বৃষ্টিতে ক্ষত-বিক্ষত চট্টগ্রামের সড়ক

ইব্রাহিম খলিল, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৯ জুন ২০১৭, ০৮:৪৮
অ- অ+

টানা বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামের বেশ কিছু সড়ক ভেঙে গেছে। খানাখন্দে ভরা এসব সড়কে চলাচলে কষ্ট পাচ্ছে যাত্রী সাধারণ। বিশেষ করে ঈদের কেনাকাটায় ঘর থেকে পা ফেলতেই নানা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

যানবাহন চলাচলেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে চালকরা। পাশাপাশি লেগে থাকছে যানজটও। বৃষ্টি না থামায় সড়ক মেরামতেও নামতে পারছে না চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেন ও সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ফলে সহসা ভোগান্তি কমছে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নগরীর চকবাজার কাঁচাবাজার থেকে বহদ্দারহাট মোড় পর্যন্ত সড়কটির কাঁচাবাজার মোড়, তেলিপট্টি মোড়, কাপাসগোলা, বাদুরতলা সড়কগুলোতে ছোট-বড় গর্ত রয়েছে। বেশি খানা-খন্দ রয়েছে বাদুরতলা সড়কে। অথচ এই সড়কটি নির্মিত হয়েছে বেশিদিন হয়নি।

বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা সড়কটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে চলাচল করে। সড়কটিতে এখন যা অবস্থা, বাস কিংবা অন্যান্য গণপরিবহনে চড়ার পর যে কেউ বুঝবে যে গরুর গাড়ি চড়েছেন। বিশেষ করে বহদ্দারহাট মোড় থেকে বাস টার্মিনাল, পুরাতন চান্দগাঁও, সিঅ্যান্ডবি মোড়ের সড়কটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

সড়কটিতে পাঁচ শতাধিক ছোট বড় গর্ত রয়েছে। খানাখন্দের সাথে আবার কর্দমাক্ত রাস্তা, আবার কোথাও ধুলোবালি যাত্রী সাধারণকে দারুণ দুর্ভোগে ফেলছে। পরিবহনে চড়তে গিয়ে যাত্রীদের বড় ধরণের ঝাঁকুনি খেতে হচ্ছে। এছাড়া এই সড়কে ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের যানবাহন চলছে অত্যন্ত মন্থর গতিতে। এরমধ্যে গর্তে কোনো গাড়ি আটকে গেলে দ্রুত লম্বা লাইনের যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

এ দুর্ভোগ আরো বেশি হচ্ছে যেসব যাত্রী কালুরঘাট কিংবা কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বহদ্দারহাট প্রবেশ করছে তাঁদের জন্য। বহদ্দারহাট মোড় থেকে ছাড়ার সময় মূল সড়ক ব্যবহার করলেও বহদ্দারহাটমুখী যানবাহনগুলো সেখানকার টার্মিনালের অভ্যন্তরীণ সড়ক দিয়ে ঘুরে শাহ আমানত সেতু সংযোগ (নতুন চান্দগাঁও থানার সামনে) ধরে গন্তব্যস্থলে আসতে হচ্ছে।

এতে সবচেয়ে বেশি বিপত্তি ঘটছে টার্মিনাল এলাকাটিতে। এখানে ইট বিছানো এবড়ো থেবড়ো ও খানাখন্দে ভরা রাস্তা ও সিটি পরিবহনসহ আন্তঃজেলার বিভিন্ন যানবাহনের উপস্থিতি দীর্ঘ সময় ধরে যানজট পরিস্থিতিতে ফেলছে। সড়কটিতে সিটি করপোরেশনের একদল কর্মী ইট দিয়ে কিছু অংশের গর্ত ভরাট করার কারণে সড়কটি আরো এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেছে।

বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেইট ও জিইসি মোড়ের সড়কগুলোতেও বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় গর্ত রয়েছে। এছাড়া মদুনাঘাট, জিইসি মোড়, শেখ মুজিব রোড, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, বিশ্বরোড, বন্দর রোড, ফ্রি পোর্ট, পোর্ট কানেক্টিং রোড, হালিশহর, বড়পোল, ডিটি রোড, ফইল্যাতলী বাজার, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও খুলশী সড়কসহ সব ব্যস্ততম সড়ক ছোট বড় খানাখন্দে ভরে গেছে।

এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা যায় আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক ও পোর্ট কানেক্টিং সড়ক। আগ্রাবাদ এক্সেস সড়কটিতে যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। এই সড়ক দিয়ে বিভিন্ন ধরণের যানবাহন অত্যন্ত মন্থর গতিতে চলাচল করছে। বৃষ্টির সাথে জলাবদ্ধতা এই সড়কটির জন্য হয়ে উঠেছে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।

অন্যদিকে পোর্ট কানেক্টিং সড়কটিতে নিয়মিত ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কটি আরো করুণ দশায় পরিণত হচ্ছে। এই সবগুলো সড়ক দেখভালের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

কাপ্তাই রাস্তার মাথা মোড়টি থেকে বাসে (রুট-১) উঠা আমিনুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভোগ কখনো শেষ হবে না। একটা না একটা লেগেই আছে। কদিন টানা বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা এখন আবার ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট। রাস্তাঘাটের এমন পরিস্থিতি অনেক দিন ধরে চলে আসলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আমাদের দুর্ভোগ দেখার মতো যেন কেউ নেই। যারা আছে তারা যদি না দেখার ভান করে তাহলে দুর্ভোগ কিভাবে কমবে।’

নগরীর দক্ষিণে শাহ আমানত সংযোগ সড়কটিরও প্রায় একই অবস্থা। এই সড়কটিতে সিএনজি অটোরিকশা, অটোটেম্পো, হিউম্যান হলার, মাহেন্দ্রা, বাস-মিনিবাস এমন গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যাপকহারে চলে আন্তঃজেলার দূরপাল্লার বাস, লরি, কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরণের ভারী যানবাহন।

কর্দমাক্ত রাস্তা ও এবড়ো থেবড়ো সড়কের মধ্যেই যানবাহনগুলো চলাচল করছে। ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটের কারণে এখানেও যানবাহনগুলো চলছে মন্থর গতিতে। ফলে সড়কটিতে মোড়ে মোড়ে নিয়মিত যানজট লেগেই থাকছে। সড়কটি সড়ক ও জনপথের অধীন।

এই ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারেক ইকবাল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে এখন রাস্তায় বিটুমিনের কাজ করা যাচ্ছে না। তাই যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে আপাতত আমরা ইট-কংক্রিট দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘সড়কগুলোতে বিটুমিন দেয়ার মতো পরিস্থিতি থাকতে হবে। বৃষ্টি শেষ হলে সড়কটি শুকনো হলে আমরা বিটুমিনের কাজে হাত দেবো।’

চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সাধারণ স¤পাদক নজরুল ইসলাম খোকন বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট দিয়ে চললে বিভিন্ন যানবাহনের ইঞ্জিন, চেসিস, এঙ্গেলসহ বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রাংশ নষ্ট ও ভেঙে যায়। গ্যারেজে নিলে সেখানে মালিকদের হাজার হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছে। এছাড়া ভাঙাচোরা রাস্তাঘাটের কারণে বিভিন্ন সময় যানজটে পড়ে জ্বালানি ব্যয় বাড়ছে।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘নগরীর রাস্তাঘাটগুলো মেরামতের জন্য আমাদের পাঁচটি টিম মাঠে কাজ করছে। আপাতত আমরা ইট বালি দিয়ে গর্তগুলো ভরাটের কাজ করছি। যাতে করে ঈদের আগে সাধারণ যাত্রীদের চলাচলে যেন সমস্যা না হয়।’

বৃষ্টি কমে গেলে কার্পেটিং এর কাজ হবে জানিয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেক্টিং রোড নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়ে গেছে। জাইকার অর্থায়নে এই সড়ক দুটি নির্মিত হবে। সড়কের পাশে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। বর্ষা চলে গেলে এই নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এছাড়া অন্যান্য সড়কেও কার্পেটিং এর কাজ হবে।

প্রশ্নের জবাবে সিটি করপোরেশনের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, নগরীর সবগুলো রাস্তা মেরামতের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আসলে তা না। যেমন সিডিএ কর্তৃক যে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে, সেখানকার পাশ্ববর্তী ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো মেরামতের দায়িত্ব সিডিএর। সড়ক ও জনপদের সড়কও রয়েছে নগরে।’

সড়ক ও জনপদ বিভাগের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী রাশেদুল আলম বলেন, ‘শাহ আমানত সংযোগ সড়ক আগে থেকেই ক্ষত-বিক্ষত ছিল। এটি ছয় লেনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে কাজ অগ্রসর হচ্ছে না। বৃষ্টি বন্ধ হলে কাজ শুরু হবে। শুষ্ক মৌসুমে পুরোদমে এ সড়কের কাজ চলবে। অতএব এ মৌসুমে দুর্ভোগই পোহাতে হবে নগরবাসীকে।’

ঢাকাটাইমস/১৯জুন/আইকে/ডব্লিউবি

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে দুই ককটেল বিস্ফোরণ
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১৬৯০ জন
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও যোদ্ধাদের স্মরণে ‘বিআরপি’র মশাল মিছিল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা