মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী

‘বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' প্রস্তাব

এস এম জাহাঙ্গীর আলাম সরকার, পিপিএম
| আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২১, ২০:২৫ | প্রকাশিত : ০৪ জানুয়ারি ২০২১, ১৯:২৩

'যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/ গৌরী মেঘনা বহমান

ততকাল রবে কীর্তি তোমার,/শেখ মুজিবুর রহমান!/

দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা/রক্তগঙ্গা বহমান/

তবু নাই ভয়, হবে হবে জয়,

জয় মুজিবুর রহমান।‘

কবি অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর 'ধান শালি চিঁড়ে' ছড়াগ্রন্থে 'বঙ্গবন্ধু' ছড়াটি লেখেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে। কবি মনের গভীর অন্তর্দৃষ্টি অশ্রুগঙ্গা, রক্তগঙ্গার মাঝেও সত্যিই জয় দেখতে পেয়েছিলেন, জয় মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের জন্ম দিয়েই জয়ের মালা পরলেন শেখ মুজিবুর রহমান।

নদীমাতৃক বহমানতায় বাংলাদেশ জন্মলগ্নে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা ছিল। কবিদৃষ্টির সীমানা ভাবনায় নদীর এ প্রবহমানচিত্র ধরা দিয়েছিল অফুরন্ত, অশেষ ও অসীমরূপে। তাই তিনি বাংলাদেশ জন্মের এ মহানায়ককে এমন আশীর্বাদের শব্দশৈলী ব্যবহার করে অনন্তকাল বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছেন। মনে মনে, প্রাণে প্রাণে, চেতনায় বাঁচিয়ে রাখার এই অমোঘ বাণী বাঙালির প্রাণসত্তায় যতদিন অনুরণিত হবে, এ ভাষাভাষীর মানুষ যতদিন শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চা করবে, ততদিন তাঁর কীর্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বোচ্চ সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকবেন লাল-সবুজের এ পুণ্যভূমিতে। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে রাজনীতি করে জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সয়ে বাংলাদেশের জন্মদাতা হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশি-বিদেশি অনেক সুনাম, সম্মান, খ্যাতি অর্জন করে নানাবিধ পুরস্কার ও উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক জুলিও কুরি উপাধি তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। স্থপতি বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জাতির পিতার চেয়ে অনেক বেশি বরেণ্য এ কারণে যে, অন্যান্য অনেক দেশের জাতির পিতা সেদেশের সৌভাগ্য আনয়নে অনন্য ভূমিকা পালন করলেও তাঁদের সৌভাগ্য হয়নি বঙ্গবন্ধুর মতো মুক্তিযুদ্ধ করে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া। বিশেষত্বের বিচারে ঠিক এ ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সৌভাগ্য আমরা এমন একজন অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার ধারক-বাহক, অসীম প্রাণশক্তিতে ভরা আত্মবিশ্বাসী বাঙালি জাতির মুক্তির মহানায়ককে পেয়েছিলাম, গরিব-দুঃখী, মেহনতী মানুষের মুক্তির কান্ডারী হিসেবে, যাঁর তুলনা তিনি নিজেই, অবিকল্প বিশ্বনেতা। বিশ্বে প্রচলিত কোনো সর্বোচ্চ পদবি ও পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করলেও তাঁকে প্রকাশে সে সম্মান উপযুক্ত বিচারে যথার্থতা কিংবা পরিপূর্ণতা পাবে না, একথা কোনো ভাবনা-চিন্তা ছাড়াই বলা যায়।

ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরতা প্রদর্শন করেছিল পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। মা-মাটি-মানুষ কোনো কিছুকে তোয়াক্কা না করে জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল। দম্ভ করে ঘোষণা করেছিল বাংলার মাটি চায়, মানুষ চায় না তারা। নিকৃষ্টতম বিকৃত লোলুপতা দেখিয়ে তারা পৃথিবীর যেকোনো নিন্দিত ইতিহাসকেও হার মানিয়েছে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের দায়িত্ব নিয়ে সেদিন স্বাধীনতার স্বপ্নে উজ্জীবিত করে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়ে বাংলার মানুষকে প্রস্তুত না করলে বাংলাদেশের জন্ম সম্ভব ছিল না। একটি বিশেষ শ্রেণিগোষ্ঠীর কিছু মানুষ ছাড়া বাংলার ছাত্রজনতা থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ডাকে সাড়া দিয়ে যার যা ছিল তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা একাত্ম হয়ে মাত্র ৯ মাসে এ মাতৃভূমিকে স্বাধীন করেছিল। সব দিক বিবেচনায় এত উঁচুমানের নেতৃত্বগুণ বঙ্গবন্ধু ব্যতীত বিশ্বের আর কোনো নেতার কর্ম বিশ্লেষণে পাওয়া যায় না। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষের দায়িত্ব নিয়ে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে মাত্র সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্রপরিচালনায় যেসব দিকনির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রকাঠামোকে দাঁড় করিয়েছিলেন তার নজির বিশ্বে খুবই বিরল। এত অল্প সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণ একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করে সে সময়ই তিনি বিশ্বনেতৃত্বকে নতুন করে তাঁর উচ্চতা সম্পর্কে ভাবতে শিখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। শুধু তাই নয়, যুদ্ধোত্তর মিত্রশক্তিকে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দিয়ে এত স্বল্পতম সময়ের মধ্যে স্বদেশে হাসিমাখা প্রত্যাবর্তনের যে ঘটনা বঙ্গবন্ধু বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিলেন তা কোনো যুদ্ধেরই সমাপ্তি উত্তর এত স্বল্পতম সময়ে আর কোনো নেতৃত্ব তার মিত্রশক্তির এমন সহজ সুন্দর প্রত্যাবর্তন দেখাতে পারেনি।

ঈর্ষাকাতর বিশ্বের ষড়যন্ত্র আর পথভ্রষ্ট কিছু কুচক্রী মহলের সমন্বিত অপচেষ্টায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও কিছু নিকট আত্মীয়স্বজনকে হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দর্শন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। সেই চেষ্টার সক্রিয় প্রভাব পরবর্তীতে বেশকিছু সরকারকে নির্লজ্জভাবে বহন ও বিকশিত করতে দেখা গেছে।

সৌভাগ্যবান বাংলার মানুষ, তাই দীর্ঘ দুঃখ-কষ্টের মাঝে নতুন করে মুক্তির দিশারি হয়ে বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা বাবার স্বপ্ন পূরণে বাংলার মাটিতে পা রেখে নানা চড়াই-উতরাই এর মধ্য দিয়ে জীবন বাজি রেখে বাংলার গরিব-দুঃখী-মেহনতী মানুষের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। শুরু থেকেই শুরু করতে হয়েছে তাকে। নানারকম অসঙ্গতির অতলে ডুবে যাওয়া বাংলাদেশকে টেনে তুলে দূরদর্শী ও বুদ্ধিমত্তার সমন্বয় ঘটিয়ে অনুন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন। তাঁর চলার পথও মসৃণ ছিল না কোনোদিন। জীবনকে বাজি রেখে বারবার মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে তিনি এ পর্যন্ত এসেছেন। গণতন্ত্রের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছেন। স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে গড়া সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে দেশের মানুষের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হন ২০০৯ সালে।

এর আগে প্রথমবার ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু-কন্যা দেশের ভেতরে এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের নানা অমীমাংসিত সমস্যা সমাধান করেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, গঙ্গা পানি চুক্তি তাদের মধ্যে অন্যতম।

২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর‌্যন্ত টানা প্রায় এক যুগে অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কত যে সমস্যার সমাধান করেছেন তার হিসাব এই স্বল্প পরিসরে দেওয়া সম্ভব নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের সফলতা দেখে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও বিশ্ব। তিনি হয়ে উঠেছেন বিশ্বনেতা। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে উঠেছেন তিনি। বাংলাদেশকে তিনি করে তুলেছেন উন্নয়নের রোল মডেল।

কি সামাজিক কিংবা মানবিক, কি কূটনৈতিক, কি অর্থনৈতিক কিংবা পরিবেশ, শান্তি, নারী উন্নয়ন- সব ক্ষেত্রে তার নেতৃত্বগুণ বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার আর অভিধায় তিনি ভূষিত হয়েছেন বারবার।

অভ্যন্তরীণ দেশীয় উন্নয়ন প্রচেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ সফল ও অতুলনীয় ঈর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের সব সূচক আজ অগ্রগামী। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বঙ্গবন্ধু সেতু, পদ্মা সেতুর সফল নির্মাণ, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, মেট্রোরেল নির্মাণ, আধুনিক নৌ-জাহাজ নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, দেশে বিদ্যমান নদ-নদীসমূহের পুনঃসংযোগ স্থাপনের মধ্য দিয়ে নদীমাতৃক বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা ও সেই সাথে ৬৮ হাজার গ্রামবাংলায় শহুরে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনযাত্রায় নতুন করে আধুনিক মাত্রা সংযোজন প্রক্রিয়া, গৃহহীন কোনো মানুষ থাকবে না মর্মে গৃহদান কর্মসূচির বাস্তবায়ন, কোটি শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে বই বিতরণ, স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত অবৈতনিক নারী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন, বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রম চালুকরণ, গরিব-দুঃখী দুস্থ ও বয়স্কদের ভাতা প্রদান, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপযুক্ত ভাতা প্রদান ইত্যাদি মানবিক কর্মসূচি গ্রহণ এবং ইতোমধ্যেই শতভাগ বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশকে উন্নয়নের যে ঈর্ষণীয় পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন, তা সময়, সীমিত সম্পদ ও সামর্থ্যের বিবেচনায় সত্যিই বিস্ময়কর এবং বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় তা অনেক বেশি সন্তুষ্টি দায়ক ও সম্মানজনক।

বাংলার ভাগ্যাকাশের সূর্য এবং শুকতারার আলোচনায় যে দুজন অধিমানবের কীর্তি অবতারণার চেষ্টা করেছি, তার একজন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যাঁর হাতে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশ। যিনি বাংলাদেশের স্থপতি। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিয়ে বেঁচে আছেন। আরেকজন তাঁরই সুযোগ্য তনয়া বাংলার ভাগ্যাকাশের উজ্জ্বল শুকতারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আধুনিক বাংলার রূপকার হিসেবে বাংলার মানুষের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন ইতোমধ্যে। দুজনই জ্বলজ্বল করছেন তাদের কীর্তিতে।

কীভাবে পুরস্কার

আমার বিবেচনায় পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যেসব পুরস্কার সর্বাধিক মর্যাদা লাভ করেছে তা প্রদান করেও এ দুজন মানুষের কীর্তিতে অর্জিত সম্মান ও মর্যাদার আসনকে কোনো বিচারেই স্পর্শ করা সম্ভব নয়। তাই আমার প্রস্তাব, এ দুজনকে ঘিরে বিশ্বে প্রচলিত কোনো পুরস্কার গ্রহণের বিষয়টি মুখ্য নয় মোটেও, বরং চির অমরত্বের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদাকে বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্কলারদের নিয়ে একটি টিম গঠনের মধ্য দিয়ে ক্লাসিক বঙ্গবন্ধুকে এবং বঙ্গবন্ধু দর্শনের নন্দনতত্ত্বকে উপস্থাপন করে বিচার-বিশ্লেষণ অন্তে শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপণ করে 'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' প্রবর্তন করা আবশ্যক। এটি আর্থিক মূল্য, সম্মান ও মর্যাদার বিচারে বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত সর্বোচ্চ সম্মানিত পুরস্কারের চেয়েও অনেক বেশি মূল্যবান হবে এবং অধিক গুরুত্ব বহন করবে।

আমি বোধ করি বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে বিশ্বসেরা পুরস্কার দেওয়ার যোগ্যতা আমাদের রয়েছে। জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকীতে এমন একটি গবেষণালব্ধ পুরস্কারের প্রবর্তন করা গেলে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীতে সেটি হতে পারে সেরা নিবেদন।

পুরস্কারের তহবিল

এই পুরস্কারের জন্য তহবিল সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে বাঙালির উদার মন-মানসিকতাই যথেষ্ট বলে মনে করি। অবশ্যই তা বিতর্কিত কিংবা মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের চিন্তা-চেতনাসম্পন্ন কোনো অনুদান প্রদানকারীর প্রণোদনা গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যায় এবং অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জনকারীর কোনো অনুদান গ্রহণযোগ্য নয়। দেশ এবং দেশের বাইরে বঙ্গবন্ধুকে যারা হৃদয়ে ধারণ করে তাদের অনুদান গ্রহণযোগ্য হতে পারে। নৈতিক আদর্শে পরিচালিত কোনো দেশি-বিদেশি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছায় প্রদত্ত অর্থ গ্রহণ করা যেতে পারে। সেন্ট মার্টিনকে আধুনিক পর্যটন সুবিধা প্রদানের মধ্য দিয়ে বৈধভাবে অর্জিত অর্থ এ তহবিলের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রের বৈধ আয় থেকেও একটি অংশ এ তহবিলের অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

কারা পাবেন পুরস্কার

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্থার স্কলারদের সমন্বয়ে এবং দুই-একজন বাংলাদেশি উপযুক্ত প্রতিনিধিকে উক্ত কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি করে বিশ্বমানের একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যারা তিন কিংবা পাঁচ বছর অন্তর অন্তর নীতিমালা অনুসরণপূর্বক সারা বিশ্বের সব কর্নার থেকে সৃষ্টিশীল সেরা মানুষকে বিবেচনায় নিয়ে, যথাযোগ্য যাচাই-বাছাই ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে, যেকোনো ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্মানজনক ও মূল্যবান 'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার'-এ চূড়ান্তভাবে ভূষিত করবেন বিশ্বসেরা পাঁচ থেকে দশজনকে।

পুরস্কারের গুরুত্ব

সূর্য, নক্ষত্রমণ্ডলী আলো বিচ্ছুরিত করায় প্রকৃতির নিয়মে একদিন তাদের আলো নিভে যাবে, কিন্তু দিন যতই যেতে থাকবে, বঙ্গবন্ধু পুরস্কারে ভূষিত আলোকিত মানুষের সংখ্যা ও তাদের কর্মের প্রভাব পৃথিবীতে ততটাই বেড়ে যাবে। আর এ প্রক্রিয়ায় আলোকিত মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে তাদের কর্মবিচ্ছুরিত আলোকজ্যোতি 'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার'-এর মর্যাদা, সম্মান ও শ্রীবৃদ্ধির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকেও ততই বেশি আলোকিত করতে থাকবেন এবং বাংলার মানুষের অন্তর থেকে শুরু করে সীমানা পেরিয়ে সারা বিশ্বমানবের অন্তরকে আলোকিত করবে এ পুরস্কার। বিশ্বের সর্বোচ্চ মর্যাদা নিয়ে বিশ্ব মানুষের অন্তরে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন চিরকাল। সেই সাথে নিজস্ব কীর্তি ও 'বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক পুরস্কার' প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা বাংলার ভাগ্যাকাশের শুকতারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাও অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন বাংলার মানুষসহ পৃথিবীর সব মানুষের অন্তরে অন্তরে।

প্রস্তাবের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের মধ্যে এমন একটি পুরস্কার প্রবর্তন করা গেলে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আধুনিক বাংলার রূপকার বিশ্বনেত্রী শেখ হাসিনা মানুষের মনে মনে, প্রাণে প্রাণে, সর্বোচ্চ সম্মান-শ্রদ্ধা ও মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকবেন পৃথিবীর অস্তিত্ব যত দিন থাকবে ততদিন।

লেখক: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :