন্ত্রী ছায়েদুল হকের পদত্যাগ দাবি করে শাহবাগে বিক্ষোভ অবরোধ করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা।
(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/মোআ)
মন্তব্য করুন