বিনা খরচে ঢাকায় আম নিয়ে যাচ্ছে ডাক বিভাগ

রাজশাহী ব্যুরো, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২০, ১৬:৫৯

কোনো খরচ ছাড়াই রাজশাহীর চাষিদের আম ঢাকায় নিয়ে যাবে ডাক বিভাগ। মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়েছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের উদ্বোধন করেছেন। এরপর পুঠিয়া উপজেলা থেকে ডাক বিভাগের একটি কাভার্ডভ্যান ঢাকায় পাঁচ টন আম নিয়ে গেছে।

ডাক বিভাগ জানিয়েছে, বুধবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আরেকটি কাভার্ডভ্যান ঢাকায় আম নিয়ে যাবে। তারপর যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে কাভার্ডভ্যানের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হবে। মূলত রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিদের সুবিধা দিতেই এভাবে কোনো খরচ নেয়া ছাড়াই তাদের আম ঢাকায় নেয়া হবে।

করোনাভাইরাস মহামারির এই দুর্যোগকালে ডাক বিভাগের ‘কৃষকবন্ধু ডাক সেবা’ এর আওতায় এ কার্যক্রম শুরু হলো। শুধু রাজশাহীর আম নয়, এ কর্মসূচির আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৌসুমি ফল ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। এ জন্য চাষিকে কোনো খরচ দিতে হবে না। তবে কোনো ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্ত্বভোগী ডাক বিভাগের মাধ্যমে ফল পরিবহন করতে পারবেন না। সুবিধা নিতে হলে তাকে চাষিই হতে হবে।

মঙ্গলবার সকালে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ভিডিও কনফারেন্সে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যুক্ত হন। এ সময় তিনি ঢাকায় আম নিয়ে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। ঢাকা থেকে যুক্ত হয়েছিলেন তার মন্ত্রণালয়ের সচিব নূর-উর-রহমান।

পুঠিয়ায় রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক, রাজশাহী ডাক বিভাগের পরিচালক রশিদ কুমার শীল, উত্তরাঞ্চলের পোস্টমাস্টার জেনারেল শফিকুল আলম, পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওলিউজ্জামানসহ কৃষি ও ডাক বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আম চাষিরা উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোহাম্মদ ওয়াহিদ উজ-জামান জানান, ডাক বিভাগের মাধ্যমে বিনা খরচে ঢাকায় আম পাঠাতে হলে প্রান্তিক চাষিরা নিজ নিজ এলাকার কৃষি কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। কৃষি কর্মকর্তা তালিকা করে জেলা প্রশাসককে দেবেন। জেলা প্রশাসক তালিকা চূড়ান্ত করে দেবেন। তারপর বিনাখরচেই পর্যায়ক্রমে সবার আম ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক হামিদুল হক বলেন, দুর্যোগকালে প্রান্তিক চাষিদের সুবিধা দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী বিনাখরচে মৌসুমি ফল নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। মাঠ পর্যায়ে তারা এটি বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। এর মাধ্যমে প্রকৃত চাষিরা উপকৃত হবেন। তারা ঢাকায় ক্রেতা ঠিক করে বিনাখরচে আম নিয়ে যাবেন।

রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ক আম নামানো ঠেকাতে গেল চার বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দেয় জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম, ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত নামানোর সময় শুরু হয়েছে। ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারী আম-৪ জাতের আম।

গাছে গাছে ঝুলে থাকা আম দেখে চাষির স্বপ্ন যখন দুলছিল তখন গত ২২ মে ঘূর্ণিঝড় আপ্নানের প্রভাবে রাজশাহীতে ঝড়-বৃষ্টিতে প্রচুর আম ঝরে যায়।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সেদিন গাছের ১৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। এতে চাষিদের প্রায় ১২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আপ্পান যেতে না যেতেই ২৬ মে রাতে কালবৈশাখীতে ঝরে আরও অনেক আম। এখন হাটে উঠতে শুরু করেছে আম।

করোনাকালে বাজারজাত নিয়ে যেন সমস্যা না হয় সে জন্য এবারই প্রথম শুধু আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রেন চলবে। ট্রেনে দেড় টাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এবং এক টাকা ৩০ পয়সা কেজি ভাড়ায় আম ঢাকায় নেয়া যাবে। ঢাকায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো স্টেশনে আম নামানো হবে। কুরিয়ার সার্ভিসগুলোও আম পাঠাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সবশেষে যুক্ত হলো ডাক বিভাগ।

(ঢাকাটাইমস/২জুন/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :