উন্নয়ন মেলায় বেচাকেনার ধুম

জহির রায়হান, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:০৯
অ- অ+

মিরপুর থেকে এসেছে ইমরান হোসাইন। হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ। কি কেনা হয়েছে জিজ্ঞাস করতেই তিনি বলেন, কিনতে ইচ্ছে করেছে অনেক কিছুই। যা দেখি তাই ভাল লাগে। নিজের জন্য দুইটি শার্ট কিনেছি, মায়ের জন্য জামদানি শাড়ি কিনেছি। বাসার জন্য জানালার পর্দা কিনলাম। মিষ্টি সহ কয়েক প্রকার খাবার আইটেম কিনলাম।

বেসকারি চাকরিজীবী ইমরানের মতো অনেকেই মেলায় এসে সেরে নিচ্ছে প্রয়োজনিয় কেনা কাটা। সরাসরি উৎপাদকের পণ্য পাওয়ায় সুলভ মূল্যে ভালো মানের পণ্য পাচ্ছে তারা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গত ১৪ নভেম্বর সপ্তাহব্যপি শুরু হয়েছে পিকেএসএফ উন্নয়ন মেলা। এতে সারা দেশ থেকে যোগ দিয়েছে পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগী সংস্থার বিভিন্ন উন্নয়ন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। প্রায় ১৯৫ স্টলে প্রান্তিক কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়েছে ১২৫টি প্রতিষ্ঠান।

মেলার আয়োজন সূত্রে জানা গেছে গত শনিবার পর্যন্ত মেলায় এক কোটি ছয় হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে এবং উদ্যেক্তারা অর্ডার পেয়েছে ৯২ লাখ ৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত শনিবার বিক্রি হয়েছে ৪১ লাখ ৪৯ হাজার টাকা আর অর্ডার এসেছে ২৮ লাখ ৭৩ হাজার।

মেলায় নিত্যব্যবহার্য পণ্য থেকে শুরু করে প্রান্তিক ক্ষুদ্র উৎপাদকদের উৎপাদিত বিষমুক্ত কৃষিপণ্য, খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী, প্রসিদ্ধ ও সমাদৃত হাজারো পণ্যের সমাহার রয়েছে। আর এগুলো দামেও সাশ্রয়ী।

ক্রেতারা ব্যাগভর্তি করে কিনছেন খাদ্যপণ্য, পোশাক, কসমেটিকস, গৃহস্থালী সামগ্রী।

রবিবার মেলা ঘুরে দেখা যায় কেউ কাঁসা-পিতলের তৈজসপত্র কিনছে কেউ কিনছে শতরঞ্জি। কেউবা আবার ঘর সাজানের সামগ্রি। অনেকে আবার মুখরোচক পিঠা, মিষ্ঠি ও বিভিন্ন খাবার খাচ্ছে।

পিকেএসএফ এর সহযোগিতা এবং বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ওসাকার স্টলে দেখা যায় বিভিন্ন ডিজাইনের ফরমাল সার্ট সহ বিভিন্ন পোশাক রয়েছে। এখানে সার্ট বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা। ওসাকার প্রডাকশন অফিসার জাহিদুল ইসলাম ঢাকাটাইমকে বলেন, আমাদের ১০ হাজার ৩৩০ জন সদস্য এর মধ্যে ৫ হাজার উদ্যেক্তা আর কারিগর আছে পাঁছ হাজার। ডিজাইনার সহ সার্ভিস প্রভাইটার রয়েছে ৩৩০ জন। পাবনা সদরে আমাদের ফ্যক্টরি । সদস্যদের পণ্য বাজারজাত করতে সহায়তা করছি আমরা। আমরা তাদের প্রয়োজনিং প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আমাদের পণ্য মালশিয়া, ভারত , সিঙ্গাপুরে রপ্তানি হচ্ছে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, মেলায় আমাদের বেশ ভালো বিক্রি হয়েছে। গতকাল (শনিবার) ৫৮ হাজার ৫৬০ টাকা বিক্রি হয়েছে।

পিকেএসএফের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) ড. জসীম উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, গত ২৫ বছরে পিকেএসএফ ১৮ লাখ উদ্যোক্তা তৈরী করেছে। আমরা তাদের পণ্য প্রচার ও প্রসারে কাজ করছি। আমারা গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের সঙ্গে শহরের মানুষের সেতুবন্ধন তৈরী করছি। তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করণে সহায়তা করছি। আমরা উদ্যেক্তাদের সঙ্গে ক্রেতার পরিচিত করিয়ে দিচ্ছি।

মেলায় বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে জসীম উদ্দিন বলেন, মেলায় এক পোশাক বিক্রেতার চায়না থেকে অর্ডার পেয়েছে। এমনকি ইউরোপ থেকেও অনেক পণ্যের অর্ডার আসেছে। আসলে আমরা আমাদের সহোযোগি সংস্থার মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া থেকে শুরু করে তাদের উৎপাদদিন পণ্য বাজারজাত করতে সয়তা করছি। আমরা ক্রেতা বিক্রেতার একটা লিংক করে দিচ্ছি।

জসীম উদ্দিন বলেন, ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগ্রহর কথা চিন্তা করে মেলার সময় এক ঘন্টা বাড়ানো হয়োছে। রাত আটটার পরিবর্তে রাত নয় টায় মেলা শেষ হবে। শুরু হবে যথারিতি সকাল ১০ টায়।

বিডিএসের স্টলটি সাজানো নারকেলের খোল দিয়ে গহনা, শোপিসসহ বিভিন্ন শৌখিন সামগ্রী দিয়ে স্পলে দায়িত্বে রয়েছে জেম্স তিমথী অধিকারী (পলাশ) তিনি ঢাকাটাইসকে বলেন, আমার মা মনোপ্রভা অধিকারী ১৯৯৫ সালে বাবার সহোযোগিতায় শুরু করেছিলেন এসব সামগ্রি বানানো। এসব পণ্যে প্রচুর চাহিদা। আমাদের যে পণ্য আছে তা আজকেই শেষ হয়ে যাবে মনে হয়। বরিশাল সদরে তাদের প্রতিষ্ঠান বলে জানান পলাশ। বিডিএস তাদের পণ্য বাজারজাত করণে সহায়তা করছে।

মনোপ্রভা উচ্ছ্বাস নিয়ে বলেন, আমরা প্রথম বউনি (বিক্রি) করেছি প্রধানমন্ত্রী কাছে। তিনি আমাদের থেকে বেশ কয়েকটি পণ্য কিনেছেন।

মেলায় বিভিন্ন প্রিন্ট ও হাতের কাজের মাধ্যমে শাড়ি, থ্রি-পিস শার্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া ও শিশুদের পোশাক, নান্দনিক গহনা। ছেলেদের শর্ট পাঞ্জাবি আর লং পাঞ্জাবিতে থাকছে এম্রডারি, প্রিন্ট বা এপ্লিকের কাজ। রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের শার্ট। বিষ মুক্ত শবজি। প্রসিদ্ধ খাবার। বাচ্চাদের খেলনার সামগ্রি সহ হরেক পণ্য।

বেসরকারি চাকরিজীবী আলাউদ্দিন এসছে পরিবার নিয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, সকালে মেলায় এসেছি দুপুর হয়ে গেলেও মেলা থেকে বেরই হতে ইচ্ছে করছে না। পরিবারের জন্য কিছু কেনা কাটা করলাম। আসলে সব পণ্য মেলায় থাকায় একটা না একটা আপনার প্রয়োজন হবেই।

আলাউদ্দিন বলেন, আজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখেই বাসায় ফিরবো। শুনেছি সন্ধায় আদিবাসী নৃত্য হবে, গম্ভীরা গান হবে। বলতে পারেন কেনাকাটাও হলো, আবার পরিবার নিয়ে ঘোরাও হলো, সঙ্গে বিনোদন ফ্রি। ২০ নভেম্বর শেষ হওয়া এ মেলায় ফ্রি প্রবেশ করা যাবে।

ঢাকা টাইমস/১৭ নভেম্বর/ জেআর/আরএ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কুমিল্লায় সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট অচল, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে নগরবাসী
ইরানকে সংঘাত বন্ধে প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প
২৪ ঘণ্টায় আরো ২৩৪ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ইসরায়েলের বিমান হামলা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা