দিনাজপুর বড় ময়দানে ঈদ জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, দিনাজপুর
 | প্রকাশিত : ৩১ আগস্ট ২০১৭, ১৯:০৪

দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে এবার অনুষ্ঠিত হবে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল আজহার প্রধান জামাত। শনিবার ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৮টায় এ জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত সমন্বয় কমিটি।

এ নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ আদায়ের লক্ষে ইতোমধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

এ মাঠে ঈদুল ফিতরে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মুসল্লির সমাগমে অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত। উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ এই ঈদের জামাত কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করে। এবারও টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারের জন্য জেলা প্রশাসন দেশের সব কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল কর্তৃপক্ষকে পত্র দিয়েছেন।

এটা নিশ্চিত যে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ মাঠ, দিনাজপুরে। পুরো মাঠের মোট আয়তন ৭৮ একর। উপমহাদেশের সবচাইতে বড় ঈদগাহ মাঠ তৈরি করা হয়েছে উত্তরের জেলা দিনাজপুরে। প্রায় ৫ লাখ মুসল্লির একসঙ্গে নামাজ আদায় করার লক্ষ্য নিয়ে এবারের প্রস্তুতি।

একসঙ্গে এত লোক নামাজ আদায় করার মতো ঈদগাহ মাঠ উপমহাদেশে আর একটিও নেই! প্রায় ৫ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে যাতে ঈদের নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৫২ গম্বুজবিশিষ্ট মিনার। ঈদগাহ মিনারের মূল অংশ তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এই ৫২ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে ২টি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে এবং প্রধান মিনারের উচ্চতা ৫৫ ফুট। এই সব মিনার আর গম্বুজের প্রস্থ ৫১৬ ফুট।

দেশের সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক গোড়-এ-শহীদ ময়দানের পশ্চিম দিকের প্রায় অর্ধেক জায়গাজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই ঈদগাহ মিনারটি। প্রত্যেক গম্বুজে বৈদ্যুতিক বাতি সংযোগ দেয়া হয়েছে। মিনার দুটির উচ্চতা ৫০ ফিট, যে মেহেরাবে খতিব বয়ান করবেন সেটির উচ্চতা ৫০ ফুট। ৫২টি গম্বুজ ২০ ফুট উচ্চতায় স্থাপন করা হয়েছে। গেট দু’টির উচ্চতা ৩০ ফুট। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়, পরে তা ৬ মাস বর্ধিত করা হয়। এ কারণে ভেঙে ফেলা হচ্ছে শতবছরের স্টেশন ক্লাব। এজন্য প্রাথমিক পর্যায়ে ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ সুপার মো. হামিদুল আলম জানান, প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের ঈদের প্রধান জামাতকে কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঈদগাহের চারপাশে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশির পর জামাতে প্রবেশ করানো হবে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ সাদা পোশাকে ঈদগাহ প্রাঙ্গণে দায়িত্ব পালন করবেন। র‌্যাবসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার কর্মীরাও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সক্রিয় থাকবেন।

দিনাজপুরে তৈরি সবচেয়ে বড় ঈদগাহ মাঠ ঈদের জামাত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে করতে জেলা প্রশাসন ও দিনাজপুর পৌরসভা প্রশাসন পৃথক পৃথক সভা করেছেন। ওইসব সভা থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে জামাত শুরু হবে। দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের খতিব শামসুল ইসলাম কাশেমী বৃহত্তম ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, এই ঈদের জামাতে যাতে করে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটনা না হয় সেজন্য সব ধরনের নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা হবে।

জাতীয় সংসদের হুইপ ও স্থানীয় সংসদ সদস্য ইকবালুর রহিম জানান, শুধু বাংলাদেশে নয়, উপমহাদেশে এত বড় মিনার সম্বলিত ঈদগাহ মাঠ আর একটি নেই। এখানে প্রায় ৫ লাখ মানুষের ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকছে যা শোলাকিয়ার চেয়েও বড়। লোক সমাগম বৃদ্ধি করতে বিভিন্নস্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ এবার এই ঈদগাহ মাঠে লোক সমাগম অনেক বেশি হবে, যা ইতিহাস হয়ে থাকবে।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান মহারাজা প্রাণনাথের নামানুসারে প্রাণনাথপুর ও খামার ঝাড়বাড়ী মৌজায় এর অবস্থান। দ্বিতৃীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর উত্তর ফ্রন্টের বৃহৎ সমাবেশ এখানে ঘটেছিল বলে সি এস রেকর্ড এ ভারত সম্রাট পক্ষে মিলিটারি ডিপার্টমেন্টের নামে প্রায় ৬২ একর এবং ১৬ একর ভারত সম্রাট নামে প্রকাশিত হয়। ইংরেজ আমলে উত্তর দিকে নির্মিত হয় খাদ্য গুদাম। যা অবিভক্ত দিনাজপুরের খাদ্য গুদাম ছিল। এ মাঠের মাঝ ভাগে চেহেলগাজীর সমসাময়িক ইসলাম প্রচারক শাহ আমির উদ্দীন ঘুরী (রহ.) মাজার আছে- যিনি ঘোড়ায় চড়ে দিনাজপুরে ইসলাম প্রচার করেন এবং সেজন্য এ মাঠের নামকরণ হয় গোর এ শহীদ ময়দান। উনিশ শতকের মাঝামাঝি এখানে ইউরোপিয়ান সাহেবদের জন্য স্টেশন ক্লাব স্থাপিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় হতে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৬২ সালে এ মাঠে হেলিকাপ্টার সার্ভিসের জন্য হেলিপোর্ট নির্মিত হয়। দেশ স্বাধীনের পর জেলার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নির্মিত হয় এখানেই। ১৯৮৬ সালে এ মসজিদের পাশে তেভাগা আন্দোলনের নেতা দিনাজপুরের কৃতি সন্তান হাজী মোহাম্মদ দানেশ সমাহিত হন। কোম্পানি আমলে এ মাঠে ঘৌড় দৌড় অনুষ্ঠিত হতো এবং পাক আমলে নর নারায়ণ শিল্ড ফুটবল প্রতিযোগিতা হতো বলে জানা গেছে। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর ২০ ডিসেম্বর এ মাঠে দিনাজপুরে প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও অন্যতম সংবিধান প্রনেতা মরহুম এম.আব্দুর রহিম। ঐতিহাসিক এ মাঠের পশ্চিম পার্শ্বে রাজদের নির্মিত হয় জুলুম সাগর প্রসাদ, সার্কিট হাউজ এবং কালেক্টর বাসভবন যা দিনাজপুর ভবন নামে পরিচিত। সুতরাং ইতিহাস আর ধর্মীয় দিক থেকে সমৃদ্ধ এ মাঠ। দিনাজপুরের জিরো পয়েন্ট এটি। নির্মল বাতাস, খোলা আকাশ আর সবুজের সমারোহে দৃষ্টি নন্দন এটি পরিণত হয়েছে ‘লিভার অব দি টাউন’ হিসেবে। আর এ মাঠেই অনুষ্ঠিত হয়েছে ঈদুল ফিতরে এশিয়ার বৃহত্তম ঈদের জামাত।

এবারো ঈদুলল আজহা’য় হবে এশিয়ার বৃহত্তম জামাত। হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি’র নেতৃত্বে এর সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/৩১আগস্ট/এসএএস/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :