পিকেএসএফ উন্নয়ন মেলা

এক ছাদের নিচে শত উদ্যোক্তার দেশি পণ্য

জহির রায়হান
| আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:২৬ | প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০১৯, ২২:০০

এত সুন্দর যে মেলা হতে পারে সেটা এখানে না এলে বোঝাই যেত না। নিত্যব্যবহার্য পণ্য থেকে শুরু করে প্রান্তিক ক্ষুদ্র উৎপাদকদের উৎপাদিত বিষমুক্ত কৃষিপণ্য, খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী, প্রসিদ্ধ ও সমাদৃত হাজারো পণ্যের সমাহার।

কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী হান্নান সিকদার। এক ছাদের নিচে শত শত উদ্যোক্তার দেশি পণ্য দেখে তার চোখ জুড়িয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে পিকেএসএফ উন্নয়ন মেলা। এতে সারা দেশ থেকে যোগ দিয়েছে পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগী সংস্থার বিভিন্ন উন্নয়ন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১৯৫ স্টলে প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছে ১২৫টি প্রতিষ্ঠান।

গত ১৪ নভেম্বর শুরু হওয়া এ মেলা চলবে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত বিনা মূল্যে মেলায় প্রবেশ করা যাবে।

মেলা ঘুরে দেখা গেল, হারিয়ে যাওয়া পুরনো ঐতিহ্যের নানা সব কারুপণ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন উৎপাদকরা। দেশের উত্তরের সীমান্ত দিনাজপুর থেকে হরেক রকম পণ্যসামগ্রী নিয়ে আসা স্টল যেমন আছে, তেমনি রাঙামাটির পাহাড় থেকে আদিবসী ঐতিহ্যের নানান নয়নলোভা জিনিস নিয়ে এসেছেন সেখানকার কর্মীরা। দ্বীপ হাতিয়া ও ভোলা থেকে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সামগ্রীও রয়েছে।

মেলায় এসে কেউ কেউ ব্যাগ ভরে বাজার করে নিয়েছেন। তেমনি একজন হামিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি ঘুরে ঘুরে সরিষার তেল, কলা, মিষ্টি এসব নিয়েছি। দই নিয়েছি। কিনে কিনে গাড়ি ভরেছি। অনেক জিনিস আছে যা জীবনে দেখিনি। কেউ আবার কাঁচাবাজার সেরে নিয়েছে।’

পল্লি কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) উন্নয়ন মেলা যেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, সহযোগী সংস্থার সদস্য এবং উন্নয়ন কর্মীদের সম্মেলনে পরিণত হয়েছে। শনিবার মেলায় ছিল গায়ে লাগানো ভিড়। মেলায় সব ধরনের পণ্য থাকায় সবাই কম-বেশি পণ্য কিনছেন। ঘুরছেন। আবার ঘুরতে ঘুরতে খাবার খাচ্ছেন।

পিদিম ফাউন্ডেশনের স্টলে দেখা গেল বৈচিত্র্যময় জামদানি শাড়ি, দাম ৩৫০০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। উদ্যোক্তা তাইফুর ইসলাম ঢাকা টাইমকে বলেন, ‘আমরা পিকেএসএফের সঙ্গে একটা প্রজেক্টে কাজ করছি। আমরা জামদানির বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরি করব, যেটা এখন সচরাচর হয় না।’

প্রত্যাশী স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বিষমুক্ত শুঁটকি। দিশার স্টলে দেখা গেল হরেক রকমের মিষ্টি। আলোর ঘর জ্ঞান ও তথ্যকেন্দ্র্রে পাওয়া যাবে বিভিন্ন লেখকের বই।

সালমা ক্যাটারিং সার্ভিস স্টলটি রীতিমতো বিয়ের খাবারের আয়োজন। মেলায় আগতরা সুলভ মূল্যে এখানে খেতে পারছে।

আশ্রয় স্টলে দেখা গেল নারীদের বিভিন্ন পোশাক। উদ্যেক্ত বাদশা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা উদ্যেক্তা হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেই। উদ্যেক্তাদের সবচেয়ে বড় বাধা তৈরি পণ্য বাজারজাত করা। এই বাধা দূর করতে আমরা তাদের পণ্য বাজারজাত করি। এখন ৩০০ উদ্যোক্তাকে নিয়ে কাজ করছি। আমরা ছয় হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’

পিকেএসএফের চেয়্যারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘আমরা পিকেএসএফ আন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের ১৬টি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে কাজ করে যাচ্ছি। সবার সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন আমাদের লক্ষ্য।’

নরসিংদী থেকে এসেছে উদ্যেক্তা বৃষ্টি। তারা হাতে কাজ করা সুতি জামা, নকশিকাঁথা এবং বিছানার চাদর নিয়ে এসেছেন। বলেন, ‘মানুষের মধ্যে দেশীয় পণ্যের এত চাহিদা উন্নয়ন মেলায় না ্আসলে বুঝতে পারতাম না।’

মেলায় পিঠা খাচ্ছিলেন মাহ্বুব। বিশেষ করে মিষ্টি সব পিঠা তার পছন্দ। বলেন, ‘আমাদের দেশে নানা ধরনের পিঠা পাওয়া যায় জানতাম, কিন্তু এত ধরনের পিঠা পাওয়া যায় আমি জানতাম না। দেশীয় খাবার সম্পর্কে অনেক কিছু এখানে এসে জেনেছি।’

ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের স্টলে দেখা গেল শতরঞ্জিসহ শীতের বিভিন্ন পোশাক। রয়েছে বেডশিট, কুশন কভার।

হীড বাংলাদেশের স্টলে টঙ্গীর বিসিকে তৈরি কারুপণ্য রয়েছে। ‘সখি প্যাড’ স্টলে দেখা গেল স্যানিটারি ন্যপকিন সুলভ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে। ৮ পিসের প্যাকেড ৪৫ টাকা ও ৬ পিস ৩৬ টাকা।

মেলার প্রবেশপথেই দেখা যাবে ছয় ফুট লম্বা দেশি কলার কাঁদি। সেখানে ঝুলে আছে শত শত কলা। আর প্রতিটি স্টলই নান্দনিক ভাবে সাজানো হয়েছে।

প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে গ্রামীণ বাংলাদেশে কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে

গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের মিডিয়া বাজারে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে গ্রামে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায় এ বিষয়ে সেমিনার হয়। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনেতিক উপদেষ্ঠা ড. মসিউর রহমান। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউট ফর ইনফ্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইএনএম) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তফা কে মুজেরী। বক্তব্য দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. বিনয় সেন।

আলোচকদের বক্তব্যে উঠে আসে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের পণ্য কীভাবে সারা দেশসহ বিদেশে বাজারজাত করা যায়। বক্তারা প্রযুক্তির অগ্রগতির মাধ্যমে গ্রামীণ বাংলাদেশে কর্মসংস্থান তৈরিতে তাগিদ দেন।

সেমিনারে উপস্থাপিত পর্যবেক্ষণে উঠে আসে প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ ও ক্রমবর্ধমান ব্যবহার-উপযোগিতার সুফল পেতে হলে গ্রামাঞ্চলের তরুণ-যুবদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত নীতি প্রণয়ন, বাস্তবায়ন এবং পর্যাপ্ত অর্থায়ন।

সেমিনারের সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, মানবকেন্দ্রিক উন্নয়নের আলোকে উপযুক্ত অর্থায়নের পাশাপাশি প্রযুক্তি, কারিগরি, বিপণন ও চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করে পিকেএসএফ; যা টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

(ঢাকাটাইমস/১৬নভেম্বর/ মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

জনতা ব্যাংকের নতুন ডিএমডি মো. ফয়েজ আলম

‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০২৩’ পেল ওয়ালটন

আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

তাপপ্রবাহ: ২ হাজার শ্রমজীবীকে সোনালী ব্যাংকের ছাতা উপহার

রংপুরে জনতা ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স অ্যাওয়ার্ড পেল ইসলামী ব্যাংক

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের উপশাখাসমূহের বার্ষিক ব্যবসায়িক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আরও ৪ বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান হলেন শিবলী রুবাইয়াত

অতি গরমে কী ক্ষতি হচ্ছে আম ধান পোল্ট্রিতে, কতটা প্রস্তুত কৃষি খাত

ন্যাশনাল ব্যাংকের ২০২৩ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদিত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :