ওম বিলাতে শীতবস্ত্রের পসরা বসেছে ফুটপাতে
রাজধানীতে এখনো জেঁকে বসেনি শীত। তবে ওম বিলাতে ফুটপাতে জমে উঠেছে শীতের বাজার। রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতে নানা রকম শীতপোশাকের পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। বেচাবিক্রি পুরোদমে শুরু না হলেও ক্রেতার আনাগোনা একেবারে কম না। শীতে ওম পেতে কেউ কিনছেন সুইটার, জ্যাকেট কিংবা হুডি। কেউ চাদর কিংবা কম্বল বেছে নিচ্ছেন।
নিউমার্কেট, গাউছিয়া , ফার্মগেট, গুলিস্তান, মতিঝিল এলাকা ঘুরে এমনই চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকার দোকগুলোতে ছোট-বড় সবার জন্য সব ধরনের শীতবস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে।
অধিকাংশ দোকানি ক্রেতাদের পোশাকের গুণাগুণ তুলে ধরতে গিয়ে দাবি করে, তাদের অনেক পণ্য বিদেশি, বিশেষ করে চীন, কোরিয়া কিংবা ভারতের। জ্যাকেট, কম্বল আর ছোটদের পোশাকের ক্ষেত্রে এটা বেশি ঘটে।
মতিঝিলের সোনালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাত থেকে ছেলের জন্য জ্যাকেট কিনছিলেন জামসেদ আলম। দোকাননি বড় মুখে তাকে বলেন- ‘চায়না জিনিস স্যার। আপনার ছেলেকে মানাবে।’ জামসেদ আলমও কম যান না। বলেন, ‘চায়না বেশি দিন যায় না। তা দাম কত?’ দোকানদার ৬০০ টাকা দাম চাইলেন। ছেলের পছন্দ না হওয়ায় কিনলেন না জামসেদ।
দোকানদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ঢাকাতে এখনো তেমন শীত না পড়ায় পুরোপুরি জমে ওঠেনি বেচাকেনা। শীত বাড়লে বিক্রিও বাড়বে। তার দোকানে চায়না জ্যাকেট, উলের জ্যাকেট ও সোয়েটার বিক্রি হয়। আকারভেদে প্রতিটির দাম ২০০ থেকে ৬০০ টাকা।
শাপলা চত্বরের সামনের ফুটপাতে দেখা গেল রেক্সিনের জ্যাকেট বিক্রি করছেন এক দোকানি। দাম জানতে চাইলে তিনি জানান দুই হাজার থেকে ২৬০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে এ জ্যাকেট। রেক্সিনের হলেও দেখতে চামড়ার মতো জ্যাকেটগুলো।
এক ক্রেতা ঢাকাটাইমসকে বলেন, দাম একটু বেশি হলেও জ্যাকটগুলো আনেক দিন পরা যায়। আর দেখতেও স্মার্ট লাগে।
নিউমার্কেট এলাকায় বাচ্চাদের শীতের পোশাক বেশি বিক্রি হতে দেখা গেল। নাজমা আক্তার নামের একজন ক্রেতা কিনলেন দুটি জ্যাকেট। তিনি বলেন, ‘শীত চলে এসেছে। বাচ্চাদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছি। কাপড় পছন্দ হয় তো দামে মিলে না। দামে মিলে তো কাপড় পছন্দ হয় ন। শেষমেশ দুটি জ্যাকেট পছন্দ হলো, দামেও মিলে গেল।’
রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া ঘুরে দেখা গেছে ফুটপাতগুলোতে বিক্রেতাদের নানা রকম হাঁকডাক। কোথাও কোথাও তালে তালে ক্রেতাদের আকর্ষণ করছে- দেইখ্যা লন, বাইছ্যা লন, একদাম, এক রেট, এক শ, দেড় শ, তিন শ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে সোয়েটার, জ্যাকেট, চাদর, কানটুপি, হাতমোজা, পা মোজাসহ শীতের নানা পণ্য। সোয়েটারের দাম পড়ছে ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকা। ফুলহাতা গেঞ্জি ৭০ থেকে ১২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কম্বল পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে দুই হাজার টাকায়।
গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকার ফুটপাতজুড়ে স্যুট-ব্লেজারের দোকান। এখানে নুতন ও পুরনো দুই রকমের স্যুট-ব্লেজার পাওয়া যায়। পুরনো ব্লেজার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। আর নতুনগুলো ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
তবে প্রতিটি ফুটপাতেই দেখা গেল হুডি গেঞ্জি বিক্রি হতে। বিক্রেতারা জানান, এবার হুডি গেঞ্জি ও শার্ট ভালো চলছে। মানভেদে দাম পড়ছে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা।
ফার্মগেট ফুটপাতের শীতবস্ত্র বিক্রেতা শফিউল বলেন, ডিসেম্বরের শুরু থেকেই ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে ক্রেতারা বেশি দরদাম করে বলে জানান তিনি।
অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ শীতের পোশাকের দাম বেশি হাঁকছে দোকানিরা।
শীতবস্ত্রের দোকানগুলোর সামনে যাদের দেখা যায়, তাদের অনেকেই এসেছেন বাজার ঘুরে দেখার জন্য। নতুন ফ্যাশন, কেমন পোশাক, কী ধরন এবার শীতপোশাকে, তাই যাচাই করছেন তারা।
এমনই একজন হেমায়েত হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখনো সেভাবে শীত পড়েনি। পরিবারের সবার জন্যই শীতের কাপড় কিনতে হবে। কোথায় কেমন দাম, নতুন কী ফ্যাশন এল এগুলো ঘুরে দেখছি।’ বছরের প্রথম দিন পরিবারের সদস্যদের শীতের পোশাক কিনে দেবেন বলে জানান তিনি।
ষড়ঋতুর হিসেবে শীত আসতে বাকি আর এক সপ্তাহ। পৌষ ও মাঘ মাস শীতকাল। সপ্তাহ খানেক পরই অগ্রহায়ণ বিদায় নিয়ে শুরু হবে শীতের প্রথম মাস পৌষের। শীতের প্রস্তুতি সারতে তাই আগেভাগেই কিনে রাখছে নিজের পোশাকটি। নইলে শীত যত বেশি পড়বে, শীতের ওম নিতে পোশাকের দামও তত বেশি গুনতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১০ডিসেম্বর/জেআর/মোআ)