হিমুগিরি

তায়েব মিল্লাত হোসেন
| আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০৮ | প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:৩৫

হিমালয় দেখিনি। হিমুকে দেখেছি মানে পড়েছি। আর পড়া থেকেই তো কল্পনার রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো। চরিত্রের চেহারাপত্র, আলাপ-সালাপ ভেসে ভেসে আসা। তার সঙ্গে বাস্তব মেলালে কেন যেন এখনো হালের সংস্কৃতিমন্ত্রী তথা আসাদুজ্জামান নূর ছাড়া হিমু হিসেবে আর কারো কথা ভাবতেই পারি না।

বছর কয়েক আগে যখন মোটা মতোন এক যুবককে নির্বাচিত করা হলো, বিষয়টি আমার চোখের জন্য অসহনীয় ছিল। মন সায় দিতেই পারছিল না কিছুতেই। হিমুর গড়ন-ধরনের বিষয়ে একটু আলাপ দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে। সুদর্শন নন, তবে চোখ আর হাসি মনকাড়া। চুল, দাড়ি প্রায় সময়ই বড় বড়। পদযুগলে জুতোর কোনো বালাই নেই। গায়ে হলুদ রঙের পাঞ্জাবি। এর আবার পকেট থাকে না। এ বিষয়টা জনপ্রিয় হলেও পকেট কিন্তু মেলেও। পকেট খুঁজতে চলুন হিমুর সঙ্গে এষার সাক্ষাৎ পর্ব একটু পাঠ করি।

‘কি নাম বললেন আপনার, হিমু?’

‘জি, হিমু।’

‘হিম থেকে হিমু?’

‘জি-না, হিমালয় থেকে হিমু। আমার ভালো নাম হিমালয়।’

‘ঠাট্টা করছেন?’

‘না, ঠাট্টা করছি না।’

আমি পাঞ্জাবির পকেট থেকে ম্যাট্রিক সার্টিফিকেট বের করে এগিয়ে দিলাম।

হাসিমুখে বললাম, সার্টিফিকেটে লেখা আছে। দেখুন।

এষা হতভম্ব হয়ে বলল, আপনি কি সার্টিফিকেট পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়ান?

‘জি, সার্টিফিকেটটা পকেটেই রাখি। হিমালয় নাম বললে অনেকেই বিশ্বাস করে না, তখন সার্টিফিকেট দেখাই। ওরা তখন বড় ধরনের ঝাঁকি খায়।’

হুমায়ূন আহমেদের হিমু আমাদের তরুণদের বড় এক ঝাঁকুনি দিয়ে গেছে। আমরা রিকশায় বৃষ্টিতে ভিজতে শিখেছি, কদম ফুলের গন্ধ নেয়া শিখেছি, জোসনা দেখার চোখ তৈরি করেছি, আমাদের কল্পনার জগতে শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি আনতে পেরেছি। যাপনের রাবিন্দ্রীক শৈলী ব্যবহারিক জীবনে হাজির হয়েছে এভাবে। যা হোক হিমুতে মজা আর মজা আছে। মজার ছলেই নিজের লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যায় হিমু। আমরা তাতেই ফিরে যাই। তবে বইয়ে নয়। পরাবাস্তবের মতো কিন্তু বাস্তব ঘটনায়।

ক্যাটক্যাটা হলুদ শার্ট গায়ে রাজিব চুপচাপ ক্যান্টিনে খাচ্ছেন। তার জনৈক সহকর্মী আবার কিছু মনে রাখতে পারেন না। তিনি রাজিবকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী মিয়া হলুদ কালারের শার্ট গায়ে ক্যান্?’

‘আজ আমার বসের জন্মদিন।’

‘বসকে বশ্ করার বুদ্ধি বুঝি?’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন সেই সহকর্মীর মাথায় নেই। খানিক পরে হিমুর হলুদ পাঞ্জাবি আর রাজিবের শার্টের রঙের তুলনামূলক বিশ্লেষণ শুরু হলো। রাজিবের সহকর্মী হলুদ শার্ট আর বসের জন্মদিনের বিষয়টি স্পষ্ট হলেন।

এভাবেই হুমায়ূন আর হিমু একাকার। একজন অন্যজনকে ক্রমাগত ছাপিয়ে যান। হিমুগিরি করতেই হুমায়ূন পাঠকদের একটি সংঘ গড়ে তুলেছেন অনুজ প্রতিম তুষার। নাম, হিমু পরিবহন। এই পরিবহনেই অনন্য, অন্যদের চেয়ে আলাদা হুমায়ূন আহমেদ। তো বাড়তে থাকুক, বাড়তেই থাকুক, এগিয়ে যাক এই হিমুগিরি!

সাপ্তাহিক এই সময়; ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

তায়েব মিল্লাত হোসেন : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :