প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তেল-গ্যাস উৎপাদন!

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:২৫
অ- অ+

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল ও গ্যাস উৎপাদনে নিজেরাই উদ্ভাবন করেছেন পরিবেশ সহায়ক প্রযুক্তি। আর সে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব করতে চান প্রবাসী দুই বিজ্ঞানী। প্লান্ট স্থাপন করে প্লাস্টিক বর্জ্যকে কাজে লাগাতে সরকারেরও সহায়তা চান তারা।

রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ)এক সংবাদ সম্মেলনে নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলেন দুই বিজ্ঞানী। তারা হলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মইন উদ্দিন সরকার ও আনজুমান সেলী।

সংবাদ সম্মেলনে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি তেল উৎপাদনে প্লান্ট স্থাপন করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে কীভাবে পরিবেশবান্ধব করা যায় তার বিস্তারিত তুলে ধরেন এ দম্পতি।

জানান, তাদের তৈরি যন্ত্রগুলো দিয়ে এক টন প্লাষ্টিকসহ বিভিন্ন বর্জ্য থেকে ১৩০০ লিটার ডিজেল, ১০ সিলিন্ডার এলপিজি গ্যাস এবং ২৩ লিটার অ্যাভিয়েশন বা জেট ফুয়েল উৎপাদন করা সম্ভব। এতে ডিজেলের মূল্য হবে লিটার প্রতি মাত্র ২০ টাকা। তবে এ ব্যতিক্রমী কাজের জন্য সরকারের সার্বিক সহায়তা চেয়েছেন তারা।

মইনউদ্দিন বলেন, ‘সারা দুনিয়ায় দিনে দিনে বাড়ছে প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার। সেই সঙ্গে আমাদের চার পাশে জমছে প্লাস্টিক বর্জ্য। যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্লাস্টিক পচনশীল নয় বিধায় মাটি হারাচ্ছে উর্বর শক্তি। খালগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে, নদী তার নাব্য হারাচ্ছে। ড্রেনের পয়ঃনিষ্কাষন ব্যবস্থা রোধ হচ্ছে ফলে মশা মাছির প্রকোপ বেড়েই যাচ্ছে এবং বৃষ্টি হলে শহরে নৌকা চালাতে হচ্ছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন-এর প্রাদুর্ভাবে বন ও জলজ জীব বৈচিত্র্য ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে।’

‘শুধু আমেরিকাতেই প্রতি বছর ৮০ বিলিয়ন পাউন্ড প্লাস্টিক উৎপাদন হয় যার মাত্র ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন পাউন্ড পুণঃপ্রক্রিয়াজাত করা হয়।’

এ বিজ্ঞানীর দেয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৮ মিলিয়ন মেট্রিকটন মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়্যাস্ট (এমএস ডব্লিউ) বর্জ্য উৎপাদন হয় যার মধ্যে ১৫ শতাংশই প্লাস্টিক অর্থাৎ ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন প্লাস্টিক। যার মাত্র ১০ শতাংশ পুণঃপ্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হয়।

১৯৫০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সারাবিশ্বে প্রায় ৬.৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদন হয়েছে যার মাত্র ৯ শতাংশ পূণঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষম হয়েছে।

মইনউদ্দিন বলেন, ‘২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন টন বর্জ্যপ্লাস্টিক সমুদ্রে ভাসমান অবস্থায় রয়েছে। যা প্রায় ৭০০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণীকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাই বর্জ্য প্লাস্টিকের সমস্যা সমাধানের জন্য ২০০৫ সাল গবেষণা শুরু করি। ২০১০ সালে প্লাস্টিক থেকে তেল উৎপাদনের একটি প্রযুক্তি ও তার পেটেন্ট তৈরি করি।’

‘যা নবায়ন যোগ্য শক্তি, যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় দুই দশক গবেষণার পর আমরা সাফল্যের সাথে একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার করতে সক্ষম হই , যার প্রতি টন পরিত্যাক্ত প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য থেকে ১৩০০ লিটার জ্বালানী তেল, ১০ সিলিন্ডার এল.পি.জি গ্যাস, এবং ২৩ লিটার জেট ফুয়েল উৎপাদন করা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিজের গবেষণার সাফল্যেকে বাস্তব রূপ দিতে আমেরিকায় প্লান্ট গড়ে তুলেছি। উৎপাদন কোম্পানির নাম Waste technologies LLC। বর্তমানে কোম্পানিটি বাংলাদেশেও এ রকমের প্লান্ট করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে এই কেন্দ্র স্থাপন হলে একাধারে যেমন দেশকে ক্ষতিকারক প্লাস্টিকের হাত থেকে রক্ষা করা যাবে, তেমনি দেশের স্বল্পশিক্ষিত থেকে শুরু করে শিক্ষিত যুবকদের ব্যাপক কর্মসংস্থান ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

মেধাবী এই বিজ্ঞানী জানান, বাংলাদেশে একটি প্লান্ট স্থাপন করতে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার মাধ্যমে এ আবিষ্কারকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলেও আশা এই দুই প্রবাসী বিজ্ঞানীর।

ঢাকাটাইমস/০৮অক্টোবর/বিইউ/ডিএম

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যে নিয়মে আম খেলে শরীরের ওজন ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে
আট দিনের সফরে রাতে চীন যাচ্ছে বিএনপির প্রতিনিধিদল
প্রথম প্রেমের স্পর্শ: পর্ব ১-নীল জোনাকির আলো
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দিচ্ছে ইরান, ইসরায়েল জুড়ে আতঙ্ক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা