ওষুধ ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রাখুন মাইগ্রেন
মাইগ্রেন মাথা ব্যথা বর্তমানে খুব সাধারণ একটি স্নায়ুবিক রোগ। বিশ্বের প্রায় ১০% মানুষ এতে ভোগেন। প্রাচীনকালে এই মাথা ব্যথাকে ‘আধ কপালি’ ব্যথা বলা হত। মাইগ্রেন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘হেমিক্রেনিয়া’ থেকে। হেমি মানে অর্ধেক আর ক্রেনিয়া মানে মাথার খুলি বা করোটি। এই ব্যথা অর্ধ মাথায় হয় বলে এর নামকরণ করা হয় হেমিক্রেনিয়া আর বাংলা ‘আধ কপালি’।
মাইগ্রেন মাথার যে কোনো এক পাশ থেকে শুরু হয়ে বিস্তৃত আকার ধারণ করে। মস্তিষ্কের বহিরাবরণে যে ধমনিগুলো আছে সেগুলো মাথা ব্যথার প্রারম্ভে স্ফীত হয়ে ফুলে যায়। অর্থাৎ রক্তবাহী শিরাগুলো যখন মস্তিষ্কে ঠিকমতো রক্ত সরবরাহ করে না। সাধারণত এই ব্যথা দপদপ করে, মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি এবং বমি বমি ভাবে রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম হতে পারে। আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধা হয়। ঘনঘন হাই ওঠা, কাজে মনোনিবেশ করতে অসুবিধা, খিটখিটে মেজাজ ব্যথা হওয়ার আগে হতে পারে। মাইগ্রেন এক ধরনের প্রাইমারি হেডেক, যা নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। সব মাথা ব্যথা মাইগ্রেন নয়- দৃষ্টিস্বল্পতা, মস্তিষ্কের টিউমার, মাথায় অন্য সমস্যার কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে।
মাইগ্রেনের কারণ
বংশগত, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা, হরমোনের প্রভাব, আবহাওয়ার পরিবর্তন, মস্তিষ্কে বিভিন্ন রাসায়নিকের পরিবর্তন। এসব কারণেও মাইগ্রেন হতে পারে। মাইগ্রেন জিনঘটিত রোগ। পরিবারের কারও থাকলে, হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মস্তিষ্কের ট্রাইজেমিনাল নার্ভ উত্তেজিত হলে এই ব্যথা হয়। সেরেটোনিন নামক কেমিক্যালের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে এই ব্যথা হয় বলে মত চিকিৎসকদের। মাইগ্রেনের ব্যথায় অনেকেই ভোগেন। তবে অভ্যেস বদলে ওষুধ ছাড়াও এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
মাইগ্রেন প্রতিরোধের উপায়
মাইগ্রেন নিয়মিত চিকিৎসায় সেরে ওঠে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। তাৎক্ষণিক এবং প্রতিরোধক ওষুধের পাশাপাশি কিছু নিয়মকানুন মেনে চললে সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ও পরিমিত ঘুম দরকার।
অতিরিক্ত বা কম আলোতে কাজ না করা।
বেশি রোদ বা ঠান্ড পরিহার করা।
উচ্চশব্দ ও কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে বেশিক্ষণ না থাকা।
বেশি সময় ধরে ামাবাইল, কম্পিউটারের মনিটার ও টিভির সামনে না থাকা।
মাইগ্রেন শুরু হলে গেলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, বিশ্রাম করা, ঠান্ডা কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখা উচিত।
চিকিৎসা
সাধারণত মাইগ্রেনের ব্যথায় পেইনকিলার দেওয়া হয়। তবে দীর্ঘ দিন ধরে তা খেলে অন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। রোগী নিজে থেকে যদি কোনও পেইনকিলার খেতে শুরু করেন, তার পরিণাম আরও ভয়াবহ হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ সর্বাগ্রে প্রয়োজন। প্রেশার, টেনশনের রোগীদের সংশ্লিষ্ট ওষুধের ডোজ় কমিয়ে দেওয়া হয়। এতে অনেকটাই আরাম পাওয়া যায়।
খাদ্যাভ্যাস বদলে মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যাদের মাইগ্রেন রয়েছে, অতিরিক্ত কফি তাদের জন্য ক্ষতিকর। তবে মাইগ্রেনের অনেক ওষুধে কফির উপাদান থাকে। তাই পরিমিত কফি মাইগ্রেনের ব্যথায় উপশম দেয়। চকলেট, রেড ওয়াইন, ড্রাই ফ্রুটস, চিজ় জাতীয় খাবারও তারা এড়িয়ে চললে ভাল।
উপকারী তেল
ইউক্যালিপটাস অয়েল, মিন্ট অয়েল দিয়ে মাথায় মাসাজ করলে আরাম পাওয়া যায়। পাশাপাশি আরও যে উপসর্গ থাকে, তা-ও কম হয়। ল্যাভেন্ডার অয়েল যদি রোগী সেবন করেন, তা পনেরো মিনিটের মধ্যে কাজ করে।
রোগীর বিচক্ষণতা
এমন অনেক সুগন্ধী আছে, যা রোগীর যন্ত্রণা বাড়িয়ে দেয়। এগুলো সব সময়ে ব্যক্তিভিত্তিক। তাই রোগীকে বুঝতে হবে, কোন খাবারে সমস্যা হচ্ছে, কোন গন্ধে ব্যথা বাড়ছে। তবেই চিকিৎসক সাহায্য করতে পারবেন।
খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা উচিত। কিছু খাবার গ্রহণ করলে মাইগ্রেনের প্রতিরোধ হয়, যেমন- ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার- ঢেঁকি ছাটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি নিয়মিত খাওয়া। বিভিন্ন ফল খেজুর, ডুমুর, সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসব্জি ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়া।
কাজুবাদাম, ওয়ালনাট ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ হয় বলে খেতে পারেন। আদা কুচি চিবোলে উপকার পাওয়া যায়। সানফ্লাওয়ার অয়েলে রান্না করলেও রোগীর জন্য ভাল।
কিছু খাবার এড়িয়ে চললে মাইগ্রেনের ব্যথার সম্ভাবনা কম হয়। সেগুলো হলো- চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল, গম জাতীয় খাবার রুটি, পাস্তা ব্রেড ইত্যাদি।
রিফ্লেক্সোলজি বিন্দুসমূহ
১-৫, ২৫, ২৮
মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পেতে ওপরের প্রতিটি রিফ্লেক্সোলজি বিন্দুতে ৭০ থেকে ৮০ বা ২ মিনিট কাঠি দিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে হয়। প্রতি ১ সেকেন্ডে ১টি করে চাপ দিতে হবে। ৬ ঘণ্টা পর পর দিনে সর্বোচ্চ ৩-৪ বার রিফ্লেক্সোলজি করা যায়। একেবারে খালিপেটে অথবা ভরাপেটে রিফ্লেক্সোলজি করা ঠিক নয়। খাওয়ার আধা ঘণ্টা পর করা যাবে। রোগের বয়স যত দিন তার
১ : ১০ ভাগ সময়কাল (অর্থাৎ রোগের বয়স ১০ বছর হলে থেরাপি নিতে হবে ১ বছর ) পর্যন্ত থেরাপি করলে রোগ নিরাময় সম্ভব।
টিপস
যত দিন মাথার যন্ত্রণা না সারে তত দিন দিনে দুবার গরম পানিতে (যতটা গরম সহ্য করা যায়) ১০ থেকে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন।
খাঁটি ঘি সকাল ও বিকেলে ১ ফোঁটা করে নাকে দিলে বা বারবার শুঁকলে ব্যথা কমে যায়।
মাথার যেদিকটায় ব্যথা সেদিকের নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা সরিষার তেল দিলে বা শুঁকলেও ব্যথা কমে যায়।
(ঢাকাটাইমস/৩০আগস্ট/আরজেড/এজেড)