মানবতাবিরোধী অপরাধ

ফাঁসির দণ্ড নিয়ে পলাতক ৩৬ আসামি

আমিনুল ইসলাম মল্লিক
| আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:২৭ | প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০১৯, ০৯:৫৯

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এখন পর্যন্ত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৬৮ জন। এদের মধ্যে হয়েছে মাত্র ছয়জনের। কারাগারের কনডেম সেলে থাকার পাশাপাশি মারা গেছেন ২৬ জন। আর পলাতক রয়েছেন ৩২ জন আসামি।

২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ৪০টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এসব মামলায় মোট আসামি ১০৪ জন। এদের মধ্যে ৯৪ জনকে সাজা দেয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার পূর্বে কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা গেছেন আটজন। পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন দুজন।

যেসব আসামি মারা গেছেন লতিফ তালুলকদার (বাগেরহাট), সোলেমান মোল্লা (শরীয়তপুর), মো. লুৎফর মোড়ল (যশোর) মো. ইউসুফ (নোয়াখালি), আমজাদ আলী (ময়মিনসিংহ), মো. ওয়াজ উদ্দিন (ময়মিনসিংহ), আব্দুর রহমান (নেত্রকোনা), আহম্মেদ আলী (নেত্রকোনা) এনায়েত উল্লাহ মনজু (নেত্রকোনা), মো. আজগর হোসেন খান গাইবান্ধা।

আর আটক হওয়া আসামী ৪৬ জন। পলাতক রয়েছেন ৪৮ জন। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী একজন। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৬৮ জন। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ২৪ জন। সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামির সংখ্যা একজন।

২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণা করা হয় জামায়াত নেতা আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের। রায়ে তাকে ফাঁসি দণ্ড দেয়া হয় তাকে। তিনি পলাতক রয়েছেন। এই আসামির বাড়ি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী থানায়। ২০১২ সালে এই আাসমির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর ফেনী জেলার দাগন ভূঁইয়া থানার মো. আশরাফুজ্জামান খান ওরফে নায়েব আলীর বিরুদ্ধে মামলায় ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। আরও এক আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তবে তার নাম জানা যায়নি। আসামি এখনো পলাতক। দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালে তার ঘোষণা করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা একই বছর।

২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয় ফরিদপুরের বিএনপি নেতা এমডি জাহিদ হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে। ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থানায় তার বাড়ী।

২০১৫ সালের ৯ জুন ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয় ব্রাম্মনবাড়িয়া জেলার সৈয়দ মো. হাছান আলীর। ২০১৪ সালে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

২০১৬ সালের ৩ মে রায় ঘোষণা করা হয় কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার রাজাকার কমান্ডার গাজী মো. আব্দুল মান্নান, নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে মো. নাছির ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির ও মো. হাফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায়। ৩ জন তারা সবাই পলাতক রয়েছেন।

২০১৬ সালের ১৮ জুলাই মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয় জামালপুরের আব্দুল মান্নান, আশরাফ আলী ও আব্দুল বারি। এসব আসামি পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় একই বছর।

২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত হন শরীয়তপুর জেলার পালং থানার মো. ইদ্রিস আলী সরদার। ২০১৫ সালে তার বিরুদ্ধে মামালা দায়ের করা হয়।

২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয় সৈয়দ মোহাম্মাদ হুসাইন ওরয়ে হোসেনের বিরুদ্ধে। এই আসামীর বাড়ী কিশোর জেলার নিকলি উপজেলায়। ট্রাইব্যুনাল-১-এ তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন।

২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আবু সালেহ মুহাম্মাদ আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, মো. রুহুল আমীন, আবু মুসলিম মোহাম্মাদ আলী, মো. নাজমুল হুদা, মো. আব্দুর রহিম মিয়ার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তাদেরকে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে এই আসামীদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১।

২০১৮ সালের ১০ জানুয়ারী মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয় মো. নেছার আলী ও মোবারক মিয়ার বিরুদ্ধে। এই ২ জন আসামীল বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর থানায়।

নোয়াখালি জেলার সুধারামপুর থানার আবুল কালাম ওরফে মো. একেএম মনসুরকে ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ রায়টি ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

২০১৮ সালের ১৩ জুলাই মৌলভী বাজারের আব্দুন নুর তালুকদার, আব্দুল মোছাব্বির মিয়াকে ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল-১।

২০১৮ সালের ৫ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানার মো. লিয়াকত আলী ও মো. আমিনুল ইসলামকে ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১৬ সালে মামলা দায়ের করা হয়।

২০১৯ সালের ২৮ মার্চ নেত্রকোনা জেলার পুর্বধলা থানার শেখ আব্দুল মজিদ ওরফে মজিদ মাওলানা, মো. আব্দুল খালেক তালুকদার, মো. কবির খান, আব্দুস সালাম বেগ ও মো. নুর উদ্দিনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজা দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

২০১৯ সালের ২৪ এপ্রিল নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া থানার হেদায়েত উল্লাহ আনজুকে ফাঁসির সাজা দিয়ে রায় ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল-১। তার বিরুদ্ধে মামলা হয় ২০১৭ সালে।

২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর গাইবান্ধা জেলার মো. আব্দুল জব্বার মন্ডল, মো. জাছিচার রহমান ওরফে খোকা, মো. আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডল, মো. মনতাজ আলি বেপারি ওরফে মমতাজকে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসির সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল।

তবে এসব পলাতক আসামীদের ধরতে আইন শৃংখলা বাহিনী তৎপর রয়েছেন বলে জানা গেছে। আসামীদের নাম ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার ওসি ও জেলা প্রশাসক বরাবর আদালতের আদেশের অনুলিপি পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এসব আসামিদের ধরতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রায়ের কপি সরবরাহ করা হয়েছে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে। তারা জানিয়েছেন আসামিদের ধরতে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে আরও জোরালো ভুমিকা রাখবেন বলে আমরা মনে করি।’

(ঢাকাটাইমস/২১নভেম্বর/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আদালত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আদালত এর সর্বশেষ

৩০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি: সাবেক প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর ৪ ছেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে জিএম কাদেরের দায়িত্ব পালনে বাধা নেই: আপিল বিভাগ

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলা: আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

যুক্তরাজ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের সাম্রাজ্যের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট 

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় আজ

আফতাবনগরে পশুর হাট বসানোয় হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

তিন মাসের ব্যবধানে আরেক মামলায় খালাস পেলেন গোল্ডেন মনির

আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যামামলা: আপিল শুনানি দ্রুত করতে আসামির আবেদন

পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারাদেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট

এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :