৭ মার্চের ভাষণ অবশ্যই ইতিহাস: ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ২২:৩৬
ফাইল ছবি

একাত্তরের ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ ‘অবশ্যই ইতিহাস’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক সাংবাদিকের প্রশ্রের জবাবে এই মন্তব্য করেন তিনি।

ফখরুল বলেন, ‘আমরা শুধু ৭ মার্চ নয়, আমরা ২রা মার্চ, ৩রা মার্চ পালন করছি। অমরা ২রা মার্চ কেন করছি? সেদিন প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন আসম আবদুর রব তখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা। আমরা সেটাও পালন করছি, দ্যাট ইজ এ পার্ট অব হিস্ট্রি। তিন তারিখ কি? স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছেন শাহজাহান সিরাজ সাহেব। এটাকে অস্বীকার করবো কি করে? আজকে তার রাজনৈতিক ধারা ভিন্ন, রাজনৈতিক দল ভিন্ন হতে পারে কিন্তু দ্যাট ইজ রি্য়েলিটি, দ্যাট ইজ পার্ট অব হিস্ট্রি।’

‘ঠিক একইভাবে যে ভাষন শেখ মুজিবুর রহমানের অবশ্যই ইতিহাস। অবশ্যই তার সন্মান, তার মর্যাদা তাকে দিতে হবে। তার অর্থ এই নয় যে, ৭ মার্চ আপনি যখন পালন করবেন তখন এই কথা বলবেন ৭ই মার্চের ডাকে হয়ে গিয়েছিলো কিনা সেটা তো আলোচনার মধ্যে আসবে, ইতিহাস থেকে আসবে, ইতিহাসের সমস্ত বই থেকে আসবে।’

মির্জা ফখরুল স্পষ্ট করে বলেন, ‘কাউকেই খাটো করার কোনো রকম ইচ্ছা আমাদের নেই্ এবং আমরা বিশ্বাস করি সেটা উচিতও না। বিশেষ করে স্বাধীনতার ব্যাপারে প্রকৃত সত্য সকলকে উতঘাটিত করতে হবে। এজন্য জোর দিয়ে বলছি যে, আমরাও ওই সময়ে, ওই যুদ্ধের সময়ে আমরা যুবক, আমরা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছি, প্রতিটি মুহুর্ত, প্রতিটি সময় আমাদের সামনে জ্বল জ্বল হয়ে আছে। কে বক্তৃতাতে ৭ মার্চে কি বলেছিলেন, পরবর্তিকালে ২ রা মার্চে কি বলেছিলেন, ৩রা মার্চে কি বলেছিলেন, ৯ মার্চ মওলানা ভাসানী কি বলেছিলেন পল্টন ময়দানে-এগুলো ইতিহাস। একই সঙ্গে মাহবুবউল্লাহ কি বলেছিলেন সেটাও একটা ইতিহাস।’

‘একই সঙ্গে ২৬ মার্চ শহীদে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে ঘোষণা জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলো এবং সমগ্র জাতি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এটাও ইতিহাস। সুতরাং এগুলো কোনটাই অস্বীকার করা যাবে না।’

জাতিকে বিভক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগকে অভিযুক্ত করে তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্য আমাদের ৫০ বছর পরে জাতি হিসেবে আমরা বিভক্ত হয়ে পড়েছি। সেটার জন্য কৃতিত্ব আওয়ামী লীগেরই। জাতিকে প্রথম থেকে তারা স্বাধীনতার পক্ষে, স্বাধীনতার বিপক্ষে, চেতনার পক্ষে, চেতনার বিপক্ষে নিয়ে গেছে।”

‘‘ ওই চেতনা নিয়ে কি দেশ স্বাধীন হয়েছিলো যে আমি গণতন্ত্র লুট করে নেবো, আমি আগের রাত্রে নির্বাচন করে সরকার লুট করবো, আমি কোষাগার খালি করে দেবো। আমি একজন লেখক একজন নিরহ মানুষ তিনি লেখেন সেই অপরাধে তাকে জেলে পাঠিয়ে তাকে মৃত্যু বরণ করতে হবে।”

গুলশানে হোটেল লেকসোরে স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন মিডিয়া কমিটির আয়োজনে গণমাধ্যমের সাথে এই মতবিনিময় সভা হয়।

বক্তব্যে ডিজিটাল আইনের কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘আজকে যে ডিজিটাল আইন তৈরি করা হয়েছে আপনারা সাংবাদিকরা তার সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। আপনাদের প্রায় চারশো জন বিভিন্নভাবে ভুক্তভোগী, কত জনকে জেল খাটতে হয়েছে। আপনাদের ফটোগ্রাফার কাজল, তার আগে বিখ্যাত আন্তর্জাতিক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম এরা সবাই। সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। এদের অপরাধ শুধু লেখার জন্য। আমার প্রশ্ন এই জায়গায় যে, এর জন্য তো আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেনি, এজন্য আমরা স্বাধীনতা চাইনি।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ করবো। আমরা স্বাধীনতা সূবর্ণ জয়ন্তীর কর্মসূচি পালন করার ওই একটাই উদ্দেশ্য যে, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আমরা চেয়েছিলাম। আমরা কোনো একজন ব্যক্তি, কোনো একটা পরিবার, কোনো একটা দলের একান্ত ব্যক্তিগত পারিবারিক সম্পত্তি করার জন্য আমরা এদেশ স্বাধীন করি নাই।”

‘‘এখানে আমাদের কোনো ধরনের অস্পষ্টতা নেই। এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যে, বাংলাদেশের মালিক জনগণ-এটা মূল কথা।”

জিয়ার খেতাব বাতিল প্রসঙ্গ

জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলে জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির কিচ্ছুই যায় আসে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘‘জিয়াউর রহমানকে ইতিহাস ধারণ করেছে। কে কার খেতাব নিলো, না নিলো তাতে জিয়াউর রহমানের কিচ্ছু যায় আসে না আর এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরও কিছু যায় আসে না।বিএনপিরও কিচ্ছু যায় আসে না।”

‘‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান খেতাব কারো দয়ায় নয় বা কোনো সরকারের বা কোনো ব্যক্তির আনুকূল্যে নয়। তিনি এটা অর্জন করেছিলেন তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে একটা জাতিকে তার স্বাধীনতা যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করে তিনি ঘোষণার মধ্য দিয়ে করেছিলেন। এটা তিনি তার কাজের মধ্য দিয়ে, অনুপ্রাণিত করার মধ্য দিয়ে তা তিনি অর্জন করেছিলেন। এই খেতাব স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমান সরকারই দিয়েছিলো। এই খেতাবকে তুলে নেওয়ার যে অপচেষ্টা তার জনগন কোনোদিনই মেনে নেবে না এবং এটাতে জনগণের কোনো যায়ও আসে না।”

বিএনপিতে একাত্তরের রনাঙ্গনে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহনকারী মুক্তিযোদ্ধার বেশি বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন জিয়াউর রহমান। এর পরে যিনি চেয়ারপারসন হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া তিনিও স্বাধীনতা যুদ্ধে একজন অংশগ্রহণকারী ও নির্যাতিত একনেত্রী। তিনি কারাবরণ করেছেন একাত্তর সালে এবং আজকেও তিনি যে লড়াইটা করছেন এখনো কারাবন্দি আছে তার একটা মাত্র লক্ষ্য গণতন্ত্রকে মুক্ত করার জন্য।’

গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের মধ্যে দৈনিক যুগান্তরের উপ সম্পাদক আহমেদ দীপু, দৈনিক কালের কন্ঠের উপ-সম্পাদক এনাম আবেদীন, দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক সবুজ ইউনুস, প্রধান প্রতিবেদক লোটন ইকরামসহ বিভিন্ন মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

মিডিয়া কমিটির আহবায়ক ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব শ্যামা ওবায়েদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্‌র চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, মিডিয়া কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিন, আতিকুর রহমার রুমন, শায়রুল কবির খান, ফারজানা শারমিন পুতুল, ইয়াসির খান, মাহমুদা হাবিবা, শফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির, মীর সোলায়মান, নুরুল ইসলাম সাজু, বাবুল তালুকদার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে কারাগারে বন্দি লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে একমিনিট নিরবতা পালন করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

ঢাকাটাইমস /২৭ফেব্রুয়ারি/বিইউ

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক 

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে লেবার পার্টির বৈঠক

সরকার সহিংসতা করে দায় আমাদের ওপর চাপিয়েছে: নজরুল ইসলাম

আ স ম রবের বাসভবনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল

মুক্তি পেলেন বিএনপি নেতা হাবিব উন নবী খান সোহেল 

সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি

তিস্তা প্রকল্পের সম্প্রসারণের নামে গাছ কাটা নির্মমতা: ন্যাপ 

শহীদ মিনারে আকবর খান রনোকে গার্ড অব অনার, সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন

বিভাজন থেকে বেরিয়ে সবাইকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করা উচিত: মির্জা ফখরুল 

এদেশে এসে যারা দাপট দেখাবে তাদের ক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যেই সংকুচিত: ওবায়দুল কাদের 

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :