২০১৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি ভালো অবস্থানে থাকবে

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
 | প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৩০

আগামী ২০১৯ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কয়েকটি প্রস্তাব জনসম্মুখে তুলে ধরেছেনl বিএনপি নেত্রীর রাখা এই প্রস্তাবগুলোর পক্ষে বিপক্ষে চলছে এখন আলোচনা সমালোচনাl এভাবেই হয়তো আর কিছুদিন চলবেl তারপর কী হবে বা কী হতে পারে তা এই মুহূর্তে বলা কঠিনl তবে বিএনপির দেওয়া এই দাবিগুলোকে সরকার হয়তো ততটা আমল দিবে বলে মনে হয় না।

ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রস্তাবগুলো হাস্যকর বলে উড়িয়ে দিয়েছেনl এদিকে আসছে ফেব্রুয়ারিতে রাষ্ট্রপতি নুতন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের সদস্যদের নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। এই কারণেই সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকার না বলে অনেকটা একই ধরণের একটি নিরপেক্ষ সরকারের পরিচালনায় নির্বাচনের দাবিও জানিয়েছে।

একটি শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন, সুষ্ঠু নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই বেগম খালেদা জিয়া এই দাবিগুলো জানিয়েছেন। এখন মানা না মানা সরকারের উপর নির্ভর করছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পরবর্তীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিতে ক্ষমতাসীন কোনো সরকারই এধরনের উদারতা কখনো দেখায়নি। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এর ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং বর্তমান সরকার যদি দাবিগুলোর পক্ষে এগিয়ে আসে তাহলে তা হবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক বিরল ইতিহাস।

নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সংবিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির প্রধানসহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ দিবেন রাষ্ট্রপতি। বিগত নির্বাচনে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে নির্বাচন বয়কট করে। দেশের বর্তমান সংসদে বিএনপির কোনো আসন নেই। দলের অবস্থা আগের মতো এতো শক্ত নয়। সুতরাং সংসদের বাইরে থেকে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির তাদের এই দাবির প্রতি কতটুকু জনসমর্থন আনতে পারবে বলা কঠিন।

অন্যদিকে বিএনপির এই দাবিগুলোর প্রতি সরকার আদৌ কোনো উৎসাহিত হবে বলে মনে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে হলে বিএনপি ভবিষ্যতে তাহলে কোন পথ বেছে নেবে? আবারো কি অতীতের মতো রাজপথে আন্দোলনে নামবে? আবারো কি দাবি না মানলে নির্বাচন বয়কট করবে? আবারো কি জামায়াতসহ শরিক দলগুলো নিয়ে জ্বালাও পোড়াও আর হরতালের রাজনীতি শুরু করবে?

এখানে উল্লেখ যে সবসময়ই বিরোধী দলগুলো সরকারের কাছে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু ক্ষমতায় এসে পর্যায়ক্রমে তাদের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটে। এ পর্যন্ত ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের কোনোটিই নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে কোনো আইন প্রণয়ন করেনি। ভবিষ্যতেও যে হবে সে ধরনের কোনো আলোর রশ্নি এখনো লক্ষণীয় নয়। একটানা দুইবার ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে এখন পর্যন্ত কোনো সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না। ইতিমধ্যে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, এ ব্যাপারে আইন প্রণয়নের কোনো দরকার আছে বলে তিনি মনে করেন না। কমিশন গঠনের দায়িত্ব মহামান্য রাষ্ট্রপতির। রাষ্ট্রপতি সংবিধান অনুযায়ী উদ্যোগ নেবেন। এ বিষয়ে বিতর্ক থাকার কোনো অবকাশ নেই।

জাতীয় সংসদের বাহিরে থেকে বিরোধী দলে অবস্থান করে এখন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছেন। অথচ তিনি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন কি ধরনের নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন একথা জনগণ এখনো ভুলেনি।

ওই সময় সামরিক বাহিনী সমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকার ক্ষমতা গ্রহণ না করলে দেশ এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হতো। সেনাবাহিনী সমর্থিত ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকার সেদিন দেশকে এক মহাবিপদ থেকে রক্ষা করেছিল। সুতরাং খালেদা জিয়ার এই প্রস্তাবগুলো সরকারের কাছে এখন কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে হয় না। বিএনপি তাহলে করবে কি? নির্বাচনে যাবে না আবারো নির্বাচন বয়কট করবে? বাংলাদেশের আইন অনুসারে কোনো রাজনৈতিক দল পর পর দুইবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে দলের নিবন্ধন বাতিল করার সুযোগ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ তত্বাবধায়ক সরকার বলুন কিংবা অন্য কোনো নামে নিরপেক্ষ সরকার বলুন কোনোটাই মানবে না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় থেকেই নির্বাচন দেবে। বিএনপি নির্বাচনে আসুক আর না আসুক তাতে সরকারের কোনো যায় আসে না।

এদিকে যুদ্ধাপরাধীর দল বলে পরিচিত জামায়াতের অবস্থা এখন অত্যন্ত দুর্বল। তাদের অনেক প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য নেতারা গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যকলাপ বর্তমানে শুধু মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ বলা চলে। এছাড়া এখন পর্যন্ত দলটিকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। আগামী নির্বাচনের আগে জামায়াতকে সরকার নিষিদ্ধও করতে পারে। এমন অবস্থায় বিএনপি জোটের অন্যান্য ছোটোখাটো শরিক দলগুলোকে সাথে নিয়ে তেমন কিছু একটা বড় আন্দোলন করতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে।

তাহলে বিএনপি যাবে কোথায় ? এমন প্রশ্ন আজ অনেকের কাছেই। পর্যবেক্ষক মহলের মতে বেগম খালেদা জিয়া দাবিগুলো দিলেও শেষ পর্যন্ত তাকে সেখান থেকে সরে আসতেই হবে। অর্থাৎ ২০১৯ নির্বাচনে বিএনপিকে অংশগ্রহণ করতেই হবে। এছাড়া দলটির আর কোনো পথ নেই। দলের পক্ষে একটা জনমত সৃষ্টির জন্যই মূলত বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দাবিগুলো উত্থাপন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গত নির্বাচনে বিএনপি আসেনি, এটা খালেদা জিয়া ও তার দলের সিদ্ধান্ত। আজকে তারা সংসদের বিরোধী দলও না। তাদের নির্বাচনে না আসার দায় বাংলাদেশের মানুষ কেন নেবে? এধরণের উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু আভাস পাওয়া যায় তাতে মনে করা হচ্ছে ২০১৯ নির্বাচনে বিএনপির আসা না আসা সরকারের কাছে এখন আর গুরুত্ব রাখে না। বিএনপি ও তাদের শরিক দলগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও নির্বাচন হবে। অনেকে বলছেন বেগম খালেদা জিয়া শুধুমাত্র ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এ ধরনের প্রস্তাব দিচ্ছেন গণতন্ত্রের জন্য নয়। তিনি ক্ষমতায় থাকতে যা করেননি এখন সে ধরনের দাবি রাখা কোনোদিনও যুক্তিসঙ্গত হতে পারে না। তিনি নিজে না করে কেমন করে আশা করতে পারেন বর্তমান সরকার তার দাবি মানবে?

এদিকে প্রবীণ আইনজীবী রফিক উল হক বলেছেন "খালেদা জিয়া তাঁর জন্মদিন জুন থেকে ১৫ আগস্ট করলেন কার বুদ্ধিতে? যিনি জন্মদিন বদলে ফেলেন, তিনি কি করে দেশের প্রাইম মিনিস্টার হবেন? সত্য কথা বলতে, আমি মনে করি না যে আমরা একটা সভ্য দেশে আছি। যেভাবে আমরা বিহেভ করছি, কোনো সভ্য দেশে তা করে না"। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ একটানা ১০ বৎসর ক্ষমতায় থাকার কারণে দলটি সারা দেশে এখন এক বিরাট প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পেয়েছে।

ফলে সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে দলটির সৃষ্টি, জিয়ার স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন ভূমিকা, হাওয়া ভবনের দুর্নীতি, খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে মিথ্যা জন্মদিন পালন, তারেক রহমানের দুর্নীতিসহ নানা নেতিবাচক ইতিহাস জনসম্মুখে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেl বিএনপির জন্য এ ধরনের প্রচার দল ও দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিপক্ষে ক্ষতি করেছে। এই কারণেই সম্ভবত ২০১৬ বেগম খালেদা জিয়া আগের মতো এতো ধুমধাম করে ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন পালন করেননি। অনেকেই বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেনl যেভাবেই হউক, যার পরামর্শেই হউক খালেদা জিয়া তার জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে ১৫ আগস্ট নির্ধারণ করা জন্য ছিল মারাত্বক ভুল সিদ্ধান্ত। এছাড়া জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ আরো কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয় রয়েছে যা থেকে বিএনপিকে ভবিষ্যতে সরে আসতে হবে।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন আগামী ২০১৯ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে। দলকে রক্ষা করতে হলে বিএনপির এছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। সরকার বিষয়টি ভালো করেই অবহিত আছেl এমতাবস্থায় খালেদা জিয়ার দাবিগুলো সরকারের কাছে আদৌ কোনো গুরুত্ব পাবে না।

কিছু সংখক বুদ্ধিজীবী টেলিভিশনের টক শো তে খালেদা জিয়ার উপস্থাপিত দাবিগুলোর পক্ষে বিপক্ষে কথা বললেও বলতে পারেনl কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না। শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থেকেই অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ নির্বাচন। তবে সরকার নির্বাচনের পূর্বে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একটা পরিবর্তন আনলেও আনতে পারেন। এই পরিবর্তন আনা আর না আনা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর।

আগামী নির্বাচনে কোনো কারণে জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে দলটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিতের দিকে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে দল থেকে বের হয়ে ডানপন্থি রাজনৈতিক গোষ্ঠী ভিন্ন নামে একটি নুতন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে নির্বাচনে যোগ দিতে পারে। এ ধরনের কিছু একটা ঘটলে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া কিংবা তারেক রহমানের নামে থাকা বিএনপি কতটুকু শক্ত অবস্থানে থাকবে বলা কঠিন।

জিয়া-খালেদা-তারেকের-বিএনপি থাকা না থাকা নির্ভর করবে ২০১৯ নির্বাচনে অংশগ্রহণের উপর। বেগম খালেদা জিয়া নিজেও বিষয়টি ভালো করেই জানেন। এই কারণে এখন থেকে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করলেও শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। ২০১৯ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে ক্ষমতায় যেতে না পারলেও সংসদে ভালো অবস্থানে থাকবে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

লেখক: নির্বাচিত কাউন্টি কাউন্সিলার স্টকহোল্ম কাউন্টি কাউন্সিল

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :