আসামে বাদ পড়া নাগরিকরা বানাচ্ছেন নিজেদের কারাগার!
ভারতের আসাম রাজ্যের কয়েক লাখ মানুষ রয়েছে চরম আতঙ্কে। কারণ সম্প্রতি নাগরিক তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ পড়েছে। এরপর থেকে কাউকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা। তাদের অবস্থা কী হবে তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা। এমন অবস্থায় বিশাল জায়গাজুড়ে নতুন কারাগার তৈরি করছে ভারত।
রাজ্যের গোয়ালপাড়ার মাটিয়ার দলগোমা গ্রামে পাহাড়ের কাছাকাছি ২০ বিঘা জমিজুড়ে তৈরি হচ্ছে নতুন কারাগার। এখানেই মূলত রাখা যাবে যাদের নাম জাতীয় নাগরিক তালিকায় নেই তাদেরকে। কারাগার নির্মাণের কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। এই কারাগার নির্মাণে কাজ করছেন ৪৫০ জন শ্রমিক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের অনেকেরই নাম নেই নাগরিক তালিকায়। যাদের বেশিরভাগই নারী।
সরোজিনী হাজং ২ নম্বর রিফিউজি গ্রামের বাসিন্দা। বাড়িতে এক ছেলে, এক মেয়ে। স্বামী গৌরাঙ্গের মানসিক সমস্যা। বাড়িতে পাঁচজনের খরচ যোগাতে এই কাজ করছেন তিনি। কারাগার তৈরিতে দিন-হাজিরা বাবদ পান ২৫০ টাকায়। অবিভক্ত রংপুর-গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা হাজং, ডালু, গারো, বনাই, কোচ, বাঙালিরা ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে ঢোকার পরে তাদের গোয়ালপাড়ার মাটিয়ায় এসব গ্রামে পুনর্বাসন দেওয়া হয়। গড়ে ওঠে ন’টি রিফিউজি গ্রাম। এখনো সেই নম্বর দিয়েই গ্রামগুলোর পরিচয়। বাসিন্দা ২০ হাজার। সবাইকে দেওয়া হয়েছিল ‘রিফিউজি এনরোলমেন্ট’ (আরই) প্রশংসাপত্র। এনআরসি করতে সেই ‘আরই সার্টিফিকেট’ জমা দিয়েছিলেন এখানকার বাসিন্দারা। তবে অবাক করা বিষয় হলো বাড়ির পুরুষদের নাম তালিকায় থাকলেও অনেক নারীর নাম তালিকায় নেই।
নয়নতারা হাজং বলেন, ‘এখানে সবাই মজা করে মেয়েদের নিয়ে। বলে, নিজেদের জেল নিজেরাই বানাচ্ছিস। ভালো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিস। গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে। আমি তো এনআরসিতে নাম এসেছে কি না, দেখিইনি। পাত্তা দিই না আর। যা হবে হোক।’
মোট ১৫টা ব্লকে ২০০ জন করে তিন হাজার জনকে ঠাঁই দেবে এই আটক কেন্দ্র। এর জন্য খরচ বরাদ্দ ৪৫ কোটি। এত অল্প জায়গায় সবাইকে রাখা যাবে না এজন্য এমন আরও দশটি কারাগার তৈরি করা হবে।
রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আপাতত অন্য কারাগার থেকে হাজার জনকে এখানে আনা হবে। এনআরসি থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখ লোকের মামলা চলবে আরও অন্তত আট মাস। ততদিনে অন্যান্য কেন্দ্রও তৈরি হয়ে যাবে।
(ঢাকাটাইমস/১৪সেপ্টেম্বর/একে/জেবি)