অবৈধ বালু উত্তোলন: শিবপুরে ভাঙন আতঙ্কে গ্রামবাসী
নির্ঘুম রাত আর কর্মহীন দিন- এই নিয়ে সময় কাটে শিবপুর উপজেলার দুলালপুরের কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের। কারণ একটাই, থেমে নেই বালু ব্যবসায়ীদের অবাধে উত্তোলন। ফলে কার বাড়ি কখন দেবে যায়, এই আতঙ্কে দিন পার করছেন ওই ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিবপুর উপজেলায় দুলালপুর ইউনিয়নের মির্জাকান্দি, দত্তেরগাও, চন্ডিবরদী এলাকাসহ আরো কয়েকটি গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ফসলি জমি ও বাড়ি করার জায়গা; এমনকি কোথাও কোথাও বাড়ির পাশ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় একদিকে মারাত্মকভাবে ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে এক এক করে ভিটেহারা হচ্ছেন ওই সব গ্রামের মানুষ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দীর্ঘ প্রায় ১০-১৫ বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
অভিযোগ আছে, স্থানীয় প্রশাসনও তাদের হাতে। প্রায় শতাধিক ব্যক্তি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, প্রত্যেক বালু ব্যবসায়ী স্থানীয় রমিজ উদ্দিন মাস্টারের নিকট প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা মাসোয়ারা দিচ্ছেন। এভাবেই সকল কিছু ম্যানেজ করে তারা অবৈধ বালু উত্তোলন করে আসছেন।
এ বিষয়ে রমিজ উদ্দিন মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তাকে পাওয়া যায়নি।
বালু ব্যবসায়ী শহিদুল্লা জানান, আমরা প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা রমিজ উদ্দিন মাস্টারের কাছে দিয়ে বালু উত্তোলন করছি। বালু উত্তোলন করার জন্য অনুমোদন নিয়েই আমরা বালু উত্তোলন করছি।
এলাকাবাসী জানায়, ফসলি জমি থেকে ইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে। অন্য দিকে এলাকার রাস্তাঘাট ও বাড়ি-ঘর ভেঙে স্থানীয় রাস্তাঘাট মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে যার জমি ভেঙে যাচ্ছে, তারাই আবার অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
দুলালপুর ইউপি চেয়ারম্যান মিঞা হোসেন নাজির বলেন, এলাকাবাসী আমার কাছে আবেদন জানালে আমি কিছু করতে পারি না। কারণ আমার তো আর পুলিশ নেই। এছাড়া এলাকাবাসী আবেদন নিয়ে আসলে আমি সুপারিশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়েছি।
স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, আমাদের বাড়ি-ঘর ভেঙে গেলেও তাদের কিছু আসে যায় না। আমরা বাড়ি ভাঙনের আতঙ্কে আছি।
শিবপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তফা মনোয়ার জানান, আমরা একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। জরিমানাও আদায় করেছি, কিন্তু এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল আর জনগণের অসচেতনতার কারণে তা বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মাহাবুব হাসান শাহীন ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি নতুন এসেছি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার বিষয়ে জানা নেই। তাছাড়া লিখিত অভিযোগও পাইনি। যেহেতু আপনার মাধ্যমে জেনেছি। জানার সাথে সাথেই শিবপুরের ইউএনওকে টেলিফোনে জেনে এর সত্যতা পেয়েছি। এখন এর দ্রুত ব্যবস্থা নেব।
(ঢাকাটাইমস/২২এপ্রিল/প্রতিনিধি/এলএ)
মন্তব্য করুন