খালেদার মামলায় বিচারকের প্রতি অনাস্থা, আদেশ বুধবার

‌ নিজস্ব প্র‌তি‌বেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৫ | প্রকাশিত : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:০৫

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে দুই আসামির আবেদনের বিষয়ে আদেশ দেওয়ার দিন বুধবার ধার্য করেছে আদালত।

মঙ্গলবার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান এ দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত সোমবার খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে বিচারের আদেশের বিষয়ে উচ্চ আদালতে যেতে যুক্তি উপস্থাপন মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর করায় বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে আবেদন করেন মামলার দুই আসামি মনিরুল ইসলাম খান এবং জিয়াউল হক মুন্নার আইনজীবীরা।

মঙ্গলবার ১১ টা ২০ মিনিটে বিচারক বিচারকাজ শুরুর জন্য এজলাসে ওঠেন। শুরুতে দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকাজে আদালতকে সহযোগিতা না করে একজোট হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন।’

‘আদালতের প্রতি কোন কারণ ছাড়াই অনাস্থ দিয়েছেন। এটা তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা জামিন বাড়াতে আদালতে আসেন। কিন্তু যুক্তি উপস্থাপন করবেন না। তাদের আচরণ স্ববিরোধী। এই অবস্থায় আদালত মামলার কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য নন।’

আইনে যুক্তিতর্কের বিধান নেই উল্লেখ করে কাজল বলেন, ‘আইনে যেখানে যুক্তিতর্কের বিধান নেই, সেখানে আসামিদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সুযোগ দিয়ে মনে হচ্ছে, আমরা ভুল করেছি। তারা যুক্তিতর্ক না করলে আমরা মামলার রায় ঘোষণার দিন ঠিক করতে আদালতের কাছে অনুরোধ করব।’

খালেদা জিয়ার আদালতে না আসা প্রসঙ্গে এ প্রসিকিউটর বলেন, ‘কারাগারে থাকলে কোনও আসামি বলতে পারেন না, তিনি আদালতে আসতে অনিচ্ছুক। কিন্তু খালেদা জিয়া বলছেন। তিনি তার অবস্থানের সুযোগ নিচ্ছেন। তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাকে তো আর জোর করে আনা সম্ভব না। তিনি এ সুযোগ নিচ্ছেন। এভাবে চললে বিচারব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাবে।’

এরপর খালেদার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘এ মামলায় আমরা খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে যুক্তি উপস্থাপন করতে চাচ্ছি না। গত ৫ সেপ্টেম্বর নিজে আদালতে এসে বলে গেছেন, তিনি গুরুতর অসুস্থ। একা চলতে পারেন না। এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। বাথরুমে যাওয়ার সময় পড়ে গেছেন। তার চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড হয়েছে। কারা মহাপরিদর্শক বলেছেন, দুয়েক দিনের মধ্যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হবে।’

‘আমরা ২০ সেপ্টেম্বরই বলেছি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচারের আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব। হাইকোর্ট এখন বন্ধ। খুললে আমরা রিভিশন আবেদন করব। তিনি সুস্থ হোক, এরপর আদালতে আসবেন।’

এরপর আসামী মনিরুল ইসলাম খানের আইনজীবী আক্তারুজ্জামান কোনও বিচারকের প্রতি কোনও আসামি অনাস্থার আবেদন দিলে উচ্চ আদালতে ওই বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার কার্যক্রম আর এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই বলে উচ্চ আদালতের একটি সিদ্ধান্ত দাখিল করেনে এবং সে পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মূলতবির আবেদন করেন।’

এরপর কাজল উচ্চ আদালতের ওই সিদ্ধান্ত চ্যারিটেবল মামলার ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য নয় বলে উল্লেখ করে আইনানুগ আদেশ প্রার্থণা করেন।

এরপর সোয়া ১২টার দিকে বিচারক আদেশ প্রদান করে বলেন, আজ (মঙ্গলবার) অনাস্থার বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ধার্য থাকলেও এদিন দুদক এবং আসামির পক্ষের আইনজীবীদের বক্তব্য আদশে উল্লেখ থাকার প্রয়োজনে ওই আদেশ বুধবার দেওয়া হবে। খালেদা জিয়া জামিনে থাকবেন।

আদালত ৩০ মিনিট বিরতি থাকার পর বেলা ১টার সময় পুনরায় বিচারক এজলাসে ওঠার পর খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেন, ‘খন্দকার মাহবুব হোসেন, সানাউল্লাহ মিয়াসহ সিনিয়র আইনজীবীরা ১১ মামলায় আসামি। তারা জামিনের জন্য হাইকোর্টে আছেন। তাই মঙ্গলবার যুক্তি উপস্থাপন সম্ভব নয়। বুধবার পর্যন্ত সময় দিন।’

এরপর বিচারক বলেন, ‘মাসুদ আহমেদ তালুকদার সকালে জামিন চাইলেন। তাকে বললাম বিরতির পর আপনার যুক্তি উপস্থাপন শুনব।’

উত্তরে মেজবাহ বলেন, ‘উনি হাইকোর্টে চলে গেছেন।’

বিচারক বলেন, ‘তাহলে উনি কি শুধু জামিন চাইতে আদালতে এসেছিলেন? যাই হোক সিনিয়র আইনজীবীরা নেই ওই কারণে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যুক্তি উপস্থাপন মূলতবি করলাম। আর আসামি মুন্নার ডিভিশন ও দর্শনার্থীর দেখা করার বিষয়ে কারাকর্তৃপক্ষ জেলকোর্ড অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।’

এ মামলায় আসামিদের পক্ষে চলতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ওই আদালতে লিখিত যুক্তিতর্ক দাখিল করা হয়। তবে তার পক্ষে মৌখিক যুক্তি উপস্থাপন বাকি আছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর একই বিচারক বিচার বিলম্বের জন্য খালেদা জিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে আসছেন না উল্লেখ করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারায় তার উপস্থিতি মুওকুফ করেন। তবে আইনজীবীরা চাইলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই যুক্তি উপস্থাপন করতে পারবে বলে আদালতের আদেশ রয়েছে।

২০১১ সালের ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক। এ মামলায় ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়। মামলার অপর আসামি বিএনপি নেতা সচিব হারিছ চৌধুরী পলাতক।

ঢাকাটাইমস/২৫‌সে‌প্টেম্বর/আরজেড/এমএবি/ডিএম

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

৩০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি: সাবেক প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই: আপিল বিভাগ

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা: আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সাম্রাজ্যের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট 

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ

আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোয় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

তিন মাসের ব্যবধানে আরেক মামলায় খালাস পেলেন গোল্ডেন মনির

আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যামামলা: আপিল শুনানি দ্রুত করতে আসামির আবেদন

পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট

এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :