হাসপাতালের পলিথিনে মোড়া যন্ত্রপাতি, সেবা বঞ্চিত খুলনার ৯ উপজেলাবাসী

শেখ ফেরদৌস রহমান, খুলনা
 | প্রকাশিত : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:৪৫

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা। তবে খুলনার ৯ উপজেলার চিত্র ঠিক উল্টোমুখী। দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া, ফুলতলা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে আল্ট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে মেশিনসহ নানা চিকিৎসা যন্ত্রপাতি পড়ে আছে তালাবদ্ধ ঘরে। আর এইসব হাসপতালাতে আসা রোগীদের যেতে হচ্ছে খুলনা সদরে। এরফলে খবর যেমন বাড়ছে তেমনি সঠিক সময়ে রোগ নির্নয় না হওয়া রোগীর অবস্থাও হচ্ছে শোচনীয়।

সরোজমিনে দেখা যায়, দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে কক্ষটি পরিনত অনেকটা আস্তাকুড়ে। কক্ষের এক কোণে মেশিনটি পড়ে আছে পলিথিন মোড়ানো অবস্থায়। হাসপাতালটিতে পায়ে চোট নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মিনারুল (১২) এর মা বলেন, ‘আমার ছেলে খেলতে গিয়ে পায়ে আঘাত পেয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন, একটি এক্স-রে করতে। যে কারণে এখন নদী পার হয়ে খুলনায় শহরে যেতে হবে। এখন অসুস্থ্য ছেলেটিকে নিয়ে যাওয়া আসা বাড়তি খরচসহ মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘উপজেলা পর্যায়ে এ সব সেবা চলমান আধুনিক সেবার ব্যবস্থা থাকলে আমাদের মত গরীব মানুষদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। ’

খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রোগী কল্যাণী (৩১) বলেন, আমি গর্ভবতী, নিয়মিত শারীরিক চেকআপ প্রয়োজন। চিকিৎসক বলেছেন, আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা করে আনতে। এখন এ জন্য যেতে হবে ৩০ কিলোমিটার দূরে, খুলনা শহরে। এই শরীরে সেখানে যাওয়া অনেক ঝুঁকির। আমার মত এরকম আরো অনেক নারী যাদের কষ্টের শেষ নেই। আমাদের এই উপজেলা পর্যায়ে এ সব উন্নত মানের মোশিন থাকলেও আমরা এসব সেবা পাচ্ছি না।

বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর টিএইচও মিজানুর রহমান বলেন, এখানে জনবল সঙ্কট ও সার্জন না থাকায় অপারেশন করা হচ্ছে না।

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্ক্সে এ অপাশেন,এক্সরে, চালু করা হয়নি।

রুপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৩ সাল থেকে এখানে আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাধি হাসপাতালে থাকলে এ প্রর্যন্ত তা অব্যাবহারিত রয়েছে।

ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা যুবায়ের গাজী বলেন, কর্তৃপক্ষর ইচ্ছা থাকলে এ সব সেবা দিতে পারে উপজেলা পর্যায়ে গরীব মানুষের জন্য। কিছুদিন আগেও চিকিৎসক মোঃ কামাল হোসেন ফুলতলা উপজেলা হাসপাতালে দ্বায়িত্ব থাকাকালিন এখানে অপারেশন হতো, আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা হতো, এক্স-রে হতো। তবে সেই চিকিৎসক হঠাৎ বদলি হওয়ার পর এসব চলমান পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।

খুলনা দিঘলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর টিএইচও ডাঃ মাহাবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতালটিতে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রামসহ অপারেশন করার সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। তারপরও আমরা এই সেবা রোগীদের দিতে পারছি না। বন্ধ রয়েছে। মূলত আমাদের হাসপাতালে দক্ষ টেকনেশিয়ান নেই। বেশ কয়েকবার দক্ষ জনবল সঙ্কট থাকার বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি দিয়ে অবগত করেছি। তবে এখন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

খুলনা সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মাদ বলেন, উপজেলাগুলোতে এসব সেবা চালু করতে প্রয়োজন জনবল, সরকারীভাবে এই পদগুলো শূন্য রয়েছে। যে কারণে আমরা রোগীদের এই আধুনিক সেবা দিতে পারছি না। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে, দ্রুতই এই সেবাগুলো চালু করা হবে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ জসিম উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমি অবগত। তবে দক্ষ টেকনেশিয়ান, জনবল না থাকায় এই মেশিনগুলো চালু করা যাচ্ছে না।

(ঢাকাটাইমস/২৩ সেপ্টেম্বর/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :