নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের অভিযোগে তুরস্কে সংঘর্ষ, গ্রেপ্তার ৪ জন

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কার্টুন চিত্র প্রকাশের অভিযোগে তুরস্কের স্যাটায়ার ম্যাগাজিন লেম্যানের চার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (৩০ জুন) ইস্তাম্বুলে একটি ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিনে নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কার্টুন প্রকাশের অভিযোগে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এতে পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে।
ইস্তাম্বুলের প্রধান কৌঁসুলি ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন লেম্যানের সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। অভিযোগে বলা হয়, তারা এমন একটি কার্টুন প্রকাশ করেছেন যা “সরাসরি ধর্মীয় মূল্যবোধকে অপমান করে”।
ম্যাগাজিনটির প্রধান সম্পাদক তুনচায় আগগুন বলেন, “এই কার্টুন কোনোভাবেই নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর চিত্র নয়। এটি একটি কাল্পনিক চরিত্র ‘মুহাম্মদ’-কে নিয়ে, যিনি ইসরায়েলের বোমা হামলায় নিহত একজন মুসলমানকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। ইসলামী বিশ্বের প্রায় ২০ কোটিরও বেশি মানুষ মুহাম্মদ নাম ধারণ করেন। এটি নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে উদ্দেশ করে নয় এবং আমরা কখনো এমন ঝুঁকি নেব না।”
সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ইস্তাম্বুল শহরের কেন্দ্রস্থলে লেম্যানের সাংবাদিকরা যেসব স্থানে নিয়মিত যেতেন, সেখানে কয়েক ডজন বিক্ষুব্ধ ব্যক্তি হামলা চালান। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে এটি সংঘর্ষে রূপ নেয়, যাতে ২৫০ থেকে ৩০০ জন জড়িয়ে পড়েন।
লেম্যান ম্যাগাজিনটি ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রের জন্য সুপরিচিত। ২০১৫ সালে ফ্রান্সের চার্লি হেবদো অফিসে হামলার পর লেম্যান প্রকাশ্য সমর্থন জানায়, যা তুরস্কের রক্ষণশীল মহলে ক্ষোভের জন্ম দেয়।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলি ইয়েরলিকায়া এক্স-এ (টুইটারে) জানান, অভিযুক্ত কার্টুনিস্ট এবং লেম্যানের গ্রাফিক ডিজাইনারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “ডিপি নামে যে ব্যক্তি এই জঘন্য চিত্র এঁকেছে, তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এসব লজ্জাহীন ব্যক্তি আইনের মুখোমুখি হবে।”
মিডিয়া সূত্রে জানা গেছে, ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদককেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
লেম্যান এক্স-এ পরপর কয়েকটি পোস্টে জানায়, কার্টুনটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে উসকানি সৃষ্টি করা হয়েছে।
তারা লিখেছে, “কার্টুনিস্ট মুসলমানদের ন্যায় ও মানবতা তুলে ধরতে চেয়েছেন, ধর্মীয় অনুভূতিকে ছোট করতে চাননি। আমাদের নবীকে নিয়ে কোনো চিত্র এতে নেই। কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কার্টুনটিকে এভাবে ব্যাখ্যা করছে।”
“আমরা আমাদের সেই পাঠকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি, যারা ভুল ব্যাখ্যার ফলে আহত হয়েছেন।”
তুরস্কের আইনমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানান, “ধর্মীয় মূল্যবোধকে প্রকাশ্যে অপমানের” অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে।
তিনি লিখেছেন, “আমাদের বিশ্বাসকে অসম্মান করার কোনো অধিকার কারও নেই। কোনো স্বাধীনতা এই পবিত্র মূল্যবোধকে ব্যঙ্গ করার অধিকার দেয় না।”
ইস্তাম্বুলের গভর্নর দাভুত গুল বলেন, “আমাদের জাতীয় বিশ্বাসকে লক্ষ্য করে যারা উসকানি দিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিশ্চুপ থাকবো না।”
(ঢাকাটাইমস/১ জুলাই/আরজেড)

মন্তব্য করুন