খেজুরের রসে বাদুড়ের প্রস্রাব! (ভিডিও)

কাওসার শাকিল, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৮
অ- অ+

শীতের সকালে যদি শখ করে হলেও দুই একবার গ্লাস ভর্তি টাটকা তাজা কাঁচা খেজুরের রস চুমুক দিয়ে থাকেন তাহলে খুব বেশি সম্ভাবনা আছে আপনি খানিকটা হলেও বাদুড়ের প্রস্রাব খেয়েছেন। মানতে কষ্ট হচ্ছে? তবু মানতেই হবে। তার কারন খেজুর গাছের গা চেঁছে যে রস বের করা হয়, সারারাত সেটা ফোটায় ফোটায় জমা হয় মাটির হাড়িতে। নিশাচর বাদুড় এই রস খাওয়ার লোভে খেজুর গাছে ভিড় জমায়। তারপর লোভাতুর জিভ দিয়ে চেটে চেটে খায় খেজুরের রস। আর একবার খাওয়া শুরু করলে এমনই খাওয়া খায় যে পেটে রস ভরতে গিয়ে প্রস্রাব করে দেয় জায়গা খালি করতে। আর এই প্রস্রাব তো বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার নয়, ওটা গিয়ে পড়ে খেজুর রসের হাড়িতেই। তাই মানেন আর না মানেন, কাঁচা খেজুরের রস যদি সরাসরি খেয়ে থাকেন তাহলে খুব সম্ভবত আপনি বাদুড়ের প্র্রস্রাবও খেয়েছেন তার সাথে সাথে।

এখন প্রশ্ন হলো বাদুড়ের প্রসাব বা মুখের লালার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কি?

বাদুড়ের এই প্রসাব বা লালা খেয়ে ফেললে সমস্যা তেমন কিছু না, যদি না বাদুড়টি অসুস্থ হয়ে থাকে। বাদুড় নিপাহ ভাইরাসের প্রত্যক্ষ বাহক। আর কোনো বাদুড় যদি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং সেই বাদুড় যদি খেজুর রসে মুখ দেয় তাহলে তার লালা থেকে নিপাহ ভাইরাস খেজুর রসে ছড়িয়ে যাবে। আর খেজুর রস অতি উচ্চ তাপমাত্রায় সেদ্ধ না করলে এই ভাইরাস মানুষের শরীরকে সংক্রমিত করে। তাই এই কাঁচা রস খেলে নিপাহ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুকি থাকে।

সমস্যা হলো খুব বেশি পরিচিত না হলেও নিপাহ খুবই ভয়ংকর একটা রোগ। নিপাহ রোগে আক্রান্ত হলে তেমন কোনো চিকিৎসাও দেয়া যায় না। এরোগে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সম্ভাবনা পঁচাত্তর শতাংশ। তার মানে প্রতি চারজন নিপাহ রোগীর মাঝে তিনজনই মারা যায়।

মালয়েশিয়ার নিপাহ অঞ্চলে ১৯৯৮ সালে এই ভাইরাস প্রথম পাওয়া যায়। সেখানেই ভাইরাসটির নামকরণ হয় নিপাহ। বাংলাদেশের মেহেরপুরে প্রথম নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় ২০০১ সালে। সেটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় ২০০৪ সালে।

২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ১৮৯ জন নিপাহর রোগী পাওয়া গেছে এবং এর মধ্যে ১৪৮ জনই মারা গেছে। তাদের মধ্যে ফরিদপুর এবং রাজশাহী মেডিকেলের দুইজন ডাক্তারও ছিলেন। ২০১৫ সালের হিসাবে এ বছর নয়জন নিপাহতে আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে ছয়জনই মারা যায়।

নিপাহ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এই ভাইরাস মস্তিষ্কে আক্রমণ করে এবং প্রদাহ তৈরি করে। এর ফলাফল হলো রোগীর প্রচণ্ড জ্বর এবং মাথাব্যাথা হয়। খিঁচুনি হতে থাকে ক্রমাগত, শ্বাসকষ্ট হয় সেই সাথে। বার বার রোগী জ্ঞান হারায় এবং প্রলাপ বকে। একসময় প্রচণ্ড জ্বরে তার মৃত্যু হয়। এরচেয়েও ভয়ংকর ব্যাপার হলো আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে হাঁচি কাশির মাধ্যমে এটি আরেকজনের কাছে ছড়িয়ে যায়।

রস খাওয়ার পর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে।

(ভিডিও কপিরাইটঃ আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি ও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা)

ঢাকাটাইমস/৩০ডিসেম্বর/কেএস/ডব্লিউবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পদ্মা সেতুর তিন বছরপূর্তি আজ, টোল আদায়ের রেকর্ড ছাড়িয়েছে আড়াই হাজার কোটি
২০ মাসে ইরানসহ পাঁচ দেশে ৩৪ হাজারের বেশি হামলা ইসরায়েলের
ঘুষ-দুর্নীতির দায়ে ওসি থেকে এসআই হলেন মাসুদ
আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান: ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা