‘কিছু চামড়া নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছি, ব্যবসা ছেড়ে দেব’
কোরবানি ঈদের দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের বিপুল পরিমাণ পশুর চামড়া অবিক্রীত থাকা ও মূল্য বৃদ্ধি না হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বুধাইরকান্দি, সোনারামপুর, রুপুসদী, ফরদাবাদ, তেজখালী, আছাদনগর, উজানচরসহ বাঞ্ছারামপুর সদর উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, গত ২ সেপ্টেম্বর কোরবারির ঈদ অনুষ্ঠিত হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনো পাইকার ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জ থেকে চামড়া কিনতে আসেনি। ফলে, প্রতিদিন লবণ দিয়ে চামড়া আবাসিক এলাকাগুলোতে রাখায় পরিবেশ নষ্ট ও দুর্গন্ধের কারণে এলাকাবাসীর তোপের মুখে পানির দামে বা ‘যেন-তেন’ দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।
বৃহত্তর কুমিল্লার দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার মোকাম বাঞ্ছারামপুরস্থ বুধাইরকান্দির মেসার্স ছিদ্দিক লেদার হাউসে ঈদের দিন বিকাল থেকে অল্প পরিমাণে কাঁচা চামড়া আসা শুরু হলে গত শুক্রবার পর্যন্ত বিশাল পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা অবস্থায় মুজদ রয়েছে।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলেন, মূল্যবৃদ্ধির আশায় থেকে থেকে আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। গোঁদের উপর বিষফোঁড় হয়ে দেখা দিয়েছে লবণের মূল্য বৃদ্ধি।
জানা যায়, আড়তদাররা আকারভেদে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত দরে কাঁচা চামড়া কিনেছেন।
তবে মাঝারি আকারের চামড়ার মূল্য ৭০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে, সেগুলোই বেশি কিনছেন তারা। সংগৃহীত কাঁচা চামড়া কেনার পরপরই লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে লবণের দাম বেশি হওয়ায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে চামড়া ব্যবসায়ীদের। চামড়ার ক্রয়মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত সংরক্ষণ খরচ বহন করতে হচ্ছে তাদের। এসব চামড়া বিক্রির সময় লোকসানের ঝুঁকি পড়তে হলো ঈদের দুই সপ্তাহ পরও চামড়ার মূল্য বৃদ্ধি না পাওয়ায়।
বাঞ্ছারামপুর এর বুধাইরকান্দির প্রবীণ চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়ৎদার মো. ছিদ্দিকুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি এতোটাই লোকসান দিচ্ছি যে, মুখে বলা সম্ভব নয়। ১৫ দিন অপেক্ষা করে ঢাকা থেকে কোনো চামড়ার পাইকার না আসায় শেষমেষ বাধ্য হয়ে নিজের টাকায় ট্রাক ভাড়া করে পুরান ঢাকার পোস্তগোলায় হাজারখানেক চামড়া আজ পাঠিয়ে দিচ্ছি। সেখানে যা মূল্য পাবো, তাতেই বিক্রি করে দেব।’
সোনারামপুরের চামড়া ব্যবসায়ী মো. মজিবুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কী বলবো ভাই। চামড়া কেউ কিনতে আসে নাই, বিধায় গত সপ্তাহে কিছু চামড়া তিতাস নদীতে মনের দুঃখে ভাসিয়ে দিয়েছি। কারণ, এগুলো থাকলে দৈনিক লবণ দিতে হতো। এ ছাড়া আমার লক্ষাধিক টাকার চামড়া পঁচে গেছে। চামড়ার ব্যবসা ছেড়ে দেব।’
(ঢাকাটাইমস/১৭সেপ্টেম্বর/প্রতিনিধি/জেবি)