‘রঙ্গিলা গার্ল’ উর্মিলার অজানা অধ্যায়

বিনোদন ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৫ মে ২০২০, ২০:৩৬

মাত্র ছয় বছর বয়সে ফিল্মি দুনিয়ায় হাতেখড়ি। বড়বোনও ছিলো অভিনেত্রী। তাই ছোট থেকেই উর্মিলার শখ ছিল অভিনেত্রী হবেন। প্রখ্যাত পরিচালক শ্যাম বেনেগালের ‘কলিযুগ’ দিয়ে বলিউডি দুনিয়ায় যাত্রা শুরু। তখন যদিও তিনি খুবই ছোট।

এরপরের ইতিহাস তো কমবেশি জানাই। রামগোপাল বর্মার সঙ্গে সম্পর্ক, শারীরিক নির্যাতনের শিকার থেকে শুরু করে এক রাতের মধ্যেই সুপারস্টার তকমা— মহারাষ্ট্রের এক মারাঠি পরিবারে জন্ম নেওয়া ঊর্মিলা মাতণ্ডকরের জীবন যেন এক বর্ণময় অধ্যায়।

মাত্র ছয় বছর বয়সে মরাঠি ছবি ‘জাকোল’ দিয়ে ফিল্মি দুনিয়ায় হাতেখড়ি হয় তাঁর। ছোট থেকেই শখ ছিল অভিনেত্রী হবেন। তাঁর দিদিও সিরিয়ালে অভিনয় করতেন। তাঁর প্রথম হিন্দি ছবি শ্যাম বেনেগল পরিচালিত ‘কলিযুগ’। রেখা, রাজ বব্বরের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে এই ছবিতে কাজ করার সুযোগ।

১৯৮৩ সালে ঊর্মিলা অভিনয় করেন শেখর কাপূর পরিচালিত ছবি ‘মাসুম’ সিনেমায়। এই ছবিতে ‘লাকড়ি কি কাটি’ গানটি তার ওপরেই আধারিত ছিল। প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেতা হিসেবে ঊর্মিলার প্রথম হিন্দি ছবি ‘নরসিংহ’। ওই ছবিতে ঊর্মিলা ছাড়াও ছিলেন সানি দেওল, ডিম্পল কাপাডিয়া এবং ওম পুরীর মতো অভিনেতা।

বলিউড এবং দক্ষিণী ছবিতে পরপর কাজ করলেও স্টারডম যেন কিছুতেই ছুঁতে চাইছিল না ঊর্মিলাকে। অভিনয়ের প্রশংসা হচ্ছিল ঠিকই। কিন্তু সুপারস্টার ট্যাগ কিছুতেই পাচ্ছিলেন না তিনি। এ অবস্থায় ‘গার্ডিয়ান এঞ্জেল’ হিসেবে আবির্ভাব ঘটে পরিচালক রামগোপাল বর্মার।

১৯৯২ সাল নাগাদ রামগোপাল বর্মা ঠিক করেন ‘দ্রোহী’ বলে একটি ছবি বানাবেন। সে ছবিতে পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। মাধুরীর বাজার তখন তুঙ্গে। কিন্তু ডেট ম্যাচ না করায় সেই ছবি নাকচ করে দেন মাধুরী। এদিকে রামও ছাড়বার পাত্র নন। তিনি ঠিক করেন হুবহু মাধুরীর মতো দেখতে হবে এমন এক অভিনেত্রীকেই ওই ছবিতে কাস্ট করবেন তিনি।

ইন্ডাস্ট্রিতে তখন ঊর্মিলাকে দেখতে মাধুরী এবং শ্রীদেবীর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছিল। রামও সেটা জানতেন। তাই মাধুরী ফিরিয়ে দেওয়ার পর ঊর্মিলাকে সেই ছবি অফার করেন তিনি। এরকম একটি অফারের সন্ধানেই ছিলেন ঊর্মিলা। তিনি শোনামাত্র রাজি হয়ে যান।

কে জানত মাধুরীর এই না-করা ছবি আশীর্বাদ হয়ে আসবে ঊর্মিলার জীবনে? ‘দ্রোহী’র শুটিংয়ের সময় একদিন ডান্স কোরিওগ্রাফার অসুস্থতার কারণে সেটে আসতে পারেননি। এদিকে শুটিংয়ের সমস্ত আয়োজন হয়ে আছে। একটি নাচের দৃশ্যে ঊর্মিলাকে রামগোপাল বলেন, ‘তোমার যেরকম ইচ্ছে মুভমেন্ট করো। আমি শুট করে নেব।’

ঊর্মিলার শরীরী হিল্লোল দেখে রাম তখনই ঠিক করেন তাকে নিয়ে আরও ছবি বানাবেন তিনি। তার সৌন্দর্যে অবাক হয়ে যান পরিচালক। রামের নতুন অবসেশন হন ঊর্মিলা মাতণ্ডকর।

ওই একটি নাচের দৃশ্য থেকেই জন্ম রামগোপাল বর্মার আইকনিক ছবি রঙ্গিলার। এক দিকে জ্যাকি শ্রফ এবং অন্য দিকে আমির খান। দুই সুপারস্টারের মাঝে জায়গা হয় ঊর্মিলার। জ্যাকি এবং আমিরের স্টারডমের কাছে ঊর্মিলার চরিত্র যাতে ফিকে না হয়ে যায় সেদিকে কড়া নজর ছিল রামের।

আর সে জন্যই ১৯৯৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘রঙ্গিলা’ মুক্তি পেতেই চারিদিকে হইহই পড়ে যায়। দর্শকের নতুন ক্রাশের নাম রাতারাতি হয়ে যায় ‘মিলি’ ওরফে ঊর্মিলা। ওই ছবির ফ্যাশন ডিজাইনার মণীশ মালহোত্রকেও রাম কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন, ছবিতে যেন ঊর্মিলাকে হুবহু শ্রীদেবীর মতো দেখতে লাগে। পরিচালকের কথা মেনে সে রকম জামাকাপড়ই বানিয়েছিলেন মণীশ।

বাকিটা ইতিহাস। এতবছর পরেও ঊর্মিলার সেই ‘আইরে আইরে’ আজও একই রকম জনপ্রিয়। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ঊর্মিলাকে। এক রাতের মধ্যেই তিনি পেয়ে যান সুপারস্টার তকমা। আর রামও পণ করে নেন, এই মেয়েকে তিনি সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যাবেন।

তখন রামের ছবি মানেই তখন ঊর্মিলা। তিনি ছাড়া ছবি করার কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন রামগোপাল বর্মা। ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুদের বলে বেড়াতেন, ঊর্মিলা তার ‘লাকি চার্ম’। এদিকে ঊর্মিলাও রামগোপালের পরিচয় দিতেন মেন্টর হিসেবে।

রামের ‘দাউদ’ ছবিতে প্রথমে তিনি অশ্বিনী ভাবেকে নিলেও শেষমুহূর্তে সেই ছবিতেও জায়গা হয়ে যায় ঊর্মিলার। শুধু তাই নয়, ‘সত্য’ ছবিতে প্রথমে নেওয়ার কথা ছিল মহিমা চৌধুরীকে। তিনি ছবিতে সইও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু রামের সেই ছবিতেও বাদ পড়েন মহিমা। নেওয়া হয় ঊর্মিলাকে।

অন্যদিকে ঊর্মিলাও ‘গুরু’ রামের অনুমতি ছাড়া কোনও ছবিতে সই করতেন না। সুপারহিট ছবি ‘দিল তো পাগল হ্যায়’ ছবিতে করিশ্মা কপূরের চরিত্রটির অফার প্রথমে ঊর্মিলার কাছে আসে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। কারণ রাম বারণ করেছিলেন। ইন্ডাস্ট্রি মাথা চাপড়েছিল। শাহরুখ-মাধুরীর ওই ছবি না নিয়ে তিনি যে ভুল করছেন, সে বিষয়ে সাবধান করেছিলেন অনেকেই।

রামের সঙ্গে ঊর্মিলার সম্পর্ক নিয়ে সেসময় সরগরম ছিল বলিউড। মুখে গুরু-শিষ্য বললেও সম্পর্ক যে আরও গভীর, তা বুঝতে কারও অজানা ছিল না। খবর পৌঁছয় রামগোপালের স্ত্রীর কাছে। শোনা যায়, স্বামীর এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের কথা শুনে নিজেকে স্থির রাখতে পারেননি তিনি।

চড় মেরে বসেন ঊর্মিলাকে। ঊর্মিলাকে চড়! মানতে পারেননি রামগোপালও। স্ত্রীকে কয়েকদিনের মধ্যেই ডিভোর্স দিয়ে দেন তিনি। এরপর সব ঠিক চলছিল। কিন্তু এই সময়েই হঠাৎই রামের জীবনে প্রবেশ ঘটে অন্য এক নারীর। তিনি অন্তরা মালি। ঊর্মিলাকে ছেড়ে রাম মজেন অন্তরাতে। লিড রোলে ঊর্মিলার বদলে ক্রমে নিতে থাকেন অন্তরাকে।

আর ঊর্মিলা? পায়ের তলার মাটি ক্রমশ সরে যেতে থাকে তার। যে মানুষটাকে এতদিন নিজের সবকিছু ভেবে এসেছিলেন, তার এমন ব্যবহারে ভেঙে পড়েন তিনি। ছবির অফারও কম আসতে থাকে। রামগোপালের ছবিতেও পেতে থাকেন সাইড রোল।

এদিকে এতদিন যাবত রামের ছত্রছায়ায় থাকার জন্য সেভাবে অন্য যোগাযোগও তৈরি হয়নি ঊর্মিলার। তাই হাতে গোনা ছবি পেতে থাকেন তিনি। এদিকে বয়সও বাড়ছিল। পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল প্রতিযোগিতা।

সেসময় মাধুরী, ঐশ্বরিয়া ছাড়াও দৌড়ে চলে এসেছিলেন প্রীতি, রানি, প্রিয়াঙ্কারা। বেশ কিছু ছবি করেছিলেন ঊর্মিলা। কিন্তু বক্স অফিসে সেগুলো খুব একটা দাগ কাটতে পারেনি।

রিয়ালিটি শোর বিচারকের ভূমিকায় নামেন। কিন্তু সেখানেও যে প্রতিযোগিতা! অবশেষে ২০১৬ সালে মহসিন আখতার নামে এক কাশ্মীরি ব্যবসায়ীকে চুপিচুপি বিয়ে করেন ঊর্মিলা।

সেই সাদামাটা বিয়েতে বলিউডের বন্ধু বলতে উপস্থিত ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার মণীশ মালহোত্র। মণীশের এক হাউজ পার্টিতেই প্রথমবার মহসিনের সঙ্গে আলাপ হয় ঊর্মিলার।

কিন্তু কানাঘুষো শোনা যায়, সেই বিয়েও খুব একটা সুখের হয়নি। মহসিন নাকি তার ওপর শারীরিক নির্যাতন করেন। যদিও ঊর্মিলা এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনওদিনও কিছু বলেননি। জানাননি কোনও অভিযোগও।

সবশেষ গত বছর ঊর্মিলা যোগ দেন রাজনীতিতে। লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে লড়াইও করেন। কিন্তু ভোটে হেরে দল থেকেই ইস্তফা দেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়েছে জনপ্রিয়তা। ‘রঙ্গিলা গার্ল’ আজ হারিয়ে গিয়েছেন গ্ল্যামারের অন্ধকারে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিনোদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :