করোনার ভারতীয় ধরন আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে!

আলম রায়হান
| আপডেট : ১১ মে ২০২১, ১৬:২৮ | প্রকাশিত : ১১ মে ২০২১, ১৫:৫৯

এক সময় যক্ষাকে বলা হতো রাজকাশি। কাশি এবং রাজকাশির মধ্যে পার্থক অনেক। সেই সময়তো বটেই, এখনো। সেই বিষয়টি প্রায় মিলে যাচ্ছে করোনা এবং করোনার ভরতীয় ধরনের বিষয়ে। করোনার তান্ডবে পৃথীবি বিপন্ন হবার পর গতবছর আমাদের টনক নড়ে আমাদের। তবে বিলম্ব ব্যবস্থায়ও মোটামুটি সফল হওয়াগেছে করোনার প্রথম ওয়েভের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে।

এক বছর পর। এবার পরিস্থিতি যেমন কেমন হয়ে গেল! বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর মিছিল, মৃত্যুপুরী প্রতিবেশী ও বন্ধু ভারতের অবস্থা। কিন্তু কোনো কিছুই আমাদের জনবোধকে জাগ্রত করতে পারল না। এমনকি করোনার ভারতীয় ধরণের আগ্রাসনে ভারত যখন শ্মশান ভূমি, তখনও আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। ঘরে চোর ঢোকার পরও মালিকের পর্যবেক্ষণ করার গল্পের মতো। চোর যখন পালিয়ে গেল তখন গৃহকর্তা গেলে থানায়, পুলিশের কাছে।

বহু বিলম্বে ভারতের সাথে আমাদের সীমান্ত সাময়িক বন্ধ করা হলো। এর মেয়াদ এক দফা বাড়ানোও হয়েছে। কিন্তু ততদিনে বেশ বিলম্ব হয়ে গেছে। লালনের গান আছে না, সময় গেলে সাধন হবে না। সম্ভবত করোনার ভারতীয় ধরণে নিয়ে এবার আমরা এই গালের বাস্তবতায় আছি। শুধু তাই নয়, ভারত থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশে আসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভাবখানা এই, বিশেষ ব্যবস্থায় যারা অসবেন তাদের সাথে করোনার ভারতীয় ধরণ আসবে না!

বাস্তবে কিন্তু তা হয়নি। তা হওয়ার কথাও নয়। যা হওয়ার তাই হয়েছে। ভারতীয় ধরণের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত হয়েছে বাংলাদেশে, খোদ রাজধানী ঢাকায়ও। আবার ঈদকে সামনে রেখে একদল মানুষ উম্মাদের মতো ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলায় যাছে। এক্ষেত্রে দক্ষিণাঞ্চল মুখি জনস্রোতের দৃশ্যপট ভয়াবহ! সহজেই বোধগম্য, ভারতীয় ধরণের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে যারা চিহ্নিত হয়েছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি মানুষ বাংলাদেশে রয়েছে। এবং এই ভাইরাস আরো ছড়াচ্ছে। ফলে সর্বনাশ কিন্তু হয়েই গেছে! অথচ এই সর্বনাশ এড়ানো যেত।

প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত এতো বিলম্বে নেয়া হলো কেন? আর বিশেষ ব্যবস্থায় আসার আনুমতি দেয়া হলো কোন বিবেচনায়? নাগরিকদের প্রতি আমাদের এতো প্রেম! নাগরিক প্রেম নিয়ে আমাদের এতো আহাজার। যেন রবীন্ত্রনাথের সেই গান, ‘যদি প্রেম দিলে না প্রাণে। ’ অস্ট্রেলিয়ার কী তাদের দেশের নাগরিকদের জন্য কোনো প্রেম নেই? ভালোবাসে না? নিশ্চয়ই ভালোবাসে। অস্ট্রেলিয়ায় তো ভারত থেকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। শুধু তাই নয়, ভারত থেকে অস্টেলিয়ায় ফিরলে, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকরাও যদি ভারত থেকে দেশে ফেরে, তাহলে জেল-জরিমানা অনিবার্য। তাও কিন্তু, দু-এক মাসের নয়। জেল হতে পারে, পাঁচ বছর পর্যন্ত। সঙ্গে গুণতে হবে ৩৭ হাজার পাউন্ড জরিমানা। কিন্তু আমরা বিলম্বে সীমান্ত বন্ধ করে বিশেষ অনুমতি সাপেক্ষে ভারত থেকে আসার বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছি। আর কে না জানে, বিশেষ ব্যস্থায় বস্থায় সুই প্রবশ পথ দিয়ে কামানও চালান দেয়া যায়। এটি সব দেশের জন্যই বাস্তবতা।

এই বাস্তবতায়ই বছরের পর বছর ফেন্সিডিল এসেছে, আসছে। মিয়ারমার থেকে আসছে ইয়াবা। ভারথেকে অনেক কিছুই আছে, উপকারী ও ক্ষতিকর। গোপনে বা অনেকটা প্রকাশ্যে। এবার সীমান্ত পথে মানুষের সাথে ভারত থেকে গোপনে যাযা এসেছে তার মধ্যে মহা ভয়ংকর হচ্ছে, করোনা ভাইরোসের ভারতীয় ধরণ। করোনা নিয়ে আগে থেকেই এক প্রকার লেজেগোবরে অবস্থায় থাকা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যাবে করোনা ভাইরাসের ভারতীয় ধরণ?

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :