করোনাকালে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিল, সমাধান কী?

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২৬ মে ২০২০, ১৯:৩৭
অ- অ+
ফাইল ছবি

রাজধানীর কলাবাগানের বাসিন্দা শাহনাজ পারভীনের প্রতিমাসে বিদ্যুৎ বিল আসে ১০০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু লকডাউনের কারণে দুই মাস পরে যে বিল এসেছে, তাতে তার প্রতিমাসের বিল এসেছে দেড় হাজার টাকা করে। অথচ তার বাসায় ফ্রিজ আর টিভি, কয়েকটি ফ্যান ছাড়া অন্যকোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম নেই।

তারচেয়েও বেশি জটিলতায় পড়েছেন আরেকজন বাসিন্দা ফারহানা মিলি। তিনি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ঢাকা শহরে একুশ বছর ধরে বাসা ভাড়া করে থাকছি- এত টাকার ইলেক্ট্রিসিটি বিল চোখে দেখার সৌভাগ্য কখনও হয়নি। ‍দু'মাসের জন্য ১১,১২০ টাকা- গড়ে প্রতি মাসে পৌনে ছয় হাজার টাকা। কীভাবে সম্ভব!'

তিনি জানাচ্ছেন, তার প্রতিবেশীর বাসায় একাধিক এয়ারকন্ডিশনার থাকার পরেও তার বিদ্যুৎ বিল তার চেয়ে কম এসেছে।

‘প্রতি গরমে আমার এ বাসায় মাসপ্রতি বিল সর্বোচ্চ একবার হয়েছিল ১৯০০ টাকা, যেটিও ছিল অস্বাভাবিক। সাধারণত ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা দিয়ে এসেছি। শীতের দিনে হাজার থেকে ১২০০ টাকা। জানি না এবার কী হয়েছে। হয়তো বিদ্যুৎ বিভাগ বলবে, আমরা বিদ্যুৎ খেয়েছি বসে বসে!' তিনি লিখেছেন।

ফারহানা মিলি বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘অনুমাননির্ভর বিদ্যুৎ বিল হলেও, এতো টাকার বিল তো হওয়ার কথা নয়। আর তারা অনুমাননির্ভর বিল দেবেই বা কেন? হয় ঠিকমতো বিল দেবে, না হলে পরে সব একবারে দেবে। আমি যা ব্যবহার করতো, সেটারই তো বিল আসার কথা। অনুমানের ওপর আমাকে বিল দিতে বলা হবে কেন?'

শুধু ঢাকাতেই যে এই চিত্র, তা নয়। ঢাকার বাইরে বেশ অনেক স্থানে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বিল পাওয়ার অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা।

শরীয়তপুরের বাসিন্দা শামিমুল হক জানাচ্ছেন, সাধারণ প্রতিমাসে যে টাকার বিদ্যুৎ বিল আসে, এই দুই মাসে কয়েকশো টাকা বেশি বিল এসেছে।

প্রতিমাসে গড়ে তাদের ১০০০-১২০০ টাকা বিল আসে। কিন্তু গত দুই মাসের বিল এসেছে ৪০০০ টাকা।

বরগুনার বাসিন্দা নাজমুল হক জানাচ্ছেন, সাধারণত প্রতিমাসে তার বাড়িতে যতটা বিল আসে, গত দুই মাসে তার চেয়ে কয়েকশো টাকা করে বেশি এসেছে।

এর কারণ কী?

বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ও মিটার রিডারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর মিটার রিডাররা বাসায় বাসায় গিয়ে মিটারের বর্তমান রিডিং নিয়ে আসেন। সেই রিডিং থেকে আগের মাসের প্রাপ্ত রিডিং বাদ দিলেই এই মাসের ব্যবহৃত বিদ্যুতের হিসাব পাওয়া যায়। সেগুলো বিভিন্ন স্ল্যাব অনুযায়ী হিসাব করে বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিল করা হয়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর অঘোষিত লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকে গত দুই মাস কোনো মিটার রিডার কারো বাসায় গিয়ে মিটার পর্যবেক্ষণ করেননি। এ কারণে মার্চ মাসে এ কারণে কাউকে কোনো বিলও পাঠানো হয়নি।

সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোনোরকম জরিমানা ছাড়াই বিদ্যুৎসহ সব পরিষেবার বিল পরিশোধ করা যাবে।

মে মাসের মাঝামাঝি অনেকটা হঠাৎ করেই মার্চ ও এপ্রিল মাসের বিল একত্রে গ্রাহকদের পাঠানো হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে মিটার রিডাররা এই বিল কোনো বাসায় না গিয়ে অনুমানের ভিত্তিতে তৈরি করেন।

ঢাকা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলছেন, 'আমাদের আওতাভুক্ত এলাকার মধ্যে ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জও রয়েছে। সাধারণ ছুটি শুরু হওয়ার পর আমাদের মিটার রিডাররা আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখতে পারেনি। আমাদেরও শুধুমাত্র জরুরি সেবা চালু রয়েছে। এ কারণে গড় ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে বিল করা হয়েছে।'

তবে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মতিউর রহমান বলছেন, 'ছুটির কারণে মানুষ বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকছে। গরমের সময় ফ্যান বা এসিও বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় কিন্তু বাসায় বিদ্যুৎ বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের বিল একটু বেশি আসবে।'

তিনি জানান, মিটার রিডারদের এ কারণে গড়ে ২০ শতাংশ কমবেশি করে অনুমানের ওপর বিল করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে 'দুর্ঘটনা' ক্রমে কিছু বিল অস্বাভাবিক বেশি হয়ে যেতে পারে বলে তিনি বলছেন।

তিনি বলছেন, মিটার রিডাররা হাতে লিখে বিল তৈরি করে জমা দেয়ার পরে সেটা কম্পিউটারে পোস্টিং দেয়া হয়। সেখান থেকে বিল তৈরি হয়ে গ্রাহকদের কাছে যায়। একদিকে তারা অনুমানের ওপর এই বিল করেছেন, আবার সেটি লেখা বা কম্পিউটারে পোস্টিংয়ের সময় কোনো ভুল ক্রুটির কারণে বিলের অংক বেশি হয়ে যেতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।

অস্বাভাবিক বিলের কী হবে?

ডিপিডিসি, ডেসকো বা পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা বলছেন, যারা অস্বাভাবিক বিল পেয়েছেন, তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো দরকার নেই। নিকটস্থ দপ্তরে যোগাযোগ করলে তাদের এসব বিল ঠিক করে দেয়া হবে। পাশাপাশি জুন মাসে মিটারের রিডিং দেখে বিল করা হলে সেখানেও সমন্বয় করা হবে।

তবে অনেক গ্রাহক যে অস্বাভাবিক বিল পেয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন, এই প্রসঙ্গে ডিপিডিসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলছেন, ‘এটি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অনেকে আমাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেছেন। যারা যোগাযোগ করেছেন তাদের বিল ঠিক করে দেয়া হয়েছে। বাকি যারা রয়েছেন, তাদের বিলও সামনের মাসে ঠিক হয়ে যাবে।'

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মতিউর রহমান বলছেন, ‘মে মাস থেকেই আমাদের মিটার রিডাররা আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে বিল আনতে শুরু করেছেন। ফলে আগের বিলের সঙ্গে বর্তমান রিডিং মিলিয়ে নতুন বিল আসবে। কেউ যদি আগে বেশি টাকা জমা দিয়ে ফেলেন, এই মাসে তার বিল অনেক কম আসবে। আবার কেউ বিল জমা না দিলে এই মাসেই রিডিং অনুযায়ী বিল আসবে।'

ঢাকা ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাওসার আমির আলী বলছেন, 'আমাদের এরকম বেশি বিল হওয়ার ঘটনা খুব কম। কিন্তু তারপরেও অভিযোগ এলে সবগুলো দপ্তরকে বলা রয়েছে যেন তাক্ষৎণিকভাবে বিল ঠিক করে দেয়া হয়।'

তিনি বলছেন, বিদ্যুৎ বিল আসে মিটারের ইউনিট ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। কারো বিল বেশি এসেছে মানে সেখানে ইউনিট ব্যবহার বেশি দেখানো হয়েছে।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলছেন, কেউ যদি বিলের টাকা জমা দিয়ে থাকেন, তাহলে পরের মাসে তার ব্যবহৃত ইউনিটের সংখ্যা অনেক কম আসবে। ফলে স্বাভাবিকভাবে তার বিলও কম হবে, অর্থাৎ সেটা সমন্বয় হয়ে যাবে। আর কেউ এখন এই বিল জমা দিতে না চাইলে পরের মাসে গিয়ে তার আসল ব্যবহারের বিল আসবে। ফলে সেখানেও এটা সমন্বয় হয়ে যাবে। -বিবিসি বাংলা

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
হাতিরপুলে গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ের সামনে দুই ককটেল বিস্ফোরণ
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১৬৯০ জন
এনসিপির ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ও যোদ্ধাদের স্মরণে ‘বিআরপি’র মশাল মিছিল
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা