মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

মো. জিয়াউল হুদা হিমেল
| আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২০, ১৯:৫৮ | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০২০, ১৬:৪৯

বিশ্বে অন্যতম বড় স্বাস্থ্যসমস্যা হিসেবে মানসিক সমস্যা বিবেচিত হয়। বাংলাদশে প্রায় ২ কোটি মানুষ মানসিক রোগে ভুগছে। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে আমাদের দেশেও এটি অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। কিন্তু সেই তুলনায় এই বিষয়টি বেশ উপেক্ষিত বলা চলে।

আমাদের মতো দেশে মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষিত হওয়ার কারণ হিসেবে অপ্রতুল চিকিৎসক, সেবার পরিধি, বাজেট, কুসংস্কার এবং সচেতনতার অভাবকে চিহ্নিত করা যায়। বিশ্বব্যাপী এই কারণগুলো পর্যালোচনা করে ২০০০ সালে ইউনিভার্সটি অব অস্ট্রেলিয়া মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক প্রতিবিধান বিষয়টি উদ্ভাবন করে। এর মাধ্যমে একজন সাধারণ মানুষ এই ট্রেনিং গ্রহণ করে মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক দিক, লক্ষণ, কারণ ও পরিচর্যা পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা লাভ এবং মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে পারবেন।

একজন প্রাথমিক প্রতিবিধানকারী সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি একজন মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে পেশাগত সেবা বা চিকিৎসা গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করতে পারবেন। এ ছাড়া কিছু সেলফ কেয়ার কাজকর্ম রয়েছে, যার মাধ্যমে মনের অবস্থা, চিন্তা-ভাবনা ভালো রাখা যায়। এর মুল উদ্দেস্য হলো প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম পন্থা- এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্য করে তোলা।

মানসিক স্বাস্থ্যের প্রাথমিক প্রতিবিধান বিষয়টি ২০১৭ সালে রোটারি ক্লাব, বাংলাদেশ স্কাউটস, অস্ট্রেলিয়ান এইডসহ কয়েকটি সংগঠনের যৌথ প্রচেষ্টায় ‘মেন্টাল হেলথ ফাস্ট এইড ইংল্যান্ড’-এর প্রশিক্ষক ও কারিকুলামের মাধ্যমে বাংলাদেশে চালু হয় একটি প্রকল্পের আওতায়। এই প্রকল্পের অধীনে ১২ জন স্বেচ্ছাসেবককে উন্নত প্রশিক্ষণ (টিওটি) দিয়ে দেশের তিনটি জেলায় ২৪টি ট্রেনিং কোর্স পরিচালনা করা হয়। এই ১২ জনের মধ্যে আমিও একজন ছিলাম। ২০১৮ সালে প্রকল্পটি সফলভাবে শেষ হলেও আমি কার্যক্রম বন্ধ করিনি। আমার মনে হয়েছে এই প্রশিক্ষণ শুধু প্রকল্পের জন্যই তো নয়, একজন স্কাউট লিডার হিসেবে আমার দায়িত্ব এই প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান যত বেশি সম্ভব মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। যত বেশি মানুষকে সচেতন করা যাবে তত বেশি মানুষ উপকৃত হবে, বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়, কারণ মানসিক সমস্যায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ১৪ থেকে ৩০ বছর বয়সী ছেলেমেয়েরা।

একজন ইয়ুথ এক্টিভিস্ট হিসেবে বেশ কয়েকটি যুব সংগঠনের মাধ্যমে প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নিজেকে মানসিক স্বাস্থ্য সেচতনতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচয় দিতে এখন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সমাজের প্রাভাবশালী মানুষ, সামাজিক সংগঠনের নেতা, কর্পোরেট লিডারদের কাছে বার্তা নিয়ে যাচ্ছি। তারা যেন, এই প্রচারকাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধরণা লাভ, মানসিক রোগের লক্ষণ দেখে রোগ বুঝতে পারা, মানসিক রোগের চিকিৎসা গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রতিকারে স্বনির্ভর কৌশল জানা যায়।

আমাদের চারপাশের ছাত্র, শিক্ষক, চাকরিজীবী, উদ্যোক্তা, বেকার, অভিভাবকসহ সব শ্রেণির মানুষ স্বল্প, মাঝারি কিংবা অতিমাত্রায় মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। ফলে দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন, পড়ালেখায় অমনোযোগী, পারিবারিক কলহসহ নানান সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ আমরা যদি সচেতন হই এবং সাধারণ রোগ হিসেবে শুরুতেই মানসিক রোগগুলো চিহ্নিত করতে পারি তাহলে সহজেই এর প্রতিকার করা সম্ভব। প্রতিনিয়ত কিশোর-যুবাদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা, তাই আবিভাবক, শিক্ষক, নেতা, সমাজকর্মী সবাইকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ধারণা, করণীয়, বর্জনীয় সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

লেখক: ইয়ুথ এক্টিভিস্ট; মাস্টার ট্রেনার, মেন্টাল হেলথ এওয়ারনেস; ডেপুটি ন্যাশনাল কমিশনার, বাংলাদেশ স্কাউটস।

(ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :