কাশি হয়েছে তো কী হয়েছে আমি তো গন্ধ পাচ্ছি!

আমিনুল ইসলাম
| আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২১, ২০:৩৬ | প্রকাশিত : ০৭ জুলাই ২০২১, ২০:২৩

রোগী এসে বলে- সিগারেট ছেড়ে দেয়ার পরদিন থেকেই আমার withdrawal syndrome। এই বলে আসক্তি ছেড়ে দেয়া জনিত যত লক্ষণ সব হড়হড় করে বলতে লাগলো। আমিতো খুশি রোগী নিজেই ডাক্তারের কাজটা কত সহজ করে দিলো। আগে ডায়াগনোসিসটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে তারপর রোগের লক্ষণাদি বর্ণনা- এর চেয়ে আরামের ডাক্তারি আর কি হয়? আমি তার ব্যাখ্যায় কনভিন্সড, একেবারেই বুক পিকচার। তারপরও বলি করোনা টেস্ট করতে হবে। কারণ দুর্বলতা, অস্থিরতা, পাতলা পায়খানা গা মেজমেজ। করোনা কোনটা না করতে পারে? রোগীর বুকের এক্সরে অক্সিজেনের মাত্রা সব নরমাল। তবুও বলি কোভিড টেস্ট করেন। অবাক করে দিয়ে টেস্ট পজিটিভ আসে। তারও পরে অক্সিজেনও কমতে থাকে।

বেশ আগে একবার লিখেছিলাম সাধারণত রোগীরা কোভিড থেকে পলায়নী মনোবৃত্তির কারণে একেকটা ইস্যু দিয়ে তার প্রবলেমটুকু ব্যাখ্যা করে।ডাক্তার যাতে কোভিডের দিকে না যায়। এই পলায়নে কি লাভ জানিনা তবে বেশির ভাগই তার যে কোভিড হয় নাই তার পক্ষে উকিলের মতো ডাক্তারকে জেরা করতে থাকে।

যেমন, ফ্রিজের ঠান্ডা পানি খাওয়ার পর কাশিটা বেড়ে গেছে, বৃষ্টিতে ভেজাটা ঠিক হয়নি জ্বর হয়ে গেল, লঞ্চে বরিশাল যাওয়ার পথে ছাদে কি যে বাতাস ঠান্ডাটা লেগেই গেল, দুপুরের ঘাম শরীরে শুকানোর পর শুরু হলো কাশি। বাবার যদি করোনা হয় আমার কেন হলো না, আমরা তো এক ঘরেই থাকি। নাকে গন্ধ পাচ্ছি, খাওয়ার রুচি আছে করোনা হয় কিভাবে? গন্ধ পাচ্ছি না তো কি হয়েছে আমার তো কাশি নাই। কাশি হয়েছে তো কি হয়েছে আমি তো গন্ধ পাচ্ছি ইত্যাদি।

এ রোগীর ডাইভার্ট করার ব্যাখ্যাটা ছিল একটু ব্যতিক্রমী। সিগারেট ছাড়ার পর শুরু হয়েছে অস্থিরতা, গা ব্যাথা। আসলে রোগী নিজেও সন্দেহ করছে তার কোভিড হতে পারে তাই কপির স্ট্রাটেজির পার্ট হিসাবে সে সর্বান্তকরনে একে অস্বীকার করার চেষ্টা করছে, চেতনে না হলেও ন্যূনপক্ষে অবচেতনে। ক্যানসারসহ যেকোন ভয়াবহ রোগশোকে এটা হতে পারে যাকে বলে ডেনিয়াল।

If some situation is just too much to handle, the person just refuse to experience it. এই denial এর পরেই মেনে নেয়া, ভয়, আশা, পীড়ন, দুশ্চিন্তা, বিষন্নতা একের পর এক তাকে চেপে ধরে। এবেলাতেও অল্পের জন্য বিভ্রান্ত হইনি, বেঁচে গেছি। একেবারেই প্যারানয়েড পর্যায়ের সন্দেহবাতিকগ্রস্থ না হলে কোভিড ডায়াগনোসিস মিস হবেই হবে।

চিকিৎসক, এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (চেষ্ট), রেসপাইরেটরি, মেডিসিন ডিপার্টমেন্ট, বিএসএমএমইউ

ঢাকাটাইমস/৭জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :