ব্লগার রাজীব হত্যার আপিলের রায় ২ এপ্রিল
গণজাগরণের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ২ এপ্রিল এই মামলায় রায়ের দিন ঠিক করেছে হাইকোর্ট। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ কথা জানায়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির। আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন মোশারফ হোসেন কাজল।
গত ৯ জানুয়ারি রাজীব হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে আদালত। গত বছরের ৭ নভেম্বর হাইকোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজীব হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে জঙ্গি সংগঠন আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের দুই সদস্যের মৃত্যুদণ্ড, একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং পাঁচ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এই রায়ের পর মামলার নথিপত্র ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি হাইকোর্টে আসে। পরে প্রধান বিচারপতি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার পেপারবুক প্রস্তুতের নির্দেশ দেন। গত বছরের ৩১ অক্টোবর মামলাটি শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় উঠে। গত বছরের ৭ নভেম্বর হাইকোর্টে এ মামলার শুনানি শুরু হয়।
বিচারিক আদালতের রায়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র পলাতক রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসি দেন আদালত। ওই দুজনকে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মাকসুদুল হাসান অনিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
বাকি পাঁচজনের মধ্যে এহসান রেজা রুম্মান, নাঈম ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। আর আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের প্রধান মুফতি জসীমউদ্দিন রাহমানীকে পাঁচ বছরের আর সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক।
২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন শুরুর দশম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর পল্লবীতে নিজের বাসার সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় রাজীবকে। এঘটনায় রাজীবের বাবা নাজিম উদ্দিনের করা মামলার তদন্তে ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে উঠে আসে।
গত বছরের ২৮ জানুয়ারি আনসারউল্লাহর নেতা জসীমউদ্দিন রাহমানীসহ ওই আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। আর এবছরের ১৮ মার্চ তাদের সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, জসীমউদ্দিন রাহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুমার খুতবায় ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়া দিতেন। অন্য আসামিরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতেন। এভাবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়। জসীমউদ্দিনের লেখা বই পড়ে এবং সরাসরি তার বয়ান ও খুতবা শুনে বাকি আসামিরা ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ খুন করতে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত হন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লগার রাজীব খুন হন। রাহমানকে ওই হত্যাকাণ্ডে উৎসাহদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্লগার রাজীব হত্যার ধারাবাহিকতায় এর পরের দুই বছরে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সিলেট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০ জনেরও বেশি অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট খুন হয়েছেন। এই গুপ্তহত্যার জন্য উগ্রবাদীদেরকে দায়ী করা হচ্ছে। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কেবল রাজীব হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে বিচারিক আদালতে। বেশিরভাগ মামলার তদন্তও শেষ করা যায়নি। যদিও পুলশ জানিয়েছে, তারা রহস্য উদঘাটনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন।
(ঢাকাটাইমস/২৭ মার্চ/এমএবি/ডব্লিউবি)