প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে, লন্ডন অগ্নিকাণ্ডের সেই রাত
যুক্তরাজ্যের পশ্চিম লন্ডনের বহুতল ভবন গ্রিনফেল টাওয়ারে মঙ্গলবার রাতের মাত্র ১৫ মিনিটের আগুন তছনছ করে দিয়েছে শতাধিক পরিবার। মাত্র ১৫ মিনিটের সেই আগুন বাগে আনতে মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল গড়িয়ে যায়। অগ্নিকাণ্ডের জেরে ব্রিটেনে সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও পিছিয়েছে।
বহুতল ওই আবাসন থেকে যারা বেঁচে ফিরেছেন, তাদের মুখে একটাই কথা ‘দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে এলাম।’ লেলিহান শিখা থেকে মানুষকে উদ্ধার করে নিয়ে আসতে নেতৃত্ব দিয়েছেন, লন্ডনের দমকল বাহিনীর কমিশনার ড্যানি কটন বলেন, ‘২৯ বছরের ক্যারিয়ারে এমন অগ্নিকাণ্ড দেখিনি।’
ভয়াবহ আগুনের সঙ্গে কী ভাবে লড়াই করেছেন বাসিন্দারা, হাদিল আলামিলি চোখের সামনে দেখেছেন। তিনি জানান, ‘২৪ তলা থেকে ঝাঁপ দিলেন এক জন। তার আগে টর্চ নাড়িয়ে উদ্ধারকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।হেল্প হেল্প বলে চিৎকারও শুনতে পেয়েছি। কিন্তু তার কাছে পৌঁছতে পারেননি কেউ। তার পরে গোটা শরীরে আগুন নিয়েই ওপর থেকে ঝাঁপ। কেউ আবার গায়ে তোয়ালে, কেউ বা স্লিপিং স্যুট সে ভাবেই নেমে এসেছেন অনেকে।’
১১ তলার বাসিন্দা মৌনা এলোগবানি বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে নিজেও ঘুমাতে যাওয়ার জন্য তৈরি। রাত দেড়টা নাগাদ বন্ধুর ফোন: তোমাদের আবাসনে তো আগুন। শুনেই বাচ্চাদের তুলে নিয়ে দরজার দিকে এগোন মৌনা। দরজা খুলতেই আগুনের হলকা। ভয়ে আবার দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। গোটা বাড়ির একমাত্র আপৎকালীন সিঁড়ি ব্যবহার করে নামতে পেরেছেন তিনি।
২১ তলা থেকে নিজের ছয় সন্তানকে নিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করছিলেন আর এক মা। নিচে এসে দেখেন চার জন আছে। বাকি দুই সন্তানের হদিশ পাচ্ছেন না। মাত্র পনেরো মিনিটে আগুন এত আগ্রাসী হয়ে উঠবে বুঝে উঠতে পারেননি কেউ। দমকল আসার আগেই পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আগুনের আতঙ্কে হুড়োহুড়ির মধ্যে কে কোথায় ছিটকে গিয়েছেন জানেন না। যারা কোনওমতে বেঁচে গিয়েছেন, তাদেরও নিখোঁজ স্বজনদের কথা ভেবে উদ্বেগ কাটছে না।
নয় তলার বাসিন্দা হানান ওয়াহাবি। রাত একটা নাগাদ ধোঁয়ার গন্ধে ঘুম ভেঙে যায় তার। হানানের কথায়, ‘বসার ঘরের জানালা দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া ঢুকছে। উঠে গিয়ে বাইরে তাকাতেই বুঝলাম মারাত্মক অবস্থা। আমার জানালার পাশেই আগুনের ভয়াল আঁচ টের পেলাম। জানালা বন্ধ করে বাড়ির সবাইকে নিয়ে ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসি।’
তারপরেই মনে পড়ে ২১ তলায় রয়েছে তার ভাই। তখনও আগুন অত উপরে ওঠেনি। ভাইকে ফোন করে হানান বলেন, বেরিয়ে এসো। কিন্তু ভাই তাকে বলেন, মেঝেতে তোয়ালে বিছিয়ে এক ঘরে সবাইকে বসতে বলেছে দমকল কর্মীরা, তাই বেরোচ্ছি না। কিন্তু খুব ধোঁয়া। পরে একবার ভাই, তার স্ত্রী ছেলেমেয়েদের জানালা থেকে হাত নাড়তে দেখেছিলেন। তখন ঘড়িতে রাত দুইটা বাজে। তারপর থেকে আর ফোনে পাননি ভাইকে।
১৬ তলার বাসিন্দা আব্দুল হামিদ আগুনে হারিয়েছেন সব মূল্যবান কাগজ। তিনি বলেন, ‘কিছু নেই। সৌদি আরবে হজে যাব কী করে? পাসপোর্টটাই হারিয়ে গেল।’
১২০টি ফ্ল্যাটের আবাসনে এমন গল্প ঘরে ঘরে।
(ঢাকাটাইমস/১৫জুন/জেএস)