মেঝেতে ঘুমান মওদুদ!
আদালতের নির্দেশে বাড়ির মালিকানা হারানো বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ ফুটপাতে থাকবেন বলেও নিজের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন। এখন তিনি বলছেন, সেই ফ্ল্যাটে তিনি মেঝেতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন মওদুদ। তিনি বলেন,বাসা পাল্টানোর সময় রাজউকের কর্মীরা তার খাট ভেঙে ফেলেছে। আর এ কারণেই এই দুর্গতি তার।
মওদুদ বলেন, ‘আমার বাসার পুরনো কাঠমিস্ত্রি শংকর ভাঙা খাট মেরামত শুরু করেছে। মেরামত শেষ হলে খাটে ঘুমাতে পারবো। আপাতত মেঝেতে শুয়েই রাত কাট কাটছে আমার।’
গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বরের যে বাড়িতে মওদুদ গত তিন দশক বসবাস করেছেন, সেটি তার নয়। বাড়িটি ভুয়া দলিল করে দখল করার অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে উচ্চ আদালতে। গত ৪ জুন মওদুদের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তিনদিন পর সেই বাড়ি থেকে তাকে উচ্ছেদ করে রাজউকের দল। এরপর গুলশান-২ এই একটি ফ্ল্যাটে উঠেন মওদুদ। এটি দুই দশক আগেই তিনি কিনেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিন পর থেকে এক বিঘা ১৩ কাঠা জমির ওপর ওই বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করে আসছিলেন মওদুদ। বাড়িটি অবৈধভাবে দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে ২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর গুলশান থানায় মওদুদ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে এই মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ।
এই বাড়িটির প্রকৃত মালিক পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। ১৯৬০ সালে তৎকালীন ডিআইটির কাছ থেকে এহসান এ বাড়ির মালিকানা পান। ১৯৬৫ সালে বাড়ির মালিকানার কাগজপত্র এহসানের স্ত্রী অস্ট্রিয়ার নাগরিক ইনজে মারিয়া প্লাজের নামে নিবন্ধন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে এহসান স্ত্রীসহ ঢাকা ছেড়ে যান। তারা আর ফিরে না আসায় ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ওই বছরই মওদুদ এ বাড়ির দখল নেন।
ওই বছরই মওদুদ ওই বাড়ির দখল নেন। কিন্তু ইনজে মারিয়া প্লাজের মৃত্যুর পর ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে মওদুদের ভাই মনজুর আহমদের নামে ওই বাড়ির দখল নেওয়া হয়। যে তারিখে এই আমমোক্তার নামা করা হয়, তার আগেই মারিয়া মারা যান।
মামলায় হারার পর ৭ জুন মওদুদকে গুলশানের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময় তিনি সাংবাদিকদেরকে ফুটপাতে ঘুমানোর কথা বলেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি আর সেটি করেননি এবং তার ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠেন।
এরও আটদিন পর করা সংবাদ সম্মেলনে মওদুদ দাবি করেন, আদালতের রায়ের পরও রাজউকের উচ্ছেদ উচিত হয়নি। তিনি বলেন, ‘আইনের তোয়াক্কা না করেই চর দখলের মত সরকার আমার গুলশানের বাড়ি দখল করেছে। এটা সম্পূর্ণ মানবাধিকারের লঙ্ঘন।’ তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের কোথাও বলা হয়নি যে, ‘এই বাড়ি সরকার বা রাজউকের। আমার মনে হয়, আওয়ামী লীগের নেতারা আদালতের রায় না পড়েই কথা বলছেন।’
বাড়ির সাথে তার স্মৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাড়ি থেকে উচ্ছেদ বড় কথা নয়, যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে তাতে আমার বহুদিনের অনেক স্মৃতি হারিয়ে গেছে। আমাকে এক ধনাঢ্য লোকের উপহার দেয়া এক হাজার বছরের পুরনো মিশরীয় সভ্যতার মাটির বাটি খুঁজে পাচ্ছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আদালতের কোন আদেশ ছাড়া কোন বাড়ির দখলদারকে উচ্ছেদ করা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিনা নোটিশে এবং বিনা অনুমতিতে বাড়িতে জোরপূর্বকভাবে বাড়িতে প্রবেশ এবং ব্যারিস্টার মওদুদকে উচ্ছেদ করে সংবিধানের প্রদত্ত তার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাবেক স্পিকার জমির উদ্দিন সরকার, আইনজীবী আমিনুল হক, এ জে মোহাম্মদ আলী প্রমুখ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
(ঢাকাটাইমস/১৫ জুন/এমএবি/ডব্লিউবি)
মন্তব্য করুন